নতুন: সংগ্রহশালায় ফাইবারের মূর্তি দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে চৈতন্যের নগরকীর্তন। রবিবার, বাগবাজারে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
সন্ন্যাস গ্রহণের পরে চৈতন্যদেব পুরীতে জগন্নাথের দর্শনে বেরিয়েছিলেন। গঙ্গার ধার ধরে যাত্রাপথে তিনি থেমেছিলেন আজকের বাগবাজার ঘাটে। চৈতন্যের পদধূলি ধন্য সেই বাগবাজারেই ১৯৩০ সালে বটিকালীর ব্যবসায়ী জগবন্ধু দত্ত ৪০ কাঠা জমি কিনে তৈরি করেন গৌড়ীয় মঠ ও মিশনের স্থায়ী ঠিকানা। তারও প্রায় ১৪ বছর আগে উল্টোডাঙার ভাড়া বাড়িতে যে গৌড়ীয় মঠ ও মিশনের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী।
চৈতন্যের সেই ভাবধারা এবং দর্শনকে আরও প্রসারিত করার জন্য ২০০৮ সাল থেকে চৈতন্য সংগ্রহশালা তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়। ২০১৩ সালে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় সংগ্রহশালার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বাগবাজারের ১৬এ কালীপ্রসাদ চক্রবর্তী স্ট্রিট স্থিত মঠ সংলগ্ন চারতলা সেই ভবনের ১৬,০০০ বর্গফুট জুড়ে রয়েছে এই সংগ্রহশালা। আগামী কাল মঙ্গলবার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যার উদ্বোধন করবেন।
সেখানে সংগৃহীত জিনিসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথি। শ্রীমদ্ভাগবতে একটি ছোট টীকা লিখেছিলেন চৈতন্য, তালপত্রে মহাপ্রভুর সেই হস্তলেখের হুবহু অবিকল থাকছে সংগ্রহশালায়, আসলটি সযত্নে তোলা থাকবে। থাকছে চৈতন্য ভাগবতের রচয়িতা বৃন্দাবন দাস ঠাকুরের পুঁথি। বর্ধমান জেলার দেনুর গ্রামে প্রভু নিত্যানন্দের বংশধরের কাছ থেকে পাওয়া এই হস্তলেখের শাস্ত্রীয় প্রমাণ আছে বলে জানাচ্ছেন গৌরীয় মঠ ও মিশনের বর্তমান সভাপতি, ভক্তিসুন্দর সন্ন্যাসী মহারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘হরিদাস দাসের লেখা গৌরীয় বৈষ্ণব সাহিত্য এবং গৌরীয় বৈষ্ণব জীবনী বলে দু’টি বইয়ে মহাপ্রভুর কী কী জিনিস কোথায় রয়েছে, তা লিখিত আকারে রয়েছে। চৈতন্যের ছয় পার্ষদের সময়ে যে সব পুঁথি লেখা হয়েছে, তার মধ্যে তালপত্রে লেখা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুঁথি থাকছে।’’
ধ্যানকক্ষে ঢুকতেই রয়েছে জয়পুর থেকে আনানো এক পাথরে তৈরি ছ’ফুটেরও বেশি উচ্চতার চৈতন্যের মূর্তি। ফাইবারের মূর্তি দিয়ে দেখানো হয়েছে নিমগাছের নীচে চৈতন্যের জন্ম বৃত্তান্ত। দ্বিতীয় তলে থাকছে চৈতন্যের জীব উদ্ধারের লীলাকাহিনি। শ্রীহট্টের ঢাকা দক্ষিণে চৈতন্যের বাবা জগন্নাথ মিশ্রের বাড়ির ইট এবং চট্টগ্রাম থেকে মহাপ্রভুর প্রিয় গায়ক মুকুন্দ দত্তের বাড়ির পাথরও থাকছে সংগ্রহশালায় বলে মঠ ও মিশন সূত্রের খবর।
চৈতন্যের পরবর্তী কালে ধীরে ধীরে ভক্তিধর্ম বিকৃত হয়ে যায়। সেই অবস্থার পরিবর্তন করানোয় বড় ভূমিকা নেন ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, যাঁর প্রকৃত নাম কেদারনাথ দত্ত। তাঁরই ছেলে গৌড়ীয় মঠ ও মিশনের প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ। তৃতীয় এবং চতুর্থতলায় থাকবে তাঁদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস।
মঠ ও মিশন সূত্রের খবর, উদ্বোধনের পরে সোমবার বাদে সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা এবং বিকেল তিনটে থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত সাধারণের জন্য খোলা থাকবে এই সংগ্রহশালা।