দেশে ফেরার ব্যস্ততা বাংলাদেশিদের। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। পতন হয়েছে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের সরকারের। বাংলাদেশ সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তার জেরে ভারতে এসে আটকে পড়েছিলেন অনেক বাংলাদেশি। সোমবার হাসিনার ইস্তফার খবর জানার পরই দেশে ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ থেকে যাঁরা কলকাতায় আসেন, তাঁদের একটি বড় অংশের মানুষ থাকেন মারকুইজ় স্ট্রিট ও সংলগ্ন এলাকায়। কেউ আসেন চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনে, কেউ আবার স্রেফ কলকাতা ঘুরতে। সে রকমই একজন বাংলাদেশি নাগরিক মিঠুন মোদক। বাড়ি ঢাকায়। পেশায় ব্যবসায়ী মিঠুন কলকাতায় এসেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছিলেন। রবিবার বাংলাদেশে ফেরার কথা ছিল। বাসের টিকিটও কাটা ছিল। কিন্তু টিকিট বাতিল হয়ে গিয়েছে। বাস পাননি। মিঠুন জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বাড়ির খোঁজখবর পেতে সমস্যা হচ্ছিল তাঁর।
ঢাকার ওই ব্যবসায়ী চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের জন্য। তবে এখন হাসিনার ইস্তফার খবর পেয়ে মিঠুনের আশা, পরিস্থিতি বদলাবে। এখন তিনি চাইছেন তাড়াতাড়ি দেশে ফিরতে। বাংলাদেশ থেকে গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় ঘুরতে এসেছেন ওমর ফারুক। রবিবার তাঁরও বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাসের টিকিট বাতিল হওয়ায় দেশে ফেরা হয়নি তাঁরও। ফারুক জানাচ্ছেন, তিনিও এখন দ্রুত দেশে ফিরতে চান। তিনি চাইছেন দেশে ফিরে ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে।
মিঠুন, ফারুকদের মতো এমন আরও অনেকেই রয়েছেন। নূর নামে এক বাংলাদেশি নাগরিক আবার বাসের টিকিট না পেয়ে বিমানে চেপেই পদ্মাপারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এক বাংলাদেশির আবার ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যেতে বসেছে। রবিবার বাসের টিকিট বাতিল হওয়ার পর তিনি এখন ছোটাছুটি করছেন পার্ক সার্কাসে বাংলাদেশ দূতাবাসের অফিসে। হেয়ার স্ট্রিট এলাকার এক বাসিন্দা ভ্রমণ এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন। যাঁরা বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসেন, বা কলকাতা থেকে বাংলাদেশে যান, তাঁদের বাসের টিকিট কেটে দেন তিনি। ওই ব্যক্তি জানাচ্ছেন, গতকাল থেকে ২০ জন তাঁর কাছে বাসের টিকিট কেটেছেন।
শহরের বিভিন্ন জায়গায় আরও এমন এজেন্ট রয়েছেন, যাঁরা টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন। অন্যান্য এজেন্টদের কাছেও একই ভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে অনুমান তাঁর। ওই ভ্রমণ এজেন্টের দাবি, সচরাচর এতটা চাহিদা থাকে না বাংলাদেশের টিকিটের জন্য। দুই দেশের মধ্যে বাস পরিষেবা দেওয়া এক বেসরকারি বাস পরিবহণ সংস্থার কর্মী সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, কলকাতা ও বাংলাদেশের মধ্যে সংস্থার তিনটি সরাসরি বাস চলাচল করে। বাংলাদেশ থেকে বাস এখনও না আসার কারণে, কলকাতা থেকেও বাস রওনা দিতে দেরি হচ্ছে।
কলকাতা থেকে সোমবার ওই সংস্থার বাংলাদেশগামী বাস মিলবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে কলকাতায় ওই সংস্থার বুকিং কাউন্টারের সামনে বাংলাদেশি নাগরিকদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। তাঁরা এসে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন, কখন থেকে বাস পাওয়া যাবে।