ধন্যবাদ জানিয়েও কটাক্ষ সুকান্তর। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। গত সোমবার তাঁকে ফোন করে স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঠিয়েছেন ফুল-মিষ্টিও। এ বার নেটমাধ্যমে পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেন সুকান্ত। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলে দিলেন খোঁচাও।
গত শনিবার সুকান্তর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা যায়। রবিবার তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সুকান্তর জ্বর না এলেও সর্দি-কাশি আছে। তাঁকে হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। সোমবার সুকান্তর মোবাইলে ফোন আসে মুখ্যমন্ত্রীর। মমতা খোঁজ নেন, কেমন আছেন সুকান্ত। সৌজন্যের আবহে দু’জনের মধ্যে মিনিট তিনেক কথা হয় বলে জানা গিয়েছে।
এ বার মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে নেটমাধ্যমে পোস্ট দিলেন সুকান্ত। সোমবার গভীর রাতে সুকান্তর ফেসবুক অ্যাকাউন্টের দেওয়ালে একটি পোস্ট ভেসে ওঠে। তাতে স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়ায় সুকান্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তবে এখানেই শেষ নয়। ওই পোস্টেরই শেষ অংশে সুকান্ত লিখেছেন, একই রকম রাজনৈতিক সৌজন্য মুখ্যমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে দেখালে তিনি আরও খুশি হতেন। আর পোস্টের এই অংশ নিয়েই শুরু হয়েছে নয়া গুঞ্জন। এ কোন প্রসঙ্গের অবতারণা করলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি?
একুশে নীলবাড়ির লড়াইয়ের সময় প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী-সহ যুযুধান রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভাষার ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করেন, তাতে ঘৃতাহুতি পড়ে, ভোট প্রচারে রাজ্যের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘দিদি ও দিদি’ ডাকে। কী ভাবে প্রধানমন্ত্রী কোনও রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে এমন হাঁক ছাড়তে পারেন, তা নিয়ে তৃণমূলের পাশাপাশি সরব হয়েছিল বাম, কংগ্রেস মায় নাগরিক সমাজও। যদিও ভোট মেটার পরও সেই মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেনি গেরুয়া শিবির। একই ভাবে বিজেপি-রও অভিযোগ ছিল, মাত্রা ছাড়াচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। ভোট মিটতেই স্বাভাবিক নিয়মেই মিইয়ে গিয়েছিল সেই উত্তাপের পারদও।
বর্তমান অতিমারি পরিস্থিতিতে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি যখন করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে, তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর তাঁকে ফোন করে স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেওয়াকে বাংলার রাজনৈতিক সৌজন্যের ঐতিহ্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। পাল্টা নেটমাধ্যমে পোস্ট করে ধন্যবাদ জানানোতেও সেই সৌজন্যেরই যোগ্য সঙ্গত দেখছেন তাঁরা। কিন্তু শেষাংশে প্রধানমন্ত্রীকে টেনে আনার প্রসঙ্গ কি সৌজন্যের সামগ্রিক আবহের তাল কাটল? প্রশ্নটা সেখানেই।