দূষণের এই ছবি বদলাতেই বিকল্পের খোঁজ। ছবি: শৌভিক দে।
কলকাতার ধাঁচে যথেচ্ছ থার্মোকলের পাতা, প্লেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে বিধাননগর পুরসভা। পুরসভার তরফ থেকে সল্টলেকে বিভিন্ন ব্লক কমিটির কাছে আবেদন করা হবে, যাতে কমিউনিটি হলগুলিতে সামাজিক অনুষ্ঠানে থার্মোকলের ব্যবহার না করা হয়। কিন্তু পরিকল্পনা করা হলেও বাস্তবে তার কতটা প্রতিফলন ঘটবে তা নিয়ে সংশয়ে বাসিন্দারা। তার নজির মিলল সল্টলেকের মেলা প্রাঙ্গণে। ব্রিগেডের সমাবেশের জন্য সেখানে কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। খাবারের জন্য সেখানে সরবরাহ হয়েছে থার্মোকলের প্লেটে।
মেলা প্রাঙ্গণে কর্মরত সমর্থকদের কথায়, থার্মোকলের প্লেটের দাম কম। তার বদলে ফাইবারের তৈরি কিংবা সাধারণ প্লেট ব্যবহার করলে খরচ অনেকটা বেড়ে যায়। আবার শালপাতা কিংবা কাগজের প্লেটে খাবার দেওয়া বা খাওয়া মুশকিল। তাই এই থার্মোকলের ব্যবহার করছেন তাঁরা।
মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজকদের একাংশের মতও এমনই। এমনকি খোদ দমকলমন্ত্রী তথা বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুও একই যুক্তি দিয়েছেন। তবে তিনি জানান, পরে নিশ্চিত ভাবেই বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের কথায়, কয়েক হাজার মানুষ কয়েক দিন ধরে খাওয়াদাওয়া করবেন। এত সংখ্যায় পরিবেশবান্ধব পাত্রের ব্যবস্থা করা মুশকিল।
সল্টলেক মেলা প্রাঙ্গণে থার্মোকলের পাতায় চলছে খাওয়া। ছবি: শৌভিক দে।
তমাল বসু নামে বিধাননগরের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘আমরাও তো একই সমস্যার কথা বলছি। তবে কী ভাবে থার্মোকল থেকে দূষণ রোধ করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে।’’ বাসিন্দাদের মত, যাঁরা দূষণ আটকাতে চাইছেন তাঁদের সমস্যার আরও গভীরে গিয়ে ভাবতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত কোনও ভাবেই বর্তমান ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ব্যবহারে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে বিধাননগর পুরসভা। সূত্রের খবর, শুধুমাত্র প্লাস্টিক তুলতেই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে পুরসভার। ইতিমধ্যে বাজারে ৫০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে অভিযান শুরু করেছে পুরসভা।
এক পুরকর্তা জানান, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে থার্মোকলের পাতা, বিভিন্ন উপহার সামগ্রী রাখার থার্মোকলের পাত্র বা প্যাকিংবাক্সের সঙ্গে ব্যবহার করা থার্মোকলকে ঘিরে যেমন দূষণ হচ্ছে, তেমন ওই থার্মোকলে জল জমে তা মশার আঁতুড়ঘরেও পরিণত হচ্ছে।
৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় জানান, বিধাননগরের বিভিন্ন ব্লকে কমিউনিটি হল রয়েছে। তাই ব্লক কমিটিকে বলা হবে, যাতে কমিউনিটি হলে কোনও অনুষ্ঠানে থার্মোকলের ব্যবহার না করা হয়। তা সত্ত্বেও কমিউনিটি হলগুলিতে থার্মোকলের ব্যবহার করা হলে ব্লক কমিটিকে নোটিস পাঠানো হবে।
বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস জানা বলেন, ‘‘থার্মোকল বা প্লাস্টিকের জেরে নিকাশি ব্যবস্থা ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’’ পুরকর্মীদের একাংশের কথায়, টেলিভিশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামগ্রীও থার্মোকলের মোড়কেই সরবরাহ করা হয়। সেগুলি যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। অনেক সময়েই সে সব ফাঁকা জমি কিংবা ঝোপ-জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়। পরে তুলে নিয়েও যাওয়া হয় না। বৃষ্টির দিনে সেখানে জল জমেই সমস্যা বাড়ে।
মেয়র পারিষদ প্রণয় রায় জানান, থার্মোকলে জমা জল থেকেই জন্ম হচ্ছে মশার। সেই সঙ্গে নিকাশি রুদ্ধ হওয়ার সমস্যা তো রয়েছেই। পুরনিগম এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে তার প্রমাণও মিলেছে। অবিলম্বে থার্মোকলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) রহিমা বিবি (মণ্ডল) জানান, দূষণ রোধে থার্মোকলের ব্যবহারও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কাউন্সিলরদের এ বিষয়ে জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি ব্লক কমিটিগুলির কাছেও আবেদন করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘বিকল্প হিসেবে শালপাতা বা কাগজের পাতার ব্যবহার বাড়াতে হবে। দ্রুত সমস্যা মিটবে না, সময় লাগবে।’’