ঝামেলা: ময়দান স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পতাকা-পোস্টার নিয়ে স্লোগান। নিজস্ব চিত্র
রাস্তায় ও রেলপথে ধর্মঘট সমর্থকদের দাপাদাপি দিয়েই শুরু হয়েছিল দিনটা। নিত্যযাত্রীরা ভেবেছিলেন, পাতালপথে নিশ্চয়ই তেমন কিছু ঘটবে না। কিন্তু তাঁদের সেই ভুল ভাঙল বেলা গড়াতেই। গায়ের জোরে ধর্মঘট সফল করতে এর পরে মেট্রো স্টেশনেও ঢুকে পড়ে ধর্মঘটবাহিনী। নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়েই।
মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতা পুলিশ এবং আরপিএফের চোখে ধুলো দিয়েই ময়দান মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পতাকা, পোস্টার নিয়ে রীতিমতো স্লোগান দিতে দিতে নেমে পড়েন ধর্মঘট সমর্থকদের একাংশ। তাঁরা স্টেশনের প্রবেশপথও কিছু ক্ষণ আটকে রাখেন বলে অভিযোগ।
মেট্রো সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল ৩টে ৪০ মিনিট নাগাদ ময়দান স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢোকার গেট আটকে রীতিমতো পতাকা, পোস্টার নিয়ে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-র জনা ২০-২৫ সমর্থক। কিছু ক্ষণের মধ্যে প্ল্যাটফর্মে দমদমমুখী একটি ট্রেন ঢুকলে ধর্মঘটীরা উঠে পড়েন চালকের কেবিনেও। ঘটনার আকস্মিকতায় উত্তেজনা ছড়ায় মেট্রোর যাত্রীদের মধ্যেও। যদিও কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঘোর কাটিয়ে আরপিএফ এবং কলকাতা পুলিশের বিশাল বাহিনী তাঁদের কাবু করতে ছুটে আসে। মিনিট কয়েকের মধ্যে তাঁদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দিনের এই ঘটনায় ২৩ জন সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
নিরাপত্তায় মো়ড়া স্টেশনে ধর্মঘটীরা পৌঁছলেন কী ভাবে?
মেট্রো সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ জনা ১০-১২ ধর্মঘট সমর্থক পরিকল্পিত ভাবে যাত্রী সেজে একে একে টোকেন কিনে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনে ঢোকেন। তাঁদের হাতে কিছু না থাকায় মেট্রো রেল পুলিশ বা রেলরক্ষী বাহিনীর আধিকারিকদের কাউকে সন্দেহ হয়নি। কিন্তু প্রত্যেকের পকেটেই পতাকা ও পোস্টার ছিল বলে অভিযোগ। পরে সকলে আলাদা ভাবে কবি সুভাষমুখী একটি মেট্রোয় চেপে ময়দানে পৌঁছন। একই সময়ে তাঁদের আর একটি দলের লোকজন ময়দান স্টেশনের উত্তর প্রান্তের গেট দিয়ে টোকেন কিনে যাত্রী সেজে প্ল্যাটফর্মে ঢোকেন।
ট্রেনে ওঠার চেষ্টা ধর্মঘটীদের। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
দু’টি দলের সদস্যেরা এক জায়গায় জড়ো হতেই শুরু হয় ‘অপারেশন’। প্ল্যাটফর্মের গেট আটকে স্লোগান দিতে দিতে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করে একটি দল। অন্য একটি দল দমদমমুখী ট্রেনে চালকের কেবিনে উঠে পড়ে স্লোগান দিতে থাকে।
ঘটনার আকস্মিকতায় আরপিএফ এবং মেট্রোর কর্মীরা হতচকিত হয়ে পড়েন। মোটের উপরে ফাঁকা মেট্রো স্টেশনে এ ভাবে ধর্মঘট সমর্থকদের আছড়ে পড়তে দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের মধ্যে হুলস্থুল পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে খবর যায় লালবাজারে পুলিশের কন্ট্রোল রুমে।
কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশের বিশাল বাহিনী এবং পার্ক স্ট্রিট থেকে আরপিএফ কর্মীরাও ছুটে আসেন। তাঁরাই বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেন। মেট্রো স্টেশনে হাঙ্গামা বাধানোর অভিযোগে পুলিশ আইএনটিইউসি-র ২৩ জন সদস্য-সমর্থককে গ্রেফতার করে।
যে ভাবে এ দিন বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তার ঘেরাটোপ টপকে মেট্রোর প্ল্যাটফর্মের ‘টিকেটিং জোন’-এ পৌঁছে যান, তাতে অনেকেই বিস্মিত। এই ঘটনায় কলকাতা মেট্রোর নিরাপত্তায় শিথিলতার দিকটাই ফের প্রকট হয়েছে বলে মনে করছেন যাত্রীদের একাংশ। সাম্প্রতিক অতীতে এ ভাবে মেট্রো স্টেশনে কখনও রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের ঢুকে পড়তে দেখা যায়নি বলেই খবর। তবে অতীতে এক বার বন্ধ সমর্থকেরা মেট্রো স্টেশনের শাটার নামিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও তাঁরা ভিতরে ঢোকার দুঃসাহস করেননি। রাজনৈতিক আন্দোলনের আঁচ সড়ক বা রেলপথে অহরহ পড়লেও মেট্রো এত দিন এ সব থেকে মুক্ত ছিল। এ দিনের ঘটনায় অবশ্য সেই গর্বও ঘুচল বলেই মনে করছেন যাত্রীদের একটি বড় অংশ।
এ দিন বিক্ষোভের জেরে মিনিট কয়েক মেট্রো চলাচল ব্যাহত হয়। যদিও মেট্রোর কর্তাদের দাবি, কয়েক জন আচমকা স্টেশনে ঢুকে প়ড়েছিলেন। তাঁদের ঠিক সময়ে আটকে দেওয়ায় ট্রেন চলাচলে কোনও প্রভাব পড়েনি। এ দিন সকাল থেকে ঘোষিত সময়ে মেট্রো পরিষেবা শুরু হলেও অধিকাংশ ট্রেনে যাত্রী-সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় অনেকটাই কম ছিল।