এখনও মেলেনি ছাড়পত্র। ফাইল চিত্র।
উদ্বোধনের আগের রাতে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে বাজি বাজার নিয়ে। শহরের তিনটি বৈধ বাজি বাজারের কোনওটিতেই বুধবার রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ছাড়পত্র পৌঁছয়নি বলে খবর। যার জেরে বিদ্যুৎ সংস্থার তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়। ছাড়পত্র না-আসা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করা যাবে না। যার জেরে স্পষ্ট নয়, আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু করা যাবে কি না, পুলিশের তত্ত্বাবধানে হওয়া তিনটি বৈধ বাজি বাজার! বাজারের উদ্যোক্তাদের আশ্বাস, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই ছাড়পত্র নেওয়ার সমস্ত প্রক্রিয়া তাঁরা শেষ করে ফেলতে পারবেন।
গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর একাধিক ঘটনা ঘটেছে শহরে। ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এমন বেঘোরে প্রাণ হারানোর ঘটনার প্রেক্ষিতে চলতি বছরে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। সেই কারণেই বাজি বাজারে বিদ্যুৎ সংযোগের ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে। যার ফলে কলকাতা পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাজি বাজারে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে হলে অবশ্যই রাজ্যের মুখ্য ইলেকট্রিক্যাল ইনস্পেক্টরের ছাড়পত্র নিতে হবে। রাজ্য সরকারের ‘ডিরেক্টরেট অব ইলেকট্রিসিটি’ দফতর থেকে পরিদর্শনের পরেই ছাড়পত্র দেবেন মুখ্য ইলেকট্রিক্যাল ইনস্পেক্টর।
দেখা গিয়েছে, এ দিন দুপুর পর্যন্ত কেবল টালা এবং বেহালা বাজি বাজারের তরফে ওই দফতরে পরিদর্শনের আবেদন জানানো হয়েছে। রাজ্যের মুখ্য ইলেকট্রিক্যাল ইনস্পেক্টর পার্থ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, বিকেলের পরে এই দুই বাজারের আবেদনপত্র পেলেও কালিকাপুর বাজারের তরফে কোনও আবেদন আসেনি। যে দুই বাজার থেকে আবেদনপত্র এসেছে, সেখানে পরিদর্শক পাঠানো হয়েছে। ওই দুই বাজারে প্রয়োজনীয় কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সে ব্যাপারেও বলে দেওয়া হয়েছে। যেমন, বাজারের মধ্যে থাকা বিদ্যুতের খুঁটিগুলি আর্থিং করা রয়েছে কি না, স্টলের বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা নেওয়া হয়েছে কি না— এই সব খতিয়ে দেখেন পরিদর্শকেরা। আরও দেখা হয়েছে, প্রতিটি স্টলে একটি করে বৈদ্যুতিক পয়েন্ট এবং দু’টি করে ল্যাম্প হোল্ডার লাগানো রয়েছে কি না। পার্থের কথায়, ‘‘পরামর্শ মতো ব্যবস্থা করা হলে কিছু কাগজপত্রের কাজ থাকে। তার পরেই অনুমতি দেওয়া হবে। তবে বাজার শুরুর আগের দিন বিকেলের পরে পরিদর্শনের আবেদন এলে মুশকিল। দ্রুত সব কাজ না-হলে কাল বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে কী হবে বলা যাচ্ছে না।’’
বেশ কিছু দিন আগেই তো কলকাতা পুলিশের তরফে সমন্বয় বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আদালতের নির্দেশ মেনে এ বছর সবুজ বাজি বাজার হতে চলেছে। তার প্রেক্ষিতে শহরের তিনটি জায়গাও ঠিক হয়ে গিয়েছে। তার পরেও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত ছাড়পত্র নিয়ে এমন গড়িমসি কেন হল? ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বললেন, ‘‘বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের ভুল হয়েছিল। তবে যা বলা হয়েছে, দ্রুত করে দেওয়া হয়েছে।’’ বেহালার ‘সোসাইটি ফর বাজি বাজার ব্যবসায়ী, দক্ষিণ ২৪ পরগনা’র কোষাধ্যক্ষ অমিতাভ চক্রবর্তী বললেন, ‘‘প্রথম থেকে এই সব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণাই ছিল না। শেষ মুহূর্তে জেনেছি। আগে জানানো হলে সব আবেদন করে ফেলা যেত।’’ কালিকাপুর, অর্থাৎ ইস্ট ডিভিশন বাজি বাজারের সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ মজুমদারের দাবি, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপে আবেদন করা আছে। তাতে কাজ না হলে কাল সশরীরে গিয়ে আবেদন জানাব। দেরি হলে কিছু করার নেই।’’ এই জটিলতার মধ্যেও বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ খুশি। কারণ, অবশেষে শুধুমাত্র সবুজ বাজি ব্যবসায়ীদের ছাড়পত্র দিয়েছে দমকল বিভাগ।