Holi celebration

‘দোলে নয়, রং আবার ফিরে আসুক জীবনের ক্যানভাসে’

যেমন, বিটি রোডের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এক  আবাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সেখানে শুধুই ‘হোলিকা দহন’ হবে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২১ ০৭:১৩
Share:

রং-মিলান্তি: রাধা-কৃষ্ণের সাজে রঙের উৎসবে শামিল দৃষ্টিহীন এই খুদেরা। কিন্তু প্রশ্ন, করোনার সময়ে মাস্কহীন এমন উদ্‌যাপন এদের বিপদ ডেকে আনবে না তো? বৃহস্পতিবার, শ্যামবাজারে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বিশ্ব জুড়ে অতিমারির দাপটে বদলে গিয়েছে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। রং-হীন জীবনের ক্যানভাসে এ বারেও তাই দেখা যাবে না রংচঙে মুখগুলো। দোল খেলে নকল বৃষ্টির স্নান বা দুপুরের ভূরিভোজ এখন যেন বহু দূরের সুখ-তারা। কারণ, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় এ বার অধিকাংশ আবাসনই জানিয়েছে, তারা দোল উৎসব পালন করছে না। গত বারেও একই আতঙ্কে উৎসব বন্ধ রেখেছিল বহু আবাসন। চলতি জানুয়ারি থেকে সংক্রমণ কমতে থাকায় কিছু আবাসন অবশ্য উৎসবের তোড়জোড় শুরু করছিল। ফের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ছেদ পড়েছে সেই আয়োজনে।

Advertisement

যেমন, বিটি রোডের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এক আবাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সেখানে শুধুই ‘হোলিকা দহন’ হবে। আর আবাসনের মন্দিরে কৃষ্ণকে আবির দিয়ে রাঙানো হবে। এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমাদের দু’জন আবাসিক করোনায় আক্রান্ত। তা ছাড়া এখানে অনেক বয়স্ক আছেন। দোল খেলায় তো আর দূরত্ব-বিধি মানা সম্ভব নয়। তাই দোল উৎসব বন্ধ থাকছে।’’ ওই আবাসনের এক আবাসিক জানাচ্ছেন, আগে সেখানে দোলকে কেন্দ্র করে নকল বৃষ্টিতে স্নান হত, খাওয়াদাওয়া হত। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও ছিল দেখার মতো।

প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি আবাসনের বাসিন্দারা জানালেন, এ বার তাঁরাও দল বেঁধে দোল খেলবেন না। গত বছরও একই কারণে দোল বন্ধ ছিল। এ বারেও কার্যত বন্ধ থাকছে। আবাসনের যুগ্ম সম্পাদক এম ভি বিজু বললেন, ‘‘দোলকে কেন্দ্র করে দিনভর খাওয়াদাওয়া চলে। এ বার তা বন্ধ।’’

Advertisement

বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও যশোর রোডের সংযোগস্থলের এক আবাসনের বাসিন্দারা জানালেন, প্রতিবার দোলে রং খেলার সঙ্গেই চলে ঠান্ডাই শরবত খাওয়া। সেই সঙ্গে নোনতা-মিষ্টি স্বাদের মুখরোচকের ব্যবস্থা থাকে। দুপুরে থাকে লোভনীয় মেনু। ওই আবাসনের বাসিন্দা সমীরবরণ সাহা বললেন, ‘‘ছোটরা বা আবাসনের তরুণ ব্রিগেড দোল খেলার কথা বলেছিল। কিন্তু করোনা সতর্কতায় বয়স্কেরা তাতে যোগ দেবেন না ঠিক করেছিলেন। এ বার তাই রঙের উৎসব বাতিল। ছোটরা অবশ্য খেলতে পারে।’’ ইস্টার্ন বাইপাসের রুবি মোড়ের কাছে একটি আবাসনের বাসিন্দা শৌভিক মল্লিক জানাচ্ছেন, তাঁদের আবাসনেও রঙের উৎসব পালিত হবে না।

দোলের দিন ছুটি থাকলেও তার আগে বা পরে কোনও এক দিন দোল খেলা হয় স্কুল-কলেজে।
অধিকাংশ স্কুলশিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ারা স্কুলে আসছে না। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির যারা আসছে, তাদের সংখ্যা খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে রং খেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ, টাকি হাউসের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক বলেন, ‘‘এই স্কুলের প্রাক্তনীদের সংগঠন দোলের আগে বা পরে স্কুলে গিয়ে দোল খেলে। সেই দিন অনেক অভিভাবকও যান। এ বার সে সবের প্রশ্ন নেই।’’

সেক্টর ফাইভের এক তথ্যপ্রযুক্তি অফিসের কর্মী জয়ন্ত রায় বলেন, ‘‘আগেও আমাদের অফিসের ভিতরে রং খেলার অনুমতি ছিল না।
কিন্তু ছুটির পরে অফিসের বাইরে কেউ কেউ আবির খেলতেন। এখন তো দীর্ঘদিন ধরে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চলছে। যাঁরা আসছেন, তাঁরাও সংক্রমণের আতঙ্কে দোল খেলার কথা ভাবতে পারছেন না।’’

বেশির ভাগেরই বক্তব্য, ‘‘ফের একটি উৎসব নীরবেই পেরিয়ে যাক। দোলে নয়, রং আবার ফিরে আসুক জীবনের ক্যানভাসে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement