কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিখোঁজ শিশুর মা, রেহেনা-কন্যা আরশি। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
সকালে আনন্দপুর থানা এলাকায় রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে উদ্ধার হয়েছিল নারকেলডাঙা এলাকার বাসিন্দা এক মহিলার দেহ। তাঁর সঙ্গে যে পাঁচ বছরের নাতি ছিল, খোঁজ নেই সেই শিশুর। বুধবার রাতে সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে নারকেলডাঙা থানা ঘেরাও করলেন তাঁর পরিজন ও প্রতিবেশিরা। তাঁদের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে রেহেনা বেগম ওরফে বেবি-র (৫৫) খোঁজ না মেলায় পুলিশে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের কথায় গুরুত্ব দেয়নি পুলিশ। তাঁদের আরও দাবি, দ্রুত শিশুটিকে খুঁজে বার করুক পুলিশ। আর জি কর-কাণ্ডের আবহে ফের শহরে খুনের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ আনন্দপুর থানা এলাকার নোনাডাঙার সবুজপল্লিতে রাস্তার পাশে মহিলার দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরনে ছিল সাদা চুড়িদার। দেহ ভেসে যাচ্ছিল রক্তে। মুখ এবং মাথার পিছনে ছিল বড়সড় আঘাত। আশপাশেও দেখা যায় রক্তের দাগ। খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। প্রাথমিক ভাবে দুপুর পর্যন্ত মৃতার পরিচয় জানা যায়নি। তবে দেহে একাধিক আঘাত দেখে তাঁকে যে খুন করা হয়েছে, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন তদন্তকারীরা। পরে মহিলার পরিচয় জানতে পারে পুলিশ। এই ঘটনায় ভিকি সাউ নামে এক গাড়িচালক-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে শিশুটি কোথায়, জেরায় তার কোনও সদুত্তর ধৃতের থেকে মেলেনি বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতা নারকেলডাঙা থানা এলাকায় দুই নাতি এবং মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। প্রতি মাসে আনন্দপুর থানা এলাকায় ভাড়াটেদের থেকে ভাড়া আদায়ের জন্য যেতেন রেহেনা। মাস দুই আগে ভিকি তাঁরই বাড়িতে ভাড়ায় থাকতে শুরু করে। সে নাম ভাঁড়িয়ে ভাড়া নিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার সাড়ে ৩টে নাগাদ ভিকির গাড়িতেই আনন্দপুর যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন রেহেনা। সঙ্গে ছিল নাতিও। রাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রেহেনার কথাও হয়। তখন ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফিরবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরে আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। মৃতার এক আত্মীয় বলেন, ‘‘ফোনে যখন কথা বলি, তখন জানিয়েছিলেন যে, গাড়িতে ফিরছেন। কিন্তু তার পরেও না ফিরলে আবার ফোন করি। দেখা যায় সেটি বন্ধ।’’ তার পরে এ দিন সকালে দেহটি উদ্ধার হয়।
প্রাথমিক ভাবে মহিলাকে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে এবং ছুরি দিয়ে গলায় কোপ মেরে খুন করা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। ভিকিই গাড়ির ভিতরে ছুরি দিয়ে মেরেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি। অন্য অভিযুক্ত যুবক দেহটি ফেলে যেতে সাহায্য করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তপসিয়া এলাকা থেকে ভিকিকে গ্রেফতার করা হয়। তার গাড়ির ভিতর থেকে রক্তমাখা বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার হয়েছে দাবি পুলিশের। পুলিশি জেরায় ধৃত জানিয়েছে, রাতে তার বাড়ি ফেরার তাড়া থাকলেও দেরি করছিলেন রেহেনা। পুলিশের দাবি, তিনি কথা না শোনায় রাগের মাথায় খুন করেছে বলে জানিয়েছে ধৃত। রেহেনার নাতির খোঁজে আনন্দপুরের ঘটনাস্থল ও সংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। আশেপাশের খাল ও জলা জমিগুলিতেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
রাত পর্যন্ত শিশুটির খোঁজ না মেলায় রেহেনার পরিজন ও প্রতিবেশীরা নারকেলডাঙা থানা ঘেরাও করেন। পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলার পাশাপাশি শিশুটির খোঁজ না মেলা পর্যন্ত রেহেনার দেহ তাঁরা নেবেন না বলেও জানান। রেহেনার মেয়ে ও শিশুটির মা আরশি বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘ মা চলে গিয়েছেন, বাচ্চাটাকে অন্তত ফিরিয়ে দাও।’’ রাত আরও বাড়তে থানার সামনের রাস্তা অবরোধ করে উঠল সুবিচারের দাবিও।