ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় সুড়ঙ্গে জমে রয়েছে জল। নিজস্ব চিত্র
বৌবাজার এলাকায় বাড়ি ধসে পড়ার পর সুড়ঙ্গ নির্মাণকারী তাইল্যান্ডের সংস্থার কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মেট্রো রেল মহলেই।
কারণ, ওই সংস্থার যে ভারতীয় অংশীদারেরা এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদহের মধ্যে ওই সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ করছে, কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন তৈরির দায়িত্বও ছিল তাদের উপরে এবং ওই ভবনে নির্মাণগত বেশ কিছু ত্রুটি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। এ বার তাদের হাতে তৈরি সুড়ঙ্গেই ঘটে গেল বৌবাজার বিপর্যয়।
ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো সূত্রের খবর, টেন্ডারের মাধ্যমে অনেক বছর আগেই তাই সংস্থাটি এই দায়িত্ব পেয়েছিল। টার্মিনাল ভবন সংক্রান্ত অভিযোগ তখনও ওঠেনি। আবার সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মেট্রোপথ তারাই নির্বিঘ্নে তৈরি করেছে। কিন্তু তাতে গাফিলতির অভিযোগ এড়ানো যাচ্ছে না। বিশেষত যেখানে হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ নির্মাণ নির্বিঘ্নেই করেছিল শাপুরজি পালনজি গোষ্ঠীর পরিকাঠামো নির্মাণ সংস্থা। গঙ্গার নীচে সুড়ঙ্গ নির্মাণ ছাড়াও, হাওড়ায় পূর্ব রেলের লাইন, ডিআরএম ভবন, ব্রেবোর্ন রোডের একাধিক জীর্ণ বাড়ি এবং হেরিটেজ কাঠামো রক্ষা করেই সংস্থাটি সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে। তা হলে এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত সুড়ঙ্গ নির্মাণের ক্ষেত্রে সেই পেশাদারিত্বের অভাব ছিল কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে।
হাওড়া-ময়দান-এসপ্ল্যানেড সুড়ঙ্গের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল, টানেল বোরিং মেশিন চালানোর সময়ে যেখানেই জল, নরম মাটি, পুরনো বাড়ি সামলাতে হয়েছে, সেখানে আগেভাগে ব্যবস্থা নিয়েছিল শাপুরজি গোষ্ঠীর সংস্থাটি। ডিআরএম ভবন বা টি বোর্ড ভবনের নীচে যেমন জল ছিল, তেমন কেলভিন কোর্টের মতো পুরনো বাড়ি রক্ষা করাও ছিল চ্যালেঞ্জ। গঙ্গার নীচে সুড়ঙ্গ তো ছিলই। প্রতি ক্ষেত্রেই আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে তবেই টানেল বোরিং মেশিন চালানো হয়েছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সুড়ঙ্গ খননের আগে সামনের মাটি এবং তার প্রকৃতি সম্পর্কে যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য আগাম থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সয়েল প্রোফাইলিং-এর কাজ কতটা যত্ন সহকারে করা হয়েছিল, বৌবাজার অঞ্চলে কাজ শুরু করার আগে এলাকার মাটি অনুযায়ী টানেল বোরিং মেশিনে কতটা প্রয়োজনীয় ‘ক্যালিব্রেশন’ করা হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। মাটির নীচে থাকা জলের উৎস বা ‘অ্যাকুইফার’ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে বৌবাজারের ঘিঞ্জি এলাকায় কতটা গুরুত্ব সহকারে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।’’ মাটির প্রকৃতি ছাড়াও উপরে থাকা কাঠামোর শক্তি বিচার না করেই মেশিনের গতি বেশি রাখা হয়েছিল কি না সেই প্রশ্ন আগেই উঠেছে। কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার সংস্থার উপরে দ্রুত কাজ শেষ করতে চাপ দিয়েছিলেন কি না, প্রশ্ন সেটাও।
সুড়ঙ্গ খননের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন,, গত ৩১ অগস্ট বিকেলে টানেল বোরিং মেশিনের টেল শিল্ডের একটি ব্রাশ অকেজো হয়ে যায়। ওই ব্রাশ মূলত সুড়ঙ্গ খননের সময় উঠে আসা জল-কাদা বালিকে ভিতরে আসতে বাধা দেয়। ওই ব্রাশ বদলের সময়ে পরিস্থিতি আচমকা আয়ত্তের বাইরে চলে যায় বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে কেন আগেভাগে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি? সদুত্তর এখনও মেলেনি।
তাইল্যান্ডের সংস্থার আধিকারিকদের আপাতত একটাই কথা— সুড়ঙ্গে জলের মধ্যে পড়ে থাকা টানেল বোরিং মেশিন চণ্ডীকে না তোলা পর্যন্ত বিপর্যয়ের কারণ বলা সম্ভব নয়। আর কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষ বারবারই দাবি করছেন, প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করেই সুড়ঙ্গ তৈরি করা হচ্ছিল। তাঁদের আরও বক্তব্য, ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর রুটকে ভাগ করে টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। সেই মতো দু’টি সংস্থা কাজ পেয়েছে। সুতরাং সংস্থার বাছাই নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। বলেন, ‘‘সুড়ঙ্গ খননের আগে সামনের মাটি এবং তার প্রকৃতি সম্পর্কে যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য আগাম থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সয়েল প্রোফাইলিং-এর কাজ কতটা যত্ন সহকারে করা হয়েছিল, বৌবাজার অঞ্চলে কাজ শুরু করার আগে এলাকার মাটি অনুযায়ী টানেল বোরিং মেশিনে কতটা প্রয়োজনীয় ‘ক্যালিব্রেশন’ করা হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। মাটির নীচে থাকা জলের উৎস বা ‘অ্যাকুইফার’ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে বৌবাজারের ঘিঞ্জি এলাকায় কতটা গুরুত্ব সহকারে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।’’ মাটির প্রকৃতি ছাড়াও উপরে থাকা কাঠামোর শক্তি বিচার না করেই মেশিনের গতি বেশি রাখা হয়েছিল কি না সেই প্রশ্ন আগেই উঠেছে। কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার সংস্থার উপরে দ্রুত কাজ শেষ করতে চাপ দিয়েছিলেন কি না, প্রশ্ন সেটাও।
সুড়ঙ্গ খননের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন,, গত ৩১ অগস্ট বিকেলে টানেল বোরিং মেশিনের টেল শিল্ডের একটি ব্রাশ অকেজো হয়ে যায়। ওই ব্রাশ মূলত সুড়ঙ্গ খননের সময় উঠে আসা জল-কাদা বালিকে ভিতরে আসতে বাধা দেয়। ওই ব্রাশ বদলের সময়ে পরিস্থিতি আচমকা
আয়ত্তের বাইরে চলে যায় বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে কেন আগেভাগে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি? সদুত্তর এখনও মেলেনি।
তাইল্যান্ডের সংস্থার আধিকারিকদের আপাতত একটাই কথা— সুড়ঙ্গে জলের মধ্যে পড়ে থাকা টানেল বোরিং মেশিন চণ্ডীকে না তোলা পর্যন্ত বিপর্যয়ের কারণ বলা সম্ভব নয়। আর কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষ বারবারই দাবি করছেন, প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করেই সুড়ঙ্গ তৈরি করা হচ্ছিল। তাঁদের আরও বক্তব্য, ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর রুটকে ভাগ করে টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। সেই মতো দু’টি সংস্থা কাজ পেয়েছে। সুতরাং সংস্থার বাছাই নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর।