— প্রতীকী চিত্র।
শুধুমাত্র সন্দেহের বশে বাংলাদেশি বলে কাউকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা যায় না। একটি মামলার প্রেক্ষিতে এমনই পর্যবেক্ষণের কথা জানাল কলকাতা হাই কোর্ট। পাশাপাশি রাজ্যের উদ্দেশে উচ্চ আদালতের প্রশ্ন, ‘‘সব পরিচয়পত্র থাকার পরেও আর কী নথি চাই?’’
দমকল বিভাগের ফায়ার অপারেটর পদে চাকরির আবেদন করেছিলেন নদিয়ার রানাঘাটের হাঁসখালির বাসিন্দা সুদীপ বিশ্বাস। ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দমকল বিভাগের ফায়ার অপারেটর পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয়। পরের বছর জানুয়ারি মাসে ইন্টারভিউ হয় নিয়োগের। চাকরির পরীক্ষায় সুদীপ উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু, চাকরিপ্রার্থী তথ্য যাচাই প্রক্রিয়ায় আটকে যান। পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এবং রাজ্যের তরফে জানানো হয়, সুদীপ বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি এ দেশে চাকরি পাওয়ার অধিকারী নন। যদিও ওই চাকরিপ্রার্থীর দাবি, তাঁর কাছে ভারতের পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড— সবই রয়েছে। কী ভাবে তাঁকে বাংলাদেশি বলে অভিহিত করা হল? এই প্রশ্ন তুলে পিএসসির বিরুদ্ধে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রাইব্যুনাল (স্যাট)-এ মামলা দায়ের করেছিলেন সুদীপ। স্যাট ওই মামলা খারিজ করে দিলে তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর হয়ে মামলাটি লড়েন আইনজীবী শান্তনু মাঝি এবং আইনজীবী অনিন্দ্য বসু। শুক্রবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার নির্দেশে জানায়, ওই চাকরিপ্রার্থী চাকরি পাওয়ার যোগ্য। আদালত বলে, ‘‘আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মামলাকারীকে দমকলের ফায়ার অপারেটর পদে চাকরি দিতে হবে।’’
ওই চাকরিপ্রার্থীর মামলায় রাজ্য হাই কোর্টে জানিয়েছিল ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের পরে ভারতে এসেছে সুদীপের পরিবার। তাই তাঁর নাগরিকত্ব প্রশ্নের মুখে। কারণ, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী, নাগরিকত্বের একাধিক দিক খতিয়ে দেখা হয়। এ ক্ষেত্রেও তা যাচাই করে দেখছে পুলিশ। যদিও রাজ্যের ওই যুক্তিতে মান্যতা দেয়নি আদালত। বরং হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, মামলাকারী যে বাংলাদেশি নাগরিক, তার সপক্ষে রাজ্যের কাছে কোনও প্রমাণ নেই। কোনও প্রমাণ ছাড়াই যুক্তি দিচ্ছে রাজ্য। তাই সন্দেহের বশে এ ভাবে কাউকে সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত করে রাখা যায় না।
তথ্যের ভিত্তিতে আদালত জানিয়েছে, ওই চাকরিপ্রার্থী মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পাশ করেছেন এ দেশের স্কুল-কলেজ থেকে। পাসপোর্ট-সহ এ দেশের পরিচয়পত্র এবং অন্যান্য নথি রয়েছে। নিজের নামে জমিও কিনেছেন এখানে। এর পরেও কোন যুক্তিতে তাঁকে বাংলাদেশি বলে বিবেচনা করা হবে? বিচারপতি চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘এই মামলার কোনও আইনজীবীকে দেখিয়ে বলব, তিনি বাংলাদেশি! তিনি যে ভারতীয় প্রমাণ করতে পারবেন তো?’’ বিচারপতি এ-ও জানান, সন্দেহে দূর করে ওই চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগ করতে হবে। পুলিশ তাদের তদন্ত চালিয়ে যাক। পরে তারা যদি প্রমাণ করতে পারে মামলাকারী বাংলাদেশি, তখন আইনি পদক্ষেপ করা যাবে।
আদালতের নির্দেশ, রাজ্যকে নিশ্চিত করতে হবে চার সপ্তাহের মধ্যে হাঁসখালির সুদীপ বিশ্বাস চাকরি পেয়েছেন।