R G Medical College And Hospital

আরজি করের ঘটনায় ধৃত ব্যক্তি সিভিক ভলান্টিয়ার? প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেলেন ‘বিরক্ত’ পুলিশ কমিশনার

আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁর পেশা কী? একাধিক বার প্রশ্ন করেও কোনও উত্তর মিলল না কমিশনারের কাছ থেকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ১৪:৪৭
Share:

কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। —ফাইল চিত্র।

আরজি কর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে ধৃত ব্যক্তি কি সিভিক ভলান্টিয়ার? তাঁর সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ারের সংগঠনেরও যোগাযোগ রয়েছে। এই তথ্য কি ঠিক?

Advertisement

শনিবার দুপুরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এই প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘‘আমাদের কাছে তার পরিচয় এক জন সর্বোচ্চ পর্যায়ের অপরাধী।’’ তার পরেও সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন করেছিল, ধৃতের পরিচয় তা হলে কী? তাঁর পেশা কী? পুলিশ কমিশনার প্রতি বারই সেই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। শেষ দিকে তাঁকে দৃশ্যতই ‘বিরক্ত’ এবং খানিকটা ‘উত্তেজিত’ও শুনিয়েছে। কিন্তু লক্ষণীয় হল, তিনি কোনও বারই ‘না’ বলেননি। যা নিয়ে পুলিশেরই একাংশে প্রশ্ন উঠেছে। অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারেরা বলছেন, ধৃত ব্যক্তি যদি সিভিক ভলান্টিয়ার না হন, তা হলে সেটা স্পষ্ট করে বলে দিতে পারতেন পুলিশ কমিশনার। কিন্তু তা না-বলে জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি বিষয়টিকে পরোক্ষে ‘বৈধতা’ দিয়ে দিলেন না তো?

প্রসঙ্গত, পুলিশ কমিশনার বলেছেন, তাঁরা পরিপূর্ণ ‘স্বচ্ছত‌া’ রেখে গোটা ঘটনার তদন্ত করছেন। কিন্তু তাঁর বাহিনীরই একাংশ মনে করছেন, ধৃতের পেশাগত পরিচয় এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে ‘অস্বচ্ছতা’ তৈরি হয়েছে। কারণ, তিনি বার বার একই কথা বলে গিয়েছেন, “আমাদের কাছে ওই ব্যক্তি সর্বোচ্চ পর্যায়ের অপরাধী। তিনি যা-ই হোন না কেন, আমাদের কাছে তাঁর পরিচয়— তিনি এক জন অপরাধী।” যদি অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার না হন, তা হলে তাঁর পেশা কী? সেই প্রশ্নেরও সদুত্তর মেলেনি। ভ্রুকুঞ্চিত জবাব এল, “সেটা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। আপাতত ওই ব্যক্তির পরিচয়, শুধুই অপরাধী।” বস্তুত, পুলিশ কমিশনারের বিরক্তি দেখে ঘটনাপ্রবাহের ‘রাশ’ হাতে নেন তাঁর পাশে বসা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা এমন কোনও প্রশ্ন করবেন না, যাতে তদন্ত ব্যাহত হয়।’’

Advertisement

তবে সূত্রের খবর, ধৃত ব্যক্তি সিভিক ভলান্টিয়ারই বটে। সে কারণে সরকারি হাসপাতালে গভীর রাতে ঢুকতে বা বেরোতে তাঁর কোনো অসুবিধা হয়নি। সেখানেই পুলিশ কমিশনারের ‘বিড়ম্বনা’। সেই কারণেই ওই বিষয়টি তিনি ‘এড়িয়ে’ গিয়েছেন বলে অভিযোগ। তবে কমিশনার শহরবাসীকে ‘আশ্বস্ত’ করেছেন যে, দোষীর যাতে ফাঁসির সাজা হয়, তা নিশ্চিত করবেন পুলিশকর্মীরা। তাঁর মতে, আরজি করের ঘটনা এক ‘জঘন্য অপরাধ’! তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের লুকোনোর কিছু নেই। তদন্ত হবে স্বচ্ছ ভাবে। যদি মৃতার পরিবার অন্য কোনও এজেন্সিকে দিয়ে তদন্ত করাতে চায়, তা হলেও আমাদের আপত্তি নেই। ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছে। সেখানে মৃতার পরিবারের সদস্যেরা এবং পড়ুয়ারাও ছিলেন। শুক্রবার সারা রাত ধরে তদন্ত এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলেছে। সমস্ত তথ্যপ্রমাণ রাতেই সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে সঙ্গে সঙ্গে ফরেন্সিককে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তারাও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে।’’ ধৃতকে ‘অপরাধমনস্ক’ বলেও বর্ণনা করেছেন পুলিশ কমিশনার।

প্রসঙ্গত, শনিবার সকালেই মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অভিযুক্তের ফাঁসির সাজা চাওয়া হবে। ফার্স্ট ট্র্যাক আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া চলবে। যাতে দ্রুত বিচার পাওয়া যায়। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমাদের উপর আস্থা না থাকলে মেয়েটির পরিবার অন্য কোনও এজেন্সিকে দিয়েও তদন্ত করাতে পারে। প্রয়োজনে সিবিআইকে দিয়েও। তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’

একই কথা বলেছেন পুলিশ কমিশনারও। তিনিও বলেছেন, পুলিশের উপর ‘আস্থা’ না থাকলে মৃতার পরিবার অন্য কোনও এজেন্সিকে দিয়ে তদন্ত করাতে পারে। পাশাপাশিই তিনি বলেছেন, ‘‘গোটা ঘটনাটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক! আমরা (পুলিশবাহিনী) ওই ঘটনায় দুঃখিত, ক্ষুব্ধ এবং ক্রুদ্ধ!’’ যা নিয়ে শহরবাসীর একাংশ বলছেন, ‘‘ওই ঘটনায় পুলিশ কমিশনার এবং তাঁর বাহিনীর বরং লজ্জিত হওয়া উচিত ছিল! কারণ, তিনিই এই শহরের রক্ষক। কলকাতার একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে রাতে এক জন ঢুকে গিয়ে এই কাণ্ড ঘটানোর ‘দায়’ তো তাঁরই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement