মশাবাহিত রোগের প্রকোপ কতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে রাজ্যে। ফাইল চিত্র।
শেষ দু’বছর নয়। রাজ্যে ডেঙ্গি কতটা বাড়ছে বা কমছে, তার তুলনামূলক বিচার করতে হবে ২০১৯ সালের পরিসংখ্যানের সঙ্গে। শুক্রবার সমস্ত জেলাশাসক ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে ডেঙ্গি সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠকে এমনটাই জানালেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। বৈঠকে ছিলেন স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য দফতরের সচিব-সহ অন্যান্য দফতরের কর্তারা।
স্বাস্থ্য শিবিরের মতে, ২০২০ এবং ২০২১, এই দু’টি বছরে করোনার কারণে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সে ভাবে সামনে আসেনি। তাই চলতি বছরে মশাবাহিত ওই রোগের প্রকোপ কতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা বুঝতে দেখতে হবে তিন বছর আগের পরিসংখ্যান। শেষ পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালে রাজ্যে ডেঙ্গির প্রকোপ মারাত্মক হয়েছিল। সূত্রের খবর, ডেঙ্গি প্রতিরোধের উদ্যোগকে প্রশাসনিক কর্মসূচি হিসাবে নয়, অভিযান হিসাবে দেখতে সরকারি আধিকারিক থেকে পুরসভার জনপ্রতিনিধি, সকলকে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যসচিব। পুজোয় জরুরি ও রোগী পরিষেবায় যুক্তদের ছুটিতেও রাশ টানতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর। খুব জরুরি কারণ ছাড়া ছুটি মঞ্জুর না করতে বলেছেন।
অন্য দিকে, প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ কিনলে রোগীর নাম-ঠিকানা লিখে রেখে দোকানদার তা প্রশাসনকে জানাবেন। এই বিষয়টিতেও জোর দিতে নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব। স্বাস্থ্য দফতরের জারি করা ডেঙ্গি-প্রোটোকল মানতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসক ও নার্সদের ফের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ওষুধের দোকানদারদেরও বোঝাতে হবে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ যেন না দেওয়া হয়। রোগীদের তথ্য ঠিক মতো নথিভুক্ত করতে হবে। পুজোর কয়েকটি দিন হাসপাতালগুলিতে ডেঙ্গি রোগীদের চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ওষুধ, চিকিৎসক, নার্সের বন্দোবস্ত রাখতে বলা হয়েছে। হাওড়ার মতো প্রতিটি জেলা সদরে ও ব্লক স্তরে ডেঙ্গি কন্ট্রোল রুম চালুরও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। তিনি আরও বলেছেন, পুর স্বাস্থ্যকর্মীদের দল বাড়িগুলিতে পরিদর্শনের যে কাজ করছে, তাতে প্রয়োজনে সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও যুক্ত করতে হবে।
পুরসভাগুলিকেও স্থানীয় স্তরে আরও সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। তিনি জানিয়েছেন, প্রাক্ পুজো ও পুজোর শেষে প্রতিটি পুর ও পঞ্চায়েত এলাকায় জঞ্জাল সাফাইয়ে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে। কাজে তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনও নির্দিষ্ট দল গড়বে। প্রতিটি পুরসভার ওয়ার্ডে যে কমিটি রয়েছে, সেগুলি সচল করে জনপ্রতিনিধিদেরও মাঠে নেমে কাজ করার নির্দেশে দিয়েছেন মুখ্যসচিব। বলা হয়েছে, যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গি পরীক্ষা হয় না, সেখানে রোগী গেলে তাঁকে ফেরানো যাবে না। রক্ত নিয়ে ওই কেন্দ্রকেই নিজের দায়িত্বে পরীক্ষার জায়গায় পাঠাতে হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, কলকাতা ও দার্জিলিঙের পাশাপাশি আরও ১০টি জেলায় উল্লেখযোগ্য ভাবে শেষ এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। দুই থেকে আট গুণের বেশি বৃদ্ধি পাওয়া নতুন জেলাগুলি (স্বাস্থ্য জেলা-সহ) হল— বাঁকুড়া, ডায়মন্ড হারবার, বসিরহাট, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, বীরভূম, পুরুলিয়া ও রামপুরহাট।