প্রতিপক্ষ: (বাঁ দিকে) টিফো নিয়ে গেটের বাইরে পুলিশের সঙ্গে বচসা। (ডান দিকে) সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মোহনবাগান গ্যালারিতে পোস্টার হাতে সমর্থকেরা। ছবি: সংগৃহীত
ইস্টবেঙ্গল হেরেছে। তবে গ্যালারি থেকে তাদের বার্তার রেশ থেকে গিয়েছে এখনও। মোহনবাগান জিতেছে। কিন্তু অভিযোগ, তাদের কাঙ্ক্ষিত বার্তা পাঠানোর আয়োজন আটকে দিয়েছে বিধাননগর পুলিশের ‘ডিফেন্স’।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে লাল-হলুদের বাঁটুলের ‘টিফো’র মতোই সবুজ-মেরুনের ঝুলিতেও তৈরি হয়েছিল অভিনব ‘টিফো’। সরাসরি এনআরসি বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কিছু না বলেও যা ধর্মের নামে দেশকে বিভাজনের প্রতিবাদে সরব। মোহনবাগানিদের একাংশের ক্ষোভ, ‘‘আমাদের অন্য একটি টিফো নজর কাড়লেও সব থেকে পছন্দের টিফোটাই পুলিশ ঢুকতে দিল না!’’ কী ছিল সেই টিফোয়? শিলিগুড়ির স্কুলশিক্ষক প্রসেনজিৎ সরকার বা সোদপুরের গ্রাফিক ডিজ়াইনার শুভম দাসেরা বলছেন, ‘‘আমরা দেশের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শটুকুই তো টিফোয় রেখেছিলাম। বড় ম্যাচের মঞ্চ ভেবেই টাকা তুলে খরচ জোগাড় করে তৈরি করা। এরা সব পণ্ড করে দিল।’’ লম্বায় ৬০ ফুট, চওড়ায় ১০০ ফুট ওই পোস্টারে মোহনবাগান জার্সিধারী তরুণের পিছনে চিরাচরিত পোশাকে জনৈক হিন্দু, মুসলিম, শিখ এবং খ্রিস্টান। তাতে লেখা, ‘ডিভাইডেড বাই রিলিজিয়ন, ইউনাইটেড বাই মোহনবাগান (ধর্ম ভাগ করেছে, মিলিয়েছে মোহনবাগান)’।
বাঁটুলকে দিয়ে ইস্টবেঙ্গলের এনআরসি-বিরোধী বার্তা বা পোস্টারের ঘোষণা, ‘রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে নয়’-এর মতোই তাদের টিফোতেও দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পটভূমিতে ঐক্যের বার্তা দিতে চেয়েছিল মোহনবাগান। কিন্তু পুলিশের তা ‘পছন্দ’ হয়নি। মোহনবাগান অনুরাগীদের বজবজের একটি গোষ্ঠীর ‘ধর্ম যার তার, ফুটবল সবার’ লেখা পোস্টারও পুলিশ মাঠে ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ। সে দিন সল্টলেক স্টেডিয়ামের তিন নম্বর গেটে কর্তব্যরত বিধাননগর উত্তর থানার ওসি সোমদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কী সব মন্দির-মসজিদের কথা ছিল ওদের পোস্টারে। আমি একা নই! আমার উপরের কর্তাদেরও তা ঠিক বলে মনে হয়নি।’’ বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনার কথায়, ‘‘এটা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত। আমার কিছু বলার নেই।’’
‘মেরিনার্স বেসক্যাম্প’ বলে মোহনবাগানিদের একটি ফেসবুক পেজে অবশ্য পুলিশের সমালোচনার ঝড়। ‘‘আমি পুলিশ হলেও ভবানীপুরের ছেলে, পাঁড় মোহনবাগান’’ বলে অভিযোগ এড়াচ্ছেন সোমদেববাবু। আর মোহনবাগানের যে টিফো নিয়ে পুলিশ মহলে বিতর্ক, তার নেপথ্যে অন্যতম সংগঠক প্রসেনজিৎ কিন্তু কাঠ বাঙাল। বাবা ময়মনসিংহের, মা চট্টগ্রামের। মোহনবাগান অন্ত-প্রাণ ছেলেটি যেন ‘দত্যিকুলে প্রহ্লাদ’। তাতে কী? গোষ্ঠ পাল, চুনী-কেম্পিয়াদের যুগ থেকে বরাবরই দেশের নানা প্রান্তের সেরারা সবুজ-মেরুন জার্সি পরেছেন— মনে করাচ্ছেন এ প্রজন্মের মোহনবাগানি।
এ যুগের ইস্টবেঙ্গল সগর্বে মাঠে ‘উদ্বাস্তু’ পরিচয় মেলে ধরে পোস্টারে। প্রতিপক্ষকে ‘কাঁটাতারের দাগ’ নিয়ে মোহনবাগানের খোঁচা এখনও বন্ধ হয়নি। কিন্তু তার বদলে সবুজ-মেরুনের সর্বভারতীয় মহিমা মেলে ধরতেই উৎসুক বহু সমর্থক। কল্যাণীতে পরের ম্যাচে পুলিশের রুখে দেওয়া টিফো নিয়ে ফের যাবেন, ঠিক করে ফেলেছেন তাঁরা।
আইন করে দেশে ফাটল ধরানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে দেখা যাচ্ছে অনেকটাই এক সুর মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের।