R G Medical College And Hospital

আরজি করের সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ, উত্তেজনা, ‘বহিরাগত’ ভিড় হটিয়ে গেটের দখল নিল পুলিশ

আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়াতে শনিবার বিকেলে আরজি করের সামনে পৌঁছে যান বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠনের সদস্যরা। পুলিশ তাঁদের ভিতরে ঢুকতে বাধা দিতেই শুরু হয় ধস্তাধস্তি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ১৭:২৭
Share:

আরজি কর হাসপাতালের সামনে পুলিশি কড়াকড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে সকাল থেকেই তপ্ত আরজি কর হাসপাতাল চত্বর। ঘড়ির কাঁটা যত এগিয়েছে, তত বেড়েছে অবস্থান, বিক্ষোভ, প্রতিবাদের তেজ। বিকেলে তা আরও চরমে পৌঁছয়। ‘বহিরাগত’ একদল আন্দোলনকারী আরজি করে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশ তাঁদের বাধা দিতেই শুরু হয় ধ্বস্তাধস্তি। চলে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা। দীর্ঘ ক্ষণ ‘বহিরাগত’ আন্দোলনকারীদের আরজি করের ভিতরে প্রবেশ আটকাতে সমর্থ হন পুলিশকর্মীরা। পরে ফের একদফা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা শুরু হয়। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য, বেশ কয়েক জন ‘বহিরাগত’ আন্দোলনকারীকে আটক করে আরজি করের ভিতরে নিয়ে গিয়েছেন পুলিশকর্মীরা।

Advertisement

অবস্থানরত জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়াতে শনিবার বিকেলে আর জি কর হাসপাতালের কাছে পৌঁছে যান একাধিক বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের সদস্যরা। স্টুডেন্টস হেল্‌থ হোমের চিকিৎসকেরাও ওই একই সময়ে পৌঁছে যান আরজি করের সামনে। তাঁদের মধ্যে আরজি করের প্রাক্তনীরাও রয়েছেন। তাঁরা ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করতেই শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্ত ‘খণ্ডযুদ্ধ’।

পুলিশ যখন ব্যারিকেড করে ‘বহিরাগত’দের আটকানোর চেষ্টা করে, তখন আরজি করের ভিতর থেকেও অবস্থানরত চিকিৎসক-পড়ুয়াদের একাংশ এগিয়ে আসে। ‘বহিরাগত’দের প্রবেশে আপত্তি জানান তাঁরা। আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকদের বক্তব্য, তাঁরা এই আন্দোলনে কোনও রাজনীতির রং লাগতে দেবেন না। যদি কেউ আন্দোলনে শামিল হতে চান, সে ক্ষেত্রে রাজনীতির রং নিয়ে নয়, সাধারণ নাগরিক হিসাবে যেন প্রত্যেকে শামিল হন আন্দোলনে। বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের বিরুদ্ধে স্লোগানও ভেসে আসে আরজি করের ভিতর থেকে।

Advertisement

অপর পক্ষে আরজি করের বাইরে বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে রাজ্যের শাসক শিবির। পুলিশ ‘বহিরাগত’ বিক্ষোভকারীদের এখনও পর্যন্ত আরজি করের বাইরে থামিয়ে রাখতে সমর্থ হলেও জমি ছাড়তে নারাজ বিক্ষোভকারীরাও। তাঁদেরও বক্তব্য, হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করতে না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা সেখান থেকে পিছু হটবেন না।

আরজি করে ‘বহিরাগত’দের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। —নিজস্ব চিত্র।

এমতাবস্থায় দ্বিতীয় দফায় ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। ‘বহিরাগত’ আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সেই সময় বেশ কয়েক জনকে আটক করে আরজি করের ভিতরে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।

আরজি করের বাইরের এই পরিস্থিতির মাঝেই সেখানে পৌঁছে যান সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে বিচারের দাবিতে আরজি করের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। সেলিমের অভিযোগ, বিষয়টিকে প্রথমে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আরজি করের অধ্যক্ষকে কাঠগড়ায় তুলে তাঁর অপসারণের দাবি তোলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। হাসপাতালের আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টার জন্য নাম না করে কিছু শাসকদলের ‘দালাল’কে নিশানা করেন সেলিম।

তিনি বলেন, “যখন গোটা দেশ ধিক্কার জানাচ্ছে, তখন স্বাস্থ্য দফতর ইলিশ উৎসব করছে। যখন ছাত্র-যুবেরা বিক্ষোভ দেখাতে এসেছে, তখন তৃণমূলী দালাল মস্তানি করতে এসেছে। পুলিশ উল্টে ছাত্রদেরই ধরেছে। এটা আমার-আপনার মেয়ের সঙ্গেও হতে পারত। যে দালালরাজ ও অপরাধ জগৎ তৈরি হয়েছে, সেখানে কেউ নিরাপদ নয়।”

আরজি করের বাইরে বিক্ষোভ বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের। —নিজস্ব চিত্র।

উল্লেখ্য, আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের মামলায় এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার অভিযুক্তকে আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁর ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্রের খবর, যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি সিভিক ভলান্টিয়ার। যদিও শনিবার বিকেলের সাংবাদিক বৈঠকে এ বিষয়ে একাধিক বার প্রশ্ন করা হলেও উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল।

বাম ছাত্র-যুবদের আটক করার প্রতিবাদে বক্তৃতার সময় আরজি করের ঘটনায় পুলিশকেও নিশানা করেন সেলিম। তিনি বলেন, “এই অপরাধে তৃণমূল যুক্ত, পুলিশ যুক্ত। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবে না।”

আরজি করের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, অভিযুক্তের ফাঁসির সাজা চাওয়া হবে। মৃতার পরিবার চাইলে সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করালেও তাঁর কোনও আপত্তি নেই বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের কথায় আরজি করের ঘটনা এক ‘ঘৃণ্য অপরাধ’। ধৃত অভিযুক্তকে ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ের অপরাধী’ বলেও মন্তব্য করেছেন পুলিশ কমিশনার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement