কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
চিকেন পক্সে আক্রান্ত এক পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার গ্রহণ করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে এ দিন জানিয়েছেন, মানবিকতার খাতিরে ওই ছাত্রীর খাতা জমা নেওয়া হল। তবে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনাকে উদাহরণ হিসাবে দেখানো যাবে না। বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও জানিয়ে দেওয়া হবে।
আশুতোষ কলেজের মনস্তত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় সিমেস্টারের ওই ছাত্রীর পরীক্ষার সিট পড়েছে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। ওই কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার সোমবার জানিয়েছিলেন, ছাত্রীটির চিকেন পক্স ধরা পড়ে গত শুক্রবার। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাক্রমে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে তাঁর পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ঠিক হয়, ওই পরীক্ষার উত্তরপত্র জীবাণুমুক্ত করে আলাদা খামে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। কিন্তু ওই পরীক্ষার্থীকে আইডি হাসপাতালে পরীক্ষায় বসানো এবং তাঁর উত্তরপত্র পাঠানোর ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি হয়েছে বলে সোমবার দাবি করেছিলেন অন্তর্বর্তী উপাচার্য। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, এখনও উত্তরপত্রটির বিষয়ে তাঁরা চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেননি।
এ দিনও অন্তর্বর্তী উপাচার্য জানান, নিয়ম অনুযায়ী, জীবাণুমুক্ত অবস্থায় ওই উত্তরপত্রটির আলাদা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু সেটি অন্য আরও ৪৭টি উত্তরপত্রের সঙ্গে একই প্যাকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। যা দেখে পুরো প্যাকেট কলেজ কর্তৃপক্ষকে ফেরত পাঠানো হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই উত্তরপত্রটিকে আপাতত পুলিশি হেফাজতে রাখতে হবে। এর পরে বাকি ৪৭টি উত্তরপত্র কলেজ পাঠালে তা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়।
শান্তা এ দিনও দাবি করেন, ওই ছাত্রীর উত্তরপত্র আলাদা খামে পাঠানো হয়নি। একই প্যাকেটে অন্য খাতার সঙ্গে উত্তরপত্রটি এসেছিল। শুধু টপশিটে ওই পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর গোল করে চিহ্নিত করা ছিল। তিনি বলেন, ‘‘এর নির্দিষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’’ অন্তর্বর্তী উপাচার্যের আরও দাবি, হাসপাতালে পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতির প্রয়োজন ছিল। তাতে সময় ব্যয় হলে পরীক্ষার্থীকে অতিরিক্ত সময়ও দেওয়া যেত। কিন্তু লিখিত অনুমতি নেওয়া হয়নি।
ওই ছাত্রীর উত্তরপত্র আলাদা খামে না পাঠানোর অভিযোগ মানতে নারাজ ছিলেন শিউলি। সোমবারের পরে এ দিনও তিনি ওই খাতা কলেজ থেকে খামবন্দি অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। শেষে তারা সেটি গ্রহণ করে।
অন্তর্বর্তী উপাচার্য এ দিন জানান, কোনও সংক্রামক রোগে আক্রান্ত কী ভাবে পরীক্ষা দেবেন, তা জানুয়ারি মাসে কলেজের পোর্টালে তুলে দেওয়া হয়েছিল। গোটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিউলি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পড়ুয়া-বিদ্বেষী আখ্যা দিয়েছিলেন। অন্তর্বর্তী উপাচার্য বলেন, ‘‘ওই মন্তব্যের নিন্দা করা হচ্ছে।’’ তবে শিউলি এ দিনও জানান, ওই পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র আলাদাই পাঠানো হয়েছিল। টপশিট একটি থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘একটি নির্দোষ ছাত্রী সৎ ভাবে পরীক্ষা দিয়েও শাস্তির মুখে পড়ছিল। শেষ পর্যন্ত সে সুবিচার পাওয়ায় আমি খুশি।’’