construction

নির্মল বায়ুর জন্য নির্মাণ-বর্জ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণে জোর নির্মলার

‘নির্মাণ-বর্জ্য (কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমোলিশন ওয়েস্ট) একটি ব্যবহারযোগ্য সম্পদ। ফলে একে নির্মাণ-বর্জ্যের পরিবর্তে নির্মাণ-উপাদান বলা হোক।’

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৫৪
Share:

ফাইল চিত্র।

‘নির্মাণ-বর্জ্য (কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমোলিশন ওয়েস্ট) একটি ব্যবহারযোগ্য সম্পদ। ফলে একে নির্মাণ-বর্জ্যের পরিবর্তে নির্মাণ-উপাদান বলা হোক।’ বছর আড়াই আগে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘বিল্ডিং মেটেরিয়ালস অ্যান্ড টেকনোলজি প্রোমোশন কাউন্সিল’-এর (বিএমটিপিসি) তরফে যে বিশেষ রিপোর্ট বার করা হয়েছিল, তার মুখবন্ধে এমনই সওয়াল করেছিল ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা।

Advertisement

সংস্থার বক্তব্য ছিল, যত্রতত্র নির্মাণ-বর্জ্য ফেলা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দেশের বায়ুদূষণও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কারণ, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম ১০) ও অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) মাত্রা বৃদ্ধিতে নির্মাণ-বর্জ্যের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। তাই নির্মাণ-বর্জ্যকে ‘রিডিউস, রি-ইউজ় ও রিসাইকল’ বা ‘থ্রি আর’ নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলেছিল তারা। কারণ তথ্য বলছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ১৫ কোটি টন নির্মাণ-বর্জ্য উৎপন্ন হয়। ফলে দেশের বাতাসের মানের অবনমনের ক্ষেত্রে নির্মাণ-বর্জ্যের ভূমিকা কতটা, তা সহজেই অনুমেয়।

তাই সোমবার যখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বায়ুদূষণ কমানোর জন্য আলাদা করে নির্মাণ-বর্জ্যের কথা বলেন, (রিডাকশন ইন এয়ার পলিউশন বাই এফেক্টিভলি ম্যানেজিং ওয়েস্ট ফ্রম কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমোলিশন অ্যাক্টিভিটিজ), তখন তা খুবই স্বাভাবিক বলে মনে করছেন পরিবেশবিদ-নির্মাতা-স্থপতিরা। কারণ তাঁদের বক্তব্য, নির্মাণ-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার জন্য ২০১৬ সালেই ‘কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমোলিশন ম্যানেজমেন্ট রুলস’ তৈরি হয়েছিল। তার পরে কয়েকটি শহরে বিচ্ছিন্ন ভাবে নির্মাণ-বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ ও পুনর্ব্যবহার শুরু হলেও সার্বিক স্তরে সেই পরিকাঠামো কোথাও গড়ে ওঠেনি।

Advertisement

অথচ বিএমটিপিসি-র তথ্য বলছে, ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে নির্মাণের উপাদানের চাহিদা বাড়তে চলেছে। কারণ, শুধু ২০০৫-২০১২ সালের মধ্যেই দেশ জুড়ে যত সংখ্যক বাড়ির সংস্কার ও নতুন নির্মাণ হয়েছে, তার পরিমাণ ৫৭৫ কোটি বর্গমিটার! ফলে নির্মাণ-বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ ও পুনর্ব্যবহার প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ নির্মাণ-বর্জ্যের মধ্যে মাটি, বালি, নুড়ির শতকরা হার ২৬ শতাংশ। ইট, কংক্রিট, ধাতব পদার্থ, কাঠ ও অন্যান্য উপাদানের হার যথাক্রমে ৩২, ২৮, ৬, ৩ এবং ৫ শতাংশ। ফলে এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ঠিক ভাবে সামলানো না গেলে বায়ুদূষণ কোনও ভাবেই কমানো সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। আবাসন নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ‘ক্রেডাই বেঙ্গল’-এর কর্তা নন্দু বেলানির বক্তব্য, ‘‘খুব কম পরিমাণ নির্মাণ-বর্জ্যই পুনর্ব্যবহার হয়। কিন্তু এই সংখ্যাটা বাড়ানো গেলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।’’ বিশিষ্ট স্থপতি সুবীর বসু আবার বলছেন, ‘‘বড় আবাসনগুলি তৈরির সময়ে নির্মাণ-বর্জ্য বিধি মানা হয়। কিন্তু এ বার ছোট-মাঝারি নির্মাণ প্রকল্পেও পরিবেশ-বিধি মানার সময় এসেছে।’’

বিশেষজ্ঞেরা আরও জানাচ্ছেন, নির্মাণ-বর্জ্যের একটি বড় অংশই খোলা ভাগাড়ে চলে যায়। দিনের পর দিন ওই বর্জ্য ভাগাড়ে জমে তা পরিণত হয় স্তূপীকৃত বর্জ্যে (লেগ্যাসি ওয়েস্ট)। যা বায়ুদূষণের আরও একটি কারণ। সে জন্যই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী স্তূপীকৃত বর্জ্যের ভাগাড়ে (লেগ্যাসি ডাম্পসাইট) বায়ো-রেমিডিয়েশন পদ্ধতির (যে প্রক্রিয়ায় সজীব বস্তু অর্থাৎ লিভিং অর্গানিজ়ম ব্যবহার করে মাটি, জল বা কোনও এলাকার দূষণ কমানো হয়) উপরে গুরুত্ব দিয়েছেন। যদিও এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘আসলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কথাই বলছেন। যে কারণে শুধুমাত্র ‘ক্লিন এয়ার’ প্রকল্পে ২২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন।’’
‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্য হল, এ দেশে যত পরিমাণ নির্মাণ-বর্জ্য তৈরি হয়, দৈনিক তার মাত্র এক শতাংশের প্রক্রিয়াকরণ হয়। ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম-এর অধীনে ২০২৪ সালের মধ্যে যেখানে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ২০-৩০ শতাংশ কমানোর কথা বলা হচ্ছে, তখনও ধারাবাহিক ভাবে বর্জ্য-স্তূপ থেকে নির্গত ধূলিকণা বাতাস দূষিত করে চলছে।’’

২০১০-’১১ সালে বাজেট পেশের সময়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘দেশের অনেক জায়গায় দূষণের মাত্রা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে। তা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কয়েকটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’ তার বছর দশেক পরে যখন নির্মলা সীতারামনের গলাতেও বায়ুদূষণ নিয়ে একই সুর শোনা যায়, তখন বোঝা যায়, প্রতি বছর বাজেট পেশ হয়, নিয়মমাফিক বরাদ্দ হয়, নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, কিন্তু দূষণের লেখচিত্র আর নিম্নমুখী হয় না। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলছেন, ‘‘আর্থিক বরাদ্দে সম বণ্টন প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ তো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়ে এসেছে। কিন্তু পরিবেশের স্বার্থ রক্ষার্থেও যদি বৈষম্য হয়, তা দুর্ভাগ্যজনক!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement