Ligature Material

গুগলে ‘লিগেচার মেটিরিয়াল’ সার্চ, নিউটাউনের আইনজীবী খুনে দোষী সাব্যস্ত স্ত্রী অনিন্দিতা

২০১৮ সালে ২৪-২৫ নভেম্বর রাতে নিজের ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় মেলে রজতকে। অনিন্দিতা আত্মহত্যার তত্ত্ব খাড়া করলেও তা ধোপে টেকেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:৫৩
Share:

নিহত আইনজীবী রজতকুমার দে ও অনিন্দিতা।

গুগলে সার্চ করা ‘লিগেচার মেটিরিয়াল’- কথাটি শেষ পর্যন্ত অকাট্য প্রমাণ হয়ে দাঁড়াল খুনের মামলার বিচারে। সেই সঙ্গে অভিযুক্তের মোবাইল থেকে উদ্ধার একের পর এক হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজকে প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করে বিচারক অভিযুক্তকে দোষী ঘোষণা করলেন।

Advertisement

সোমবার নিউটাউনের আইনজীবী রজতকুমার দে-র খুনের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতাকে খুন এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। বুধবার সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক।

২০১৮ সালে ২৪-২৫ নভেম্বর রাতে নিউটাউনে নিজের ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় রজতবাবুকে। তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা প্রথমে দাবি করেছিলেন যে তাঁর স্বামী আত্মহত্যা করেছেন। পরে তাঁর বয়ানে অনেক অসঙ্গতি দেখা যায়। রজতের দেহেও অনেক আঘাতের চিহ্ন মেলে, ময়নাতদন্তে যা আপাত ভাবে অনিন্দিতার করা আত্মহত্যার দাবিকে সমর্থন করে না। পরবর্তীকালে অনিন্দিতার বক্তব্যে অসঙ্গতি এবং পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পুলিশ অনিন্দিতাকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

আরও পড়ুন: মোদী-মমতা-সনিয়া থেকে তেন্ডুলকর, সবার উপর গোপন নজরদারি চিনের!

গত প্রায় সাত মাস ধরে চলা বিচার প্রক্রিয়ায় বিশেষ সরকারি আইনজীবী ছিলেন বিভাস চট্টোপাধ্যায়। কারণ এই মামলায় বৈদ্যুতিন তথ্যপ্রমাণই গোটা বিচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। বিভাসবাবু বলেন, ‘‘অনিন্দিতার কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত মোবাইল থেকে উদ্ধার তথ্য এই মামলার বিচারে মূল প্রমাণ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।” সরকার পক্ষের আইনজীবীরা ৩০ জনের সাক্ষ্য পেশ করেন বিচারকের কাছে। অনিন্দিতার পক্ষে সাক্ষ্য দেন একজন। তবে বিভাসবাবুর কথায়, প্রমাণ হিসাবে যে ৬০টি নথি আদালতে পেশ করা হয়েছে তার মধ্যে একটা বড় অংশ অভিযুক্তের ফেসবুক পোস্ট এবং হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ।

অনিন্দিতার করা হোয়াটস অ্যাপ থেকে প্রমাণিত হয় মৃত্যুর সময়ে নিউটাউনের ফ্ল্যাটে রজত এবং অনিন্দিতা ছাড়া কেউ ছিলেন না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রমাণ করে মোবাইলের চার্জার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করা হয়েছিল রজতকে। তার আগে মারধরও করা হয়। রজতের মাথার দু’পাশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টে।

বিচার পর্বে বিশেষ সরকারি আইনজীবী, অনিন্দিতার হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দেখিয়ে আদালতে জানিয়েছিলেন, অনিন্দিতা রজতের রোজগারে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি দীর্ঘদিন বিবাহ বিচ্ছেদ চাইছিলেন। কিন্তু রজত তাঁর শিশুপুত্রের কথা ভেবে বিবাহ বিচ্ছেদে রাজি হচ্ছিলেন না। ওই ধরনের আরও কিছু মেসেজ আদালতে পেশ করে মামলার তদন্তকারীরা দাবি করেন, প্রায়শই রজতকে মারধর করতেন অনিন্দিতা। ওই রাতেও করেন।

এই সমস্ত তথ্যের মধ্যেই তদন্তকারীরা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট পেশ করেন। ওই রিপোর্টে জানানো হয়, রজতের মৃত্যুর সন্ধ্যায় গুগলে ‘লিগেচার মেটেরিয়াল’ শব্দটি সার্চ করেছিলেন অনিন্দিতা। গুগলে ওই দু’টি শব্দ সার্চ করলেই পাওয়া যায়, কী দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া হয়। তদন্তকারীদের দাবি, গুগল সার্চ করেই রজতকে শ্বাসরোধ করার জন্য মোবাইল চার্জারের তার ব্যবহারের কথা মাথায় আসে অনিন্দিতার।

আরও পড়ুন: মুখোমুখি বসে দাবা খেলাটা সবচেয়ে বেশি মিস করি: বিশ্বনাথন আনন্দ

আর সেই প্রসঙ্গেই, তদন্তকারীরা আদালতে পেশ করেন অনিন্দিতার একটি ফেসবুক পোস্ট। রজতের মৃত্যুর রাতেই সেই পোস্টে ‘ম্যারেজ ইজ এ পাবলিক টয়লেট’ বা বিবাহকে গণ শৌচালয়ের সঙ্গে তুলনা করে ফেসবুকে একট ছবি পোস্ট করেছিলেন অনিন্দিতা। সেই সঙ্গে ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন একটি খবর— এক মহিলা কী ভাবে তাঁর স্বামীকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে, সেই মাংস দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করে খাইয়েছিলেন রাজমিস্ত্রিকে।

সরকারি আইনজাবীরা এই সমস্ত বৈদ্যুতিন তথ্যপ্রমাণ এবং পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আদালতে দাবি করেন যে অনিন্দিতাই খুন করেছেন রজতকে এবং তারপর তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে আত্মহত্যার গল্প ফাঁদেন। বারাসত আদালতের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক সুজিতকুমার ঝা ওই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অনিন্দিতাকে এ দিন খুন এবং প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন।

বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন অনিন্দিতা। এ দিন আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করার পরই তাঁকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। তাঁকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement