Coronavirus Third Wave

তৃতীয় ঢেউ এলে সামলানোর সময় মিলবে তো?

কোনও বিপর্যয় কী ভাবে আসতে পারে, তার অভিঘাত কত হতে পারে— এই সব নিয়ে নির্দিষ্ট নীতি তৈরি করাই এই আইনের লক্ষ্য।

Advertisement

জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় (আইনজীবী)

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২১ ০৬:৫২
Share:

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঢোকানো হচ্ছে এক কোভিড রোগীকে। ফাইল চিত্র।

বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে কোনও আইনের প্রয়োজন হতে পারে, আগে সেই ধারণাই ছিল না আমাদের। প্রথম এর ভাবনা শুরু হয় ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার পরে। তার পরে ২০০৪ সালে, সুনামির ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করতে গিয়ে। অবশেষে ২০০৫ সালে চালু হয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইন। কোনও বিপর্যয় কী ভাবে আসতে পারে, তার অভিঘাত কত হতে পারে— এই সব নিয়ে নির্দিষ্ট নীতি তৈরি করাই এই আইনের লক্ষ্য।

Advertisement

এই আইনে দু’টি কমিটির কথা বলা হয়েছে। প্রথমটি জাতীয় পর্যায়ের কমিটি, যার চেয়ারম্যান দেশের প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এই কমিটির অধীনে আছেন। আর রাজ্য পর্যায়ের কমিটির চেয়ারম্যান হলেন সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, যাঁর অধীনে আছেন জেলা পর্যায়ের পদাধিকারীরা। এই আইন ওই বিশেষ পদাধিকারীদের হাতে বিশেষ ক্ষমতা দিলেও এর মূল বক্তব্য, মহামারিরূপী বিপর্যয়কে প্রতিহত করা বা নাগরিকদের সুরক্ষিত করা। এ ছাড়া আমাদের রাজ্যে আরও একটি আইন রয়েছে— ১৮৯৭ সালের ‘মহামারি প্রতিরোধী আইন’। সেখানেও মূল বক্তব্যটা একই।

এত কথা বললাম, তার কারণ বর্তমানে কোভিড মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই প্রচুর সহনাগরিককে হারিয়েছি। নদীতে মৃতদেহ ভেসে আসা, বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেহ পড়ে থাকা, অক্সিজেনের অভাবে অসহায় মুখগুলোর মৃত্যুমুখে ঢলে পড়া— এই দৃশ্য যে কখনও দেখতে হবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।

Advertisement

কোভিডের প্রথম ঢেউয়ে ভেন্টিলেটরের অভাবে মরতে দেখেছি অনেককে। তখন বুঝেছিলাম, ‘ভেন্টিলেটর’ নামে এই যন্ত্রের উৎপাদন দেশে তো বটেই, বিদেশেও নেই। দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই ‘নেই’-এর তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও একটি শব্দ— অক্সিজ়েন। এখন প্লান্ট বসানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্নও উঠছে, বিশেষ পদাধিকারী মানুষগুলি কী আশু বিপর্যয়ের মাত্রা আগে অনুমান করতে পারেননি?

ইতিমধ্যেই কোভিডের তৃতীয় ঢেউ সম্পর্কে চিকিৎসকেরা এবং গবেষকেরা সতর্ক করেছেন যে, তা আঘাত হানতে চলেছে শিশুদের উপরে। অতিমারিতে বড়দের হারানোর দুঃখ সয়েছি। বুকে পাথর বেঁধে সমবয়সিদের চলে যাওয়াটুকুও মেনে নিচ্ছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, একেবারে ছোটদের আক্রান্ত হওয়ার খবর সহ্য করতে পারব না। ঘরে ঘরে কান্নার রোল উঠবে। এখন বেশির ভাগ পরিবারে একটিমাত্র সন্তান। বাবা-মায়েরা সন্তান হারিয়ে পাগল হয়ে যাবেন। তাই আমার প্রশ্ন, তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় আমরা তৈরি তো?

এখন শুনছি হাসপাতালে শয্যা বাড়ছে, সেফ হোম তৈরি হচ্ছে। এখানে আমার কতগুলি পরামর্শ আছে।— যে ভাবে বয়স্কদের হাসপাতালে বা সেফ হোমে রাখা হয়েছিল, শিশুরা সে ভাবে রাখা যাবে না। শিশুরা হাসপাতালে একা থাকতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে অন্তত ১০-১২ বছর পর্যন্ত শিশুদের সঙ্গে মা-বাবার কাউকে থাকতে হবে। অর্থাৎ একটি কোভিড আক্রান্ত শিশুর জন্য দু’টি শয্যা লাগবে। সে জন্য এখনই পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। এত দিন পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর আর অক্সিজেনের যে অভাব দেখেছি, আশা করি তৃতীয় ঢেউয়ের আগে সেই সমস্যা দূর করা যাবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে পরিস্থিতি সামলাতে স্টেডিয়াম, স্কুলবাড়ি, ফাঁকা সরকারি বাড়িতে সেফ হোম তৈরি হলেও ছোটদের পক্ষে সেখানে একা থাকা বিপজ্জনক। তাদের জন্য আলাদা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে কোনও অভিভাবকই শহর বা গ্রামের বাইরে কোনও সেফ হোমে সন্তানকে রাখতে চাইবেন না। শুনছি, দেশে তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে অক্টোবর-নভেম্বরে। সে ক্ষেত্রে শীতের সময়ে স্টেডিয়াম বা ক্লাবঘরে সেফ হোম আদৌ কতটা বাসযোগ্য হবে, তা-ও ভাবতে হবে।

এ ছাড়া একেই দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল বন্ধ, তার উপরে নিজেরাও সংক্রমিত হলে গভীর অবসাদে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা। তাই তাদের জন্য হাসপাতাল বা সেফ হোমে মনোরোগ চিকিৎসকের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।

আশা করি বিশেষ পদাধিকারীরা এত দিনে বুঝেছেন, তৃতীয় ঢেউ তুলনায় আরও মারাত্মক, আরও ভয়ঙ্কর হতে যাচ্ছে। তাই এখন থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখা দরকার। শিশুদের জন্য যে ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে, তার যথেষ্ট আমদানি বা মজুত থাকা দরকার। শিশুদের বাঁচাতে এখন থেকেই তৈরি থাকতে হবে। তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়লে কিন্তু আর সময় মিলবে না। দু’টি বিশেষ আইন আমাদের বিপর্যয় মোকাবিলা করার সবরকম আইনি ক্ষমতা দিয়েছে। সেই ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগ দরকার এখনই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement