অভিযুক্ত: ব্যারাকপুর আদালত চত্বরে হাজির প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী (বাঁ দিকে)। মঙ্গলবার। ছবি: মাসুম আখতার
ন’বছর আগে তরুণ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়র মৃধাকে খুনের ঘটনায় ধৃত প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীকে সাত দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেল সিবিআই। মঙ্গলবার ব্যারাকপুর আদালতের বিচারক তাঁকে সাত দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে পাঠান। দীর্ঘ জেরার পরে সোমবার রাতে সিবিআই প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতার করে। প্রিয়াঙ্কা ময়দানের একটি ফুটবল ক্লাবের এক প্রাক্তন কর্তার পুত্রবধূ।
এ দিন প্রিয়াঙ্কা আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এর আগে সিআইডি এই মামলায় তাঁকে ক্লিনচিট দিয়েছিল। সিবিআই সূত্রের খবর, জুনিয়র খুনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাদের হাতে এসেছে, তার জেরেই প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জুনিয়রের খুনিকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি সিবিআই। তদন্তকারীদের ধারণা, জুনিয়রকে মারতে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করা হয়েছিল।
এক আইনজীবীর মৃত্যুতে এ দিন ব্যারাকপুর আদালতের আইনজীবীরা কর্মবিরতি পালন করেন। ফলে প্রিয়াঙ্কার আইনজীবীরা এ দিন আদালতে সওয়াল করতে পারেননি। প্রিয়াঙ্কার আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী বলেন, “যে হেতু আজ আমরা নিজেদের মক্কেলের জামিনের জন্য সওয়াল করতে পারিনি, তাই বিচারকের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম যে, শুনানি এক দিন পিছিয়ে দেওয়া হোক। অন্য দিকে সিবিআইয়ের আইনজীবী ১৪ দিনের জন্য হেফাজত চেয়েছিলেন। বিচারক প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীকে সাত দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।” প্রিয়াঙ্কাকে তখন দেখা যায় কান্নায় ভেঙে পড়তে।
প্রিয়াঙ্কার আইনজীবী আরও বলেন, “সিবিআই আমার মক্কেলকে ১১ বার ডেকে জেরা করেছে। গ্রেফতার করার মতো কোনও তথ্য প্রমাণ আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে ছিল না। আমরা আইনের পথেই এর মোকাবিলা করব।” কালো জিন্স, সাদা হাই নেক টি-শার্ট এবং গোলাপি রঙের জ্যাকেটে এ দিন আদালতে আসেন প্রিয়াঙ্কা। সাংবাদিকদের দেখে নমস্কার করে বলেন, “জুনিয়রকে কারা খুন করেছে, তার তদন্ত চলছে। আমরাও খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি। আপনারাও সহযোগিতা করুন।”
কিন্তু সিবিআই তো খুনের ঘটনায় আপনাকেই ধরেছে?
এই প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়াঙ্কা বলেন, “আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমি প্রমাণ করে দেব, এর সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই। আমি নির্দোষ।”
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ২০০৮ সালে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়রের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার পরিচয় হয়। প্রাক্তন ক্লাবকর্তার পুত্রবধূ প্রিয়াঙ্কা নিজের বিবাহিত সম্পর্ক গোপন করেই জুনিয়রের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। জুনিয়রের বাড়ির বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও দেখা যেত প্রিয়াঙ্কাকে। জুনিয়র নিজে তো বটেই, তাঁর পরিবারের লোকেরা প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে বিয়ের পরিকল্পনাও করে ফেলেছিলেন। জুনিয়র খুন হওয়ার কয়েক মাস আগে প্রিয়াঙ্কার বিবাহিত পরিচয় জেনে যান জুনিয়রের বাড়ির লোকেরা।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, তার পরেই প্রিয়াঙ্কা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন বলে তারা জানতে পেরেছে। ২০১১ সালের ১২ জুলাই বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে জুনিয়রের দেহ পাওয়া যায়। পুলিশ প্রথমে বিষয়টিকে দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছিল। ময়না-তদন্তে জুনিয়রের কাঁধে একটি ছিদ্র পাওয়া যায়। তার পরেই জানা যায়, গুলি করে খুন করা হয়েছে তাঁকে।
পরে খুনের তদন্তভার নেয় সিআইডি। কিন্তু খুনের কিনারা হয়নি। গত বছর সিআইডি যে দিন হাইকোর্টে তদন্ত রিপোর্ট জমা করে, সে দিনই সিবিআই তদন্তের আবেদন করেন জুনিয়রের বাবা সমরেশ মৃধা। সোমবার রাতে টানা আট ঘণ্টা জেরার পরে প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতার করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, জুনিয়র যে দিন খুন হন, তার কিছু ক্ষণ আগে পর্যন্ত ফোনে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। ফোন করে প্রিয়াঙ্কাই জুনিয়রকে ডেকেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।