শিয়ালদহ ইএসআইয়ে অগ্নিকান্ড। —ফাইল চিত্র।
শিয়ালদহের ইএসআই হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত ক্যানসার আক্রান্ত রোগী উত্তম বর্ধনের দেহের ময়না তদন্ত হয়েছে শনিবার, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পুলিশ সূত্রের খবর, ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তমের ফুসফুসে কালো ধোঁয়ার অস্তিত্ব মিলেছে। দমবন্ধ হওয়ার কারণেই এই মৃত্যু বলে রিপোর্টে অনুমান। তবে, চূড়ান্ত রিপোর্ট এলেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শুক্রবার ভোরে ইএসআই হাসপাতালে আগুন লাগে। উত্তমের পরিবারের অভিযোগ ছিল, আগুন লাগার ফলে ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে উত্তমের। এ দিন ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট সেই অভিযোগই সত্যি হওয়ার ইঙ্গিত দিল। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, আগুন লাগার কারণে উত্তমের মৃত্যু হয়নি।
আদতে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার বাসিন্দা হলেও স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে ৫৪ বছরের উত্তম থাকতেন বাগুইআটির জোড়া মন্দিরের কাছে। এ দিন উত্তমের মেয়ে মাম্পি বর্ধন বলেন, ‘‘আমি কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই।’’ উত্তমের মৃত্যুর ঘটনায় নারকেলডাঙা থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। উল্টো দিকে, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার বিরুদ্ধে থানায় গাফিলতির অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের সুপার অদিতি দাস। এ দিন হাসপাতালে গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক দল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ইএসআইসি-র তত্ত্বাবধানে হাসপাতাল ভবনের কাঠামোগত মূল্যায়নের জন্য দুর্গাপুর এনআইটি থেকে দল এসেছিল।
শুক্রবার হাসপাতালের দোতলায় পুরুষদের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে আগুন লাগে। তার পর থেকে বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার। ফলে, রোগীরা দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। তবে, হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, ডে কেয়ার, জরুরি বিভাগ খোলা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘হিমোফিলিয়ার রোগী যাঁরা এসেছিলেন, জরুরি বিভাগ থেকে তাঁদের ওষুধ, ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। সময় মতো ওষুধ না পেলে হিমোফিলিয়ার রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়বেন। ডে কেয়ার থেকে কেমোথেরাপিও দেওয়া হয়েছে।’’ পাশাপাশি, তিনি এটাও জানিয়েছেন, অপারেশন থিয়েটারে সংস্কারের কাজ চলছিল। তাই আগে থেকেই ওটি বন্ধ ছিল।
আবার কবে শিয়ালদহের ইএসআই হাসপাতালে পরিষেবা স্বাভাবিক হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সুপার। তিনি বলেন, ‘‘ফরেন্সিক দল, দুর্গাপুর এনআইটি থেকে যে দল এসেছে, তারা ছাড়পত্র দেবে। এই ব্যাপারে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, আগুন লাগার পরে সেখানকার রোগীদের নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়। অনেক রোগীকে স্থানান্তরিত করা হয় মানিকতলার ইএসআই হাসপাতালে। এ দিন শিয়ালদহের ইএসআই থেকে চিকিৎসকেরা সেখানে গিয়ে রোগীদের দেখে এসেছেন বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। অদিতি বলেন, ‘‘ওখানে অনেকেই ক্যানসারের রোগী। মানিকতলার ইএসআই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। যাঁদের কেমোথেরাপি দরকার, তাঁদের মানিকতলার ইএসআই হাসপাতালেই তা দেওয়া হবে।’’