—প্রতীকী চিত্র।
গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে এ বার বিধাননগরেও অবৈধ নির্মাণের গতিপ্রকৃতির উপরে নজর দিতে চাইছে পুলিশ।
সম্প্রতি সল্টলেকের আইবি ব্লকে একটি কোঅপারেটিভ আবাসনের একতলায় বাণিজ্যিক কেন্দ্রকে বেআইনি নির্মাণ বলে দাবি করে বাসিন্দারা পুরসভা ও পুলিশ— দু’তরফের কাছেই অভিযোগ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও শুরুর দিকে কোনও তরফ থেকেই তাঁরা সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ।
আবার, বিধাননগরের নয়াপট্টিতে একটি ক্লাবকে বেআইনি ঘোষণা করেছিল পুরসভা। একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট ক্লাবটি ভাঙতে বললেও সেই নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে হিমশিম খায় পুর প্রশাসন ও পুলিশ। ক্লাব ভাঙতে বাধা দেওয়ার পিছনে মদতের অভিযোগ উঠেছিল পুরপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে। তিনি পুরসভার বিরুদ্ধে মামলা করেও বহাল তবিয়তে থেকেছেন।
পিছিয়ে নেই রাজারহাট এলাকাও। সেখানকার ২, ৩, ৪, ৫ কিংবা ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে একাধিক বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ পৌঁছেছে বিধাননগর পুরসভায়। বাগুইআটির সাহাপাড়া, ধানমাঠ কিংবা দেশবন্ধুনগরের মতো এলাকায় নির্ধারিত মাপের রাস্তা না থাকা সত্ত্বেও ওই সব এলাকায় পাঁচ, ছয়, এমনকি সাততলা পর্যন্ত বহুতল তৈরির অভিযোগ উঠছে অনেক দিন ধরে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, শাসকদলের নেতাদের একাংশের মদতে এত দিন সব কিছুই হয়ে এসেছে। মুখ বুজে ছিল প্রশাসনও। বেআইনি নির্মাণের মোকাবিলায় দায় ঠেলাঠেলি চলত পুলিশ ও পুরসভার মধ্যে। তাই নাগরিকদের প্রশ্ন, গার্ডেনরিচে বাড়ি ভেঙে দুর্ঘটনা না ঘটলে প্রশাসন এতটা সক্রিয় হত কি?
পুরসভা সূত্রের খবর, তাদের এলাকায় কত বেআইনি বাড়ি রয়েছে, কতগুলিকে নোটিস পাঠানো হয়েছে, কতগুলির বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে— এমন বিভিন্ন তথ্য সম্প্রতি চেয়ে পাঠিয়েছে বিধাননগর পুলিশ। বিধাননগর পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এত দিন নির্মাণ সংক্রান্ত সমস্যায় পুরসভা না বললে পুলিশ হস্তক্ষেপ করত না। কিন্তু এ বার থেকে অবৈধ নির্মাণের কোনও অভিযোগ এলে পুলিশ পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। থানাগুলিকে তেমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
উল্লেখ্য, গার্ডেনরিচের বিপর্যয়ের পরে বিধাননগর পুরসভা তাদের ছ’টি বরোয় থানাভিত্তিক বিশেষ পর্যবেক্ষক-দল তৈরি করেছে। যারা এলাকায় ঘুরে নির্মীয়মাণ বাড়ির উপরে নজর রাখবে। যে কোনও ধরনের বেআইনি নির্মাণ চোখে পড়লে পুরসভা ও পুলিশকে জানাবে সংশ্লিষ্ট দলটি।
পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, ন’মাস আগে তাঁরা একটি কমিটি তৈরি করে বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল ব্যাঙ্ক ঋণের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের পুরসভার থেকে বিশেষ ছাড়পত্র নেওয়ার বিষয়টি।
বিধাননগর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বরো-ভিত্তিক বিশেষ পর্যবেক্ষকদের দলটি দ্রুত কাজ শুরু করবে। যে ৩০টি নির্মাণের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছিল, সে বিষয়ে পুলিশকে জানানো হবে। তা ছাড়া, পুর আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে যে ১৫০টি নির্মাণকে কাজ বন্ধের নোটিস পাঠানো হয়েছিল, সেই নির্মাণগুলির কী অবস্থা, তা-ও নির্মাণস্থলে পৌঁছে দেখবেন পুরসভার পর্যবেক্ষকেরা।
উল্লেখ্য, কর্পোরেশন হলেও বিধাননগরের লোকবল এবং পরিকাঠামো কলকাতা পুরসভার মতো নয়।বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে অভিযান, দুয়ারে সরকার কিংবা রাস্তায় ভেঙে পড়া গাছ সরানোর মতো কাজ সেখানে দুই থেকে তিন জন আধিকারিকের নেতৃত্বেই হয়ে থাকে। ফলে, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার কাজ কত দিন চালানো সম্ভব হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
যদিও বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশ যদি নিজে থেকে এগিয়ে আসে, তার চেয়ে ভাল কিছু হয় না। আমরা তো চাই, বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে সবাই পুরসভাকে সাহায্য করুন।’’