বিধাননগর পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
বিধাননগর মেলা করার জন্য প্রতি বছর সেই মেলা প্রাঙ্গণ বিধাননগর পুরসভাকে বিনামূল্যে দেয় রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর। চলতি বছরে সেই প্রাঙ্গণে বিধাননগর মেলা করতে পুরসভা বাইরের সংস্থাকে ডাকার পরিকল্পনা করেছে। এর জন্য গত ১৭ নভেম্বর পুরসভার
তরফে ই-দরপত্র ডাকা হয়েছে তাদেরই ওয়েবসাইটে। যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে পুর অন্দরে। ক্ষুব্ধ মেয়র পারিষদ ও পুরপ্রতিনিধিদের বক্তব্য, তাঁদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে দরপত্র ডেকেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। এমনকি, এ ভাবে মেলা করলে বিনামূল্যে পুরসভাকে মাঠ দেওয়া যাবে না বলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন খোদ পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। যদিও মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সময়াভাবেই এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে, আগামী ৩০ নভেম্বর বোর্ডের বৈঠকে সদস্যদের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পুর প্রশাসন এই দরপত্র ডাকার পরেই তা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় পুর মহলে। মেয়র পারিষদ রাজেশ চিরিমার বাইরের সংস্থার হাতে মেলা তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলে এবং সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে ইতিমধ্যেই মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী-সহ একাধিক পুর আধিকারিককে চিঠি পাঠিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত দু’বছর বিধাননগর মেলার দায়িত্বে ছিলেন রাজেশই। তিনি বলেন, ‘‘এই মেলা পুরসভাই করে থাকে। আমার কাজে কোনও ত্রুটি থাকলে অন্য কাউকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হোক। আমি কিছু বিষয় নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছি। পুর কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, এত বড় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মেয়র পরিষদের বৈঠকে এবং বোর্ডের কাছে সেই প্রস্তাব রাখা। বাইরের সংস্থা কোনও ভুল করলে তার দায় কি পুরসভা এড়াতে পারবে?’’
সূত্রের খবর, রাজেশের চিঠির পরে গত শুক্রবার মেয়র পরিষদের বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে রাজেশ, ডেপুটি মেয়র অনিতা মণ্ডল-সহ অন্য মেয়র পারিষদেরা জানতে চান, কেন সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছাড়াই মেলা বাইরের সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দরপত্র ডাকা হল? এই প্রসঙ্গে পুর কর্তৃপক্ষ জানান, এ বার দেরিতে উৎসবের মরসুম শুরু হওয়ায় প্রচুর ছুটি ছিল। কোনও কাজ করা যায়নি। তার উপরে কলকাতা বইমেলার কারণে বিধাননগর মেলা এগিয়ে আনতে হচ্ছে। যে কারণে সবটা গুছিয়ে ওঠা যায়নি। তবে একই সঙ্গে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলার প্রচার, ডগ শো কিংবা পুষ্প প্রদর্শনী-সহ একাধিক বিভাগের নিয়ন্ত্রণ পুরসভার হাতেই থাকবে।
ডেপুটি মেয়র অনিতা বলেন, ‘‘আমি মেলার দায়িত্বে নেই। কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় সব দিক খতিয়ে দেখেই পরিকল্পনা করছেন। তবে দরপত্র ডাকা হয়ে যাওয়ার পরে বিষয়টি জানতে পারলাম, এটাই খারাপ লাগছে।’’ পুরসভার এই পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, ‘‘আমি শুনেছি, এ বার বিধাননগর মেলা বাইরের সংস্থার হাতে দিতে চাইছে পুরসভা। এমন হলে মেলার মাঠ বিনামূল্যে পুরসভাকে দেওয়া যাবে না।’’
যদিও মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, দরপত্র ডাকা হয়ে গেলেও এই পরিকল্পনায় বোর্ডের সায় না থাকলে আর এগোনো হবে না। তিনি বলেন, ‘‘বোর্ডের সদস্যদের মত নিয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। কলকাতা বইমেলা এসে যাচ্ছে। উৎসবের কারণে দীর্ঘ ছুটি থাকায় বিধাননগর মেলার প্রস্তুতির কাজ এগোনো যায়নি। তাই এমন পরিকল্পনা। এই মেলা নিয়ে বিধাননগরবাসীর আবেগ রয়েছে। এখান থেকে রবীন্দ্র ভবন তৈরির খরচ ওঠে। যা-ই করা হোক, সবটাই আইন মেনে করা হবে।’’