বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাকে নিয়ে আইনজীবীদের বিক্ষোভের ঘটনার তদন্তে এসেছে ভারতীয় বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিদল। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবীদের বিক্ষোভের ঘটনার তদন্তের শুরুতেই ঠোকাঠুকি লাগল দিল্লি-কলকাতার। দিল্লি থেকে তদন্ত করতে আসা ভারতীয় বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিদের বৈঠকে ঢুকতে দেওয়া হল না বাংলার বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অশোক দেবকে। আইনজীবী সূত্রে খবর, বর্ষীয়ান আইনজীবী অশোক বৈঠক চলাকালীন আচমকাই ঢুকে পড়েছিলেন হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের ঘরে। তাঁকে মুখের উপরেই বলে দেওয়া হয়, ‘‘আপনি এখন ঘর থেকে চলে যান।’’
হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাস বয়কট এবং তাঁকে ঘিরে আইনজীবীদের বিক্ষোভের ঘটনার তদন্ত করতে সোমবার সকালেই কলকাতায় এসেছেন, ভারতীয় বার কাউন্সিলের তিন সদস্য। এসেই বারের আইনজীবী এবং হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। এমনকি বিচারপতি মান্থার এজলাসের সামনেও ঘুরে আসেন দিল্লি থেকে আসা বারের প্রতিনিধিরা। এর পর দুপুর ১২টা নাগাদ ভারতীয় বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা রেজিস্ট্রার জেনারেলের ঘরে বৈঠক করতে ঢুকলে সেখানে ঢুকে যান অশোকও, এবং বাধা পান।
উল্লেখ্য, দু’দিন আগেই দিল্লি থেকে আসা বারের প্রতিনিধিদল নিয়ে আপত্তির সুর তুলেছিলেন অশোকের নেতৃত্বাধীন বারের সদস্যেরা। এমনকি বিষয়টি ভারতীয় বার কাউন্সিলের আওতাভুক্ত নয় বলেও জানিয়েছিলেন অশোক। তাঁদের অভিযোগ ছিল, যেখানে কলকাতা হাই কোর্ট চত্বরে হওয়া ঘটনা নিয়ে যাবতীয় বিচার-বিবেচনার সিদ্ধান্ত রাজ্য বার কাউন্সিলের হাতে থাকার কথা, সেখানে বাংলার বার কাউন্সিলকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ভারতীয় বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা কী ভাবে তদন্ত করতে আসছেন, তা-ও বিচার্য। এর পর সোমবার দিল্লি থেকে বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা কলকাতায় এসে পৌঁছতেই ভারতীয় বার কাউন্সিল এবং রাজ্য বার কাউন্সিলের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিদের বৈঠকে অশোক ঢুকতে যেতেই হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল তাঁকে বলেন, ‘‘আপনাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। আপনি এখন ঘর থেকে চলে যান।’’ অশোক অবশ্য এ নিয়ে বাড়তি কোনও কথা না বাড়িয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসেন।
উল্লেখ্য, সোমবার থেকেই কলকাতা হাই কোর্ট চত্বরে চলছে আইনজীবীদের একাংশের বিক্ষোভ। যা এক সময় হাতাহাতির পর্যায়েও পৌঁছয়। পরে বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কটের ডাক দেন আইনজীবীদের সংগঠন বার কাউন্সিলের সদস্যদের একাংশ। ফলে বিচারপতি মান্থার এজলাসে আইনজীবীদের অনুপস্থিতির কারণে থমকে যায় বহু মামলার বিচারপ্রক্রিয়া। ভারতীয় বার কাউন্সিল সেই ঘটনার নিন্দা করে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে। গত বৃহস্পতিবার সেই সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতার বার কাউন্সিলের সদস্যদের আচরণকে ‘অভব্যতা’ বলেও মন্তব্য করেন ভারতীয় বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেছিলেন, ‘‘বার এই ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করে না। আমরা মনে করি, যাঁরা এ সব করেছেন, তাঁদের প্র্যাকটিস করার অনুমতি পাওয়া উচিত নয়। আরও দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, যে বার কাউন্সিল আইনজীবীদের শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে শেখায়, ভদ্র, বিনয়ী এবং সংযত আচরণ করতে শেখায়, তারই সদস্যরা এমন করেছেন।’’