পরিষেবার টক্করেই এগিয়ে ক্যাব

তেল মাখার জন্য কড়ি ফেলতে প্রস্তুত কলকাতাবাসী। যাত্রী প্রত্যাখ্যান আর ট্যাক্সিচালকদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ শহর তাই তাদের ধর্মঘটে এ বার হেলায় ট্যাক্সিকেই প্রত্যাখ্যান করল। বদলে বেছে নিল ‘ওলা’ বা ‘উবের’-এর মতো ‘কল আ ক্যাব’ কিংবা লাক্সারি ট্যাক্সির পরিষেবাকে। ফলে, লাক্সারি ট্যাক্সি আটকাতে ধর্মঘটে গিয়ে কার্যত নিজেরাই কোণঠাসা হয়ে পড়লেন ট্যাক্সিচালকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৫ ০০:৩৩
Share:

তেল মাখার জন্য কড়ি ফেলতে প্রস্তুত কলকাতাবাসী। যাত্রী প্রত্যাখ্যান আর ট্যাক্সিচালকদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ শহর তাই তাদের ধর্মঘটে এ বার হেলায় ট্যাক্সিকেই প্রত্যাখ্যান করল। বদলে বেছে নিল ‘ওলা’ বা ‘উবের’-এর মতো ‘কল আ ক্যাব’ কিংবা লাক্সারি ট্যাক্সির পরিষেবাকে। ফলে, লাক্সারি ট্যাক্সি আটকাতে ধর্মঘটে গিয়ে কার্যত নিজেরাই কোণঠাসা হয়ে পড়লেন ট্যাক্সিচালকেরা।

Advertisement

বিষয়টি যে আক্ষরিক অর্থেই তাই, তা কার্যত মেনে নিয়ে বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিমল গুহ বলেন, ‘‘আমরাই নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারছি। এ রকম চলতে থাকলে মানুষ আমাদের আরও প্রত্যাখ্যান করবেন।’’

এমন পরিস্থিতির জন্য অবশ্য সরকারকেই অনেকাংশে দায়ী করছেন ট্যাক্সিচালকেরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমরা তো ভাড়া ঠিক করি না। সরকার বেঁধে দেয়। সেই ভাড়ায় উন্নত, আরামদায়ক পরিষেবা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। আমাদেরও সরকার বেসরকারি সংস্থার মতো দিনের বিভিন্ন সময়ে পৃথক ভাড়া নেওয়ার অনুমতি দিক। উপযুক্ত ভাড়া পেলে দেখবেন, আমরাও ওলা-উবেরের মতো ভাল পরিষেবা দেব।’’ ট্যাক্সিচালকদের যুক্তি— সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়া যেহেতু চাহিদার তুলনায় কম, তাই মালিক বা চালক যথেষ্ট আয় করেন না। ফলে চালকের মানও যথাযথ হয় না। অন্য দিকে, ওলা-উবেরের মতো ক্যাবের ক্ষেত্রে যেহেতু ভাড়া চাহিদামাফিক বেশি, আয়ও ভাল হয়, একই সঙ্গে আরামদায়ক পরিষেবার পাশাপাশি চালকের ধোপদুরস্ত চেহারা, ভাল ব্যবহার, যথাযথ মানের গাড়িচালনা, সবই জোগানো সম্ভব।

Advertisement

ট্যাক্সিচালকদের এমন দাবি যে অসঙ্গত নয়, তা মানছেন পরিবহণ দফতরের কিছু কর্তাও। তাঁদের কথায়, ‘‘সরকার কেনই বা বাস-ট্যাক্সির দাম নিয়ন্ত্রণ করবে! বিদ্যুৎ বা দুধের মতো গণ-পরিবহণের দামও সরকার নিয়ন্ত্রণ না করে কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে তুলে দিক, এমন দাবি বহু বার উঠেছে। সরকার প্রতি বারই পিছিয়ে এসেছে।’’

তবে পাল্টা মতও রয়েছে পরিবহণ দফতরের অন্দরে। ওই অংশের মতে— ‘একা রাজা’ হওয়ার সুযোগ নিতে গিয়েই কোণঠাসা ট্যাক্সিচালকেরা। দিন-দিন তাঁদের জুলুম এবং প্রত্যাখ্যান অসহ্য হয়ে উঠেছিল। নতুন উপায় খুঁজে পেয়েই মানুষ এখন ট্যাক্সিকে ব্রাত্য করে দিচ্ছে। এই মতের সমর্থন মিলেছে বুধবারই। পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে সরকারের সব শর্ত মেনে হলুদ থেকে নীল-সাদা হতে রাজি হয়েছেন ট্যাক্সিচালকেরা। এর কারণ হিসেবে চালকেরাই ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘হলুদ ট্যাক্সির সমার্থক হয়ে গিয়েছে প্রত্যাখ্যান। আমরা সেই তকমা থেকে বেরোতে চাইছি।’’

ভাড়া বৃদ্ধি-সহ বহু দাবি নিয়ে এ দিন ধর্মঘট ডেকেছিলেন এআইটিইউসি-র ট্যাক্সিচালকেরা। শাসক দল-সহ অন্য ইউনিয়নগুলি জানিয়েছিল, ধর্মঘট সফল হবে না। এআইটিইউসি-র ধর্মঘট সে ভাবে সফল হবে না, এমন ভাবনা থেকেই তা ব্যর্থ করতে সে ভাবে প্রস্তুতিই নেয়নি শাসক দলের ট্যাক্সি সংগঠন এবং প্রশাসন। ফলে সকাল থেকেই হাওড়া স্টেশনের প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথ ছিল ফাঁকা। সকালে হাতে গোনা কিছু ট্যাক্সি থাকলেও বেলায় তা-ও উধাও। একই দৃশ্য শিয়ালদহ স্টেশন ও বিমানবন্দরে। আর পাঁচটা ধর্মঘটের দিনের মতো হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশন, বিমানবন্দরে ইচ্ছেমতো ভাড়া হেঁকেছে বেসরকারি গাড়ি। এখানেই অনায়াসে ঢুকে পড়ল ওলা-উবেররা। মেজাজি বেসরকারি চালকদের সঙ্গে গন্তব্যে পৌঁছনোর বদলে অনায়াসে যাত্রীরা মোবাইলে ডেকে নিলেন ‘কল আ ক্যাব’ পরিষেবা। কোনও রকম দরাদরি ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে গেলেন গন্তব্যে।

এক যাত্রী মৌসুমী সাহার কথায়, ‘‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে গাড়ি হয়তো পাব, সে তো ইচ্ছেমতো দর হাঁকাবে। তার চেয়ে আমি ফোন করে ‘ক্যাব’ ডেকে নিলাম। একটু বেশি ভাড়া দিয়ে আরামে বাড়ি পৌঁছে গেলাম। শুধু শুধু ট্যাক্সি নিয়ে মাথা ঘামাব কেন!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement