বাস দুর্ঘটনা। —প্রতীকী চিত্র।
শহরে গণ পরিবহণের বেপরোয়া গতি ঠেকাতে দেড় মাস আগেই নানা পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার তথা পরিবহণ দফতর। তার মধ্যে অন্যতম ছিল বেপরোয়া বাসচালকদের নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পরিস্থিতি যে এখনও বদলায়নি, তা ফের সামনে এল গত মঙ্গলবার, তেলেঙ্গাবাগানের দুর্ঘটনায়। ওই দুর্ঘটনায় দুই বাসের রেষারেষির জেরেই এক প্রৌঢ়ার পায়ের উপরে একটি বাসের চাকা উঠে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত নভেম্বরে সল্টলেকে ১ নম্বর গেটের কাছে দুই বাসের রেষারেষির কারণে মায়ের স্কুটার থেকে পড়ে গিয়ে, মাথায় আঘাত পেয়ে মৃত্যু হয় এক স্কুলপড়ুয়ার। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পরিবহণ ও নগরোন্নয়ন দফতর যৌথ ভাবে বাসমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্দেশ দিয়েছিল যে, কমিশন প্রথা তুলে দিতে হবে। যাতে কমিশনের পিছনে দৌড়তে গিয়ে বাসচালক বেপরোয়া ভাবে বাস না চালান। একটি বিশেষ অ্যাপ তৈরির কথাও সে সময়ে পরিবহণ দফতর ঘোষণা করে, যার মাধ্যমে চালকদের উপরে নজরদারি করা হবে বলে জানানো হয়েছিল।
কিন্তু গত মঙ্গলবার উল্টোডাঙায় তেলেঙ্গাবাগানে বাগবাজার-গড়িয়া এবং এল ২৩৮ রুটের দু’টি বাসের মধ্যে রেষারেষির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও পরিবহণ দফতর সূত্রের দাবি, দিন দশেকের মধ্যেই বাসচালকদের নিয়ন্ত্রণ করার অ্যাপটি চালু করে দেওয়া হবে। যাতে তাঁরা রেষারেষি করছেন কিনা, সে দিকে নজর রাখা যায়। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বেপরোয়া বাস চালানো কোনও ভাবে বরদাস্ত করা হবে না। নতুন অ্যাপ চালু করা হচ্ছে। বাসচালকদের সেই অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। তা না করলে তাঁদের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে। তার আগে অবধি রেষারেষির অভিযোগ উঠলে, চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।’’ মন্ত্রী জানান, অ্যাপের পাশাপাশি একটি আদর্শ কার্যবিধিও (এসওপি) চালু করবে সরকার। সেটিও দ্রুত বাস্তবায়িত করা হবে। ওই আচরণবিধির মধ্যে কী ভাবে চালকেরা বাস চালাবেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া-সহ নানা ধরনের নির্দেশিকা থাকার কথা রয়েছে।
তবে বাসমালিকদের অনেকেরই দাবি, বেপরোয়া ভাবে বাস চালানোর জেরে দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় সিংহভাগ ক্ষেত্রেই চালকদের। তাঁদের বোঝানো হলেও অনেক ক্ষেত্রে মানসিকতার কারণেই বাসচালকেরা মালিকদের নির্দেশ মানতে চান না বলে অভিযোগ। বাসমালিকদের সংগঠন সিটি সাবাবার্ন বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘বাসমালিক চড়া হারে গাড়ির বিমা দেওয়ার পরেও কেন চাইবেন তাঁর গাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটুক? বেপরোয়া ভাবে বাস চালানোর দায় সম্পূর্ণ ভাবেই চালকের। মালিক সব সময়ে চান, চালক নিরাপদে বাস চালান।’’
তবে এ ক্ষেত্রে বাসচালকের উপরে মালিকের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আরও একবার উঠে আসছে। কারণ, বাসমালিকদের সিংহভাগই জানান, চালককে বাসমালিক বেতন দিলেও তাঁর নিয়োগ করে সংশ্লিষ্ট রুটের বাসকর্মী সংগঠন। এক বাসমালিকের কথায়, ‘‘চালকের দোষে বাসের বিরুদ্ধে মামলা হলে তাঁকে বসিয়ে দিতে গেলে বাসকর্মী সংগঠন বাধা দেয়। এমনকি, এক মালিক বসিয়ে দিলে সংগঠন তাঁকে অন্য রুটে জুড়ে দেয়। এতে চালক তাঁর ভুলটা উপলব্ধি করতে পারেন না।’’