breast feeding

দুধের শিশুদের মাতৃদুগ্ধ দানের তথ্য গড়ছেন শহরের দুই তরুণী

কোভিডে আক্রান্ত মায়েদের শিশুর জন্য স্তন্যদানে ইচ্ছুক মায়েদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করবেন তাঁরা।

Advertisement

চৈতালি বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২১ ০৭:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

কয়েক দিন ধরেই সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে পোস্টটা ঘুরছিল— বাঁকুড়ার এক কুড়ি দিনের শিশুর মা কোভিডে মারা গিয়েছেন। বাচ্চাটিকে কোনও প্রসূতি মায়ের স্তন্যপান করানোর আবেদন জানিয়ে একটি ইমেলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে সদ্যোজাতের বাবার তরফে।

Advertisement

সেটি নিজের ইনস্টাগ্রাম পেজে শেয়ার করেছিলেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। যা পড়ে শহরের দুই তরুণী সিদ্ধান্ত নেন, কোভিডে আক্রান্ত মায়েদের শিশুর জন্য স্তন্যদানে ইচ্ছুক মায়েদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করবেন তাঁরা। যাতে কোনও শিশু মাতৃহারা হলে বা করোনার কারণে মা বাচ্চার থেকে দূরে থাকলে সেই সময়ে দুধের শিশুটিকে যেন অসুবিধায় পড়তে না হয়। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ওই সমাজমাধ্যমেই পোস্ট দিয়ে মাতৃদুগ্ধ দাত্রীর সন্ধান শুরু করেছেন কলকাতার দুই মেয়ে বৈদেহী এবং মনিময়ী।

এ দিন ফোনে বৈদেহী বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার সেই বাচ্চার পোস্ট অনেক শেয়ার হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টিকে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না। ওই পোস্টের সূত্রেই দিল্লির একটি গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়ে কাজ করছেন। তাঁরাই ওই শিশুর জন্য কলকাতার ‘ব্রেস্ট মিল্ক ডোনার’ জোগাড় করে দেন। যা শুনছি, ওই শিশুর জন্য আরও মাতৃদুগ্ধ দাত্রীর প্রয়োজন রয়েছে।’’

Advertisement

ইউনিভার্সিটি অব হায়দরাবাদের গবেষক বৈদেহী দাস। বর্তমানে আছেন এ শহরেই। অন্য দিকে, টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর প্রাক্তনী মনিময়ী চক্রবর্তী গুয়াহাটি থেকে কলকাতা ফিরেছেন কিছু দিন আগেই। কোভিডের দ্বিতীয় পর্যায়ে, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকেই তাঁরা অক্সিজেন, শয্যা এবং রক্ত জোগাড়ের কাজে যুক্ত। এ সবের মধ্যেও ব্রেস্ট মিল্ক ডোনার খুঁজে, তালিকা বানিয়ে মানুষকে সাহায্য করার ভাবনা এই শহরে প্রথম আসে তাঁদের মাথায়। রাজ্যের মাতৃদুগ্ধ দানে আগ্রহী মায়েদের নিয়ে একটি তথ্যপঞ্জি তৈরি করেছেন তাঁরা দু’জনে মিলে। কারও প্রয়োজন হলে ওঁরাই যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছেন। আপাতত কলকাতা ও ভিন্ জেলা মিলিয়ে আট জন স্তন্যদাত্রী মা এই কাজে যোগ দিয়েছেন।
সামাজিক সুরক্ষার স্বার্থে তাঁদের ফোন নম্বর, নাম, ঠিকানা কোথাও শেয়ার করা হচ্ছে না। বৈদেহী বলেন, ‘‘আমরা মিল্ক ব্যাঙ্ক করছি না। ‘মধুর স্নেহ’ নামের মিল্ক ব্যাঙ্কটি এই শহরে একমাত্র, যেটি রয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে। যেখান থেকে হাসপাতালের রোগীদের শিশুকে মাতৃদুগ্ধ দেওয়া হয়। আমরা শিশুর প্রয়োজন অনুসারে তার পরিবারকে খবর (লিড) দিচ্ছি। আমাদের এই মুহূর্তে মিল্ক ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার মতো পরিকাঠামো বা পরিকল্পনা নেই। ভবিষ্যতে করলে জানাব।”

মনিময়ীর কথায়, ‘‘এমন ফোনও আসছে যার সঙ্গে স্তন্যপান করানো প্রয়োজন এমন শিশু কিংবা মাতৃদুগ্ধ দানে আগ্রহী মায়ের কোনও যোগ নেই। যেহেতু আমাদের পোস্টে ‘ব্রেস্ট’ শব্দটা আছে, তাই খুঁটিয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। আমরাও ফোন ধরতে বাধ্য হচ্ছি। এই ধরনের প্রয়াসে এমন বিকৃতমনস্ক মানুষের ফোন আসবে, জানতামই। তবুও আমরা পিছিয়ে যাব না।’’ কনফারেন্স কলের অপর প্রান্ত থেকে বৈদেহী বলেন, ‘‘তবে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক কম। আমরা তো জেনেশুনেই ফোন নম্বর সামাজিক মাধ্যমে দিয়েছিলাম। সে দিক থেকে সদর্থক ফোনই বেশি পেয়েছি। এমনও হয়েছে, স্বামীকে পাশে নিয়ে এক মহিলা কথা বলেছেন।”

তবে রক্তদান, প্লাজ়মা দানের মতো মাতৃদুগ্ধ দানের বিষয়টি নিয়ে সমাজ সহজ হবে কি না, তা সময়ই বলবে। যদিও সামাজিক লজ্জা কাটিয়ে অনেক প্রসূতিই ফোন করেছেন। অনেকে জানিয়েছেন, পাম্প করে মাতৃদুগ্ধ পাত্রে ভরে দান করতে চান। আবার সরাসরি শিশুকে দুগ্ধপান করাতেও কেউ কেউ রাজি। তাঁদের প্রত্যেকের নম্বর, মেডিক্যাল তথ্য নথিবদ্ধ করছেন দুই তরুণী।

বাঁকুড়ার কুড়ি দিনের শিশুটির মতো মাতৃহারা সন্তানদের জন্যও আপাতত ভরসা ‘ব্রেস্ট মিল্ক রিসোর্স নেটওয়ার্ক’ নামের এই ইনস্টাগ্রাম পেজ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement