‘অপরাজিতা’ বিল প্রসঙ্গে নিজোর মত জানালেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য বিধানসভায় সঠিক সময়েই ‘অপরাজিতা’ বিল নিয়ে আসা হয়েছে। মত বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিল গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পিকার বলেন, “সবাই ফাঁসি চাইছে। সঠিক সময়েই এই বিল এসেছে বিধানসভায়। কেন্দ্রের উচিত এটি গ্রহণ করা। আগে যদি কেন্দ্র এই বিল পেশ করত, তা হলে রাজ্যকে এটা করতে হত না।” রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও এই বিলে সম্মতি দেবেন বলে আশাবাদী স্পিকার।
মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয়েছে ‘অপরাজিতা মহিলা ও শিশু (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন সংশোধনী) বিল, ২০২৪’। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী এই বিলকে ইতিমধ্যেই স্বাগত জানিয়েছে শরদ পওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি। শরদের মতে, মহারাষ্ট্রেও এই ধরনের বিল আনা প্রয়োজন। এই বিষয়টি মহারাষ্ট্রের আসন্ন বিধানসভা ভোটেই তাদের ইস্তাহারে উল্লেখ থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। শরদের এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে তৃণমূলও বলছে, “বাংলা আজ যা ভাবে, দেশ ভাবে আগামিকাল।” শুধু শরদই নয়, কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিমন্ত্রী রামদাস আটওয়ালেও এই বিলকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই অবস্থায় বিধানসভার স্পিকারের এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
বিধানসভায় ‘অপরাজিতা’ বিল পাশ হওয়ার পর প্রথাগত ভাবে তা পাঠানো হয়েছে রাজভবনে। রাজ্যপালের সম্মতির জন্য।পাশাপাশি বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, বিলটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছেও পাঠানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও বিল বিধানসভায় পাশ হওয়ার পর তা পাঠানো হয় রাজ্যপালের কাছে। রাজ্যপাল সেটিতে সম্মতি দিতে পারেন, কিংবা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন বিবেচনার জন্য। প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা থাকে না। তবে এ ক্ষেত্রে সূত্রের খবর, বিলটি রাজভবনের পাশাপাশি পাঠানো হয়েছে মোদী ও শাহের কাছেও। যদিও বিধানসভার স্পিকার এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পিকার জানান, এই বিল কেন্দ্রেরও গ্রহণ করা উচিত।পাশাপাশি আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরাও যাতে এ বার ‘মানবিক দিক থেকে বিচার করে’ কাজে ফেরেন, সেই অনুরোধও করেছেন বিধানসভার স্পিকার।
উল্লেখ্য, ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর নেতা সায়ন লাহিড়ীর সম্প্রতি হাই কোর্টের নির্দেশে জেলমুক্তি হয়েছে। মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়াতেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন সায়ন। বৃহস্পতিবার কারও নাম না করে স্পিকার বলেন, “নাগরিক সমাজ বলছেন। ছাত্র সমাজ বলছেন। অথচ তাঁরাই জেল থেকে বার হয়ে সাধুবাদ জানাচ্ছেন বিরোধী দলনেতাকে। সবাই বুঝতে পারছেন নেপথ্যে কারা আছেন।” তিনি আরও বলেন, “বিচার সবাই চায়। বিচার দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া আছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে খালি ‘জাস্টিস চাই’ বললেই হয় না। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জাস্টিস আসবে।”
কেন্দ্রকে এই বিল গ্রহণ করার যে পরামর্শ স্পিকার দিয়েছেন, তা নিয়ে মুখ খুলেছেন রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “উনি তো মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা ছাড়া কিছু করেন না। কেন্দ্রের যে নতুন আইন, সেটি হয়ত মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা পাননি বলে পড়ে ওঠা হয়নি। কেন্দ্রের আইনে আগেও ছিল, এখনও আছে— সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। রাজ্যের এই বিল আসলে ধর্ষণের মদতকারীদের আড়াল করার বিল।”