Buddhadeb Bhattacharjee Death

শেষ বারের ব্রিগেড যাত্রাতেও স্টিয়ারিংয়ে ছিলেন সেই ওসমান

নগরোন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে সরকারি গাড়িচালকের চাকরি পান আদতে বিহারের বাসিন্দা ওসমান।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৪ ০৯:১৮
Share:

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসে মহম্মদ ওসমান। নিজস্ব চিত্র।

‘‘দাদা বেরোবেন আর আমি স্টিয়ারিংয়ে থাকব না, তা হয়?’’— বিছানায় শোয়া, পক্ষাঘাতগ্রস্ত সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ দৃঢ় গলায় বললেন কথাটা। এর পরে কিছু ক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তার পরে বললেন, ‘‘দেখুন, দাদার শেষ যাত্রায় আমি স্টিয়ারিংয়ে নেই। আমি থাকলে এটা হয়তো শেষ যাত্রা হত না। আমার তো আর গাড়ি চালানোরই ক্ষমতা নেই।’’ কথা শেষ হয় না। অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন বৃদ্ধ।

Advertisement

পার্ক সার্কাসের যে সরকারি আবাসনে বসে কথা হচ্ছিল, সেখানেই সপরিবার থাকেন রাজ্যের সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দীর্ঘদিনের ‘সারথি’ মহম্মদ ওসমান। ১৯৮২ সাল থেকে বুদ্ধবাবুর গাড়ির স্টিয়ারিং সামলানোর দায়িত্ব তাঁর। ১৯৮৭ সালে বুদ্ধবাবু তথ্য-সম্প্রচার, সংস্কৃতি এবং নগরোন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে সরকারি গাড়িচালকের চাকরি পান আদতে বিহারের বাসিন্দা ওসমান। ১৯৯৩ সালে যখন মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন বুদ্ধবাবু, কাজ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন ওসমানও। তা গৃহীত হয়নি। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত কান্তি বিশ্বাসের গাড়ি চালান ওসমান। ফের তিনি ফেরেন বুদ্ধবাবুর সারথি হয়ে। ২০০০ সালের নভেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার এক বছরের মধ্যে বাড়তি নিরাপত্তা পান বুদ্ধদেব। বুলেটপ্রুফ জিপ পেলেও তাঁর পছন্দ ছিল সেই সাদা অ্যাম্বাসাডর। তাঁর ‘০০১ সিরিজ়’-এর বুলেটপ্রুফ গাড়ির চালকও ছিলেন ওসমান।

২০২২ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন ওসমান। তা নিয়েই এ দিন কোনও মতে গিয়েছিলেন তাঁর ‘বুদ্ধদা’কে শেষ বিদায় জানাতে। ফিরে বললেন, ‘‘২০১১ সালের মে মাসে ভোটে হেরে যাওয়ার পরে বুদ্ধদা বলে দেন, আমি পার্টির গাড়িতেই যাতায়াত করব। তবু ডিউটি হিসাবে যেতাম আর বুদ্ধদাকে পার্টি থেকে দেওয়া গাড়ির পিছনে সরকারি গাড়ি নিয়ে ঘুরতাম। বুদ্ধদা আমার গাড়িতে বসতেন না। ২০১১ সালের অগস্টে মাওবাদী হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তা বাড়ল ওঁর। উনি পণ করলেন, নিরাপত্তা বাড়লেও সরকারি চালক নিতে হলে আমাকেই চাই। সেই থেকে আবার ডিউটি।’’

Advertisement

বৃদ্ধের স্মৃতিতে ফিরে আসে, ২০১৬ সালে অবসর নেওয়ার পরেও কিছু দিন চাকরি করতে চেয়েছিলেন তিনি। রাজ্য পরিবহণ দফতর সেই আবেদনের উত্তর দেয়নি। বিষয়টি বুদ্ধবাবুকে জানিয়েছিলেন ওসমান। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘ওই সময়ে এক বার অসুস্থ বুদ্ধদাকে দেখতে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুদ্ধদাকে তিনি বলেন, কিছু প্রয়োজন হলে বলবেন। কখনওই নিজের জন্য কিছু না চাওয়া লোকটা আমার চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানান। সেই আর্জিতে কাজ হয়েছিল।’’

২০১৯ সালের শেষ ব্রিগেডেও বুদ্ধবাবুকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ওসমানই।
ধরা গলায় বললেন, ‘‘বুদ্ধদা আর আমার ওটাই শেষ রাজনৈতিক অ্যাসাইনমেন্ট।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement