উচ্ছ্বাস: বইমেলায় ঘোরার আনন্দে মাতোয়ারা চার বন্ধু। শুক্রবার, সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
বাড়তি ভাড়া নয়। সারা বছর যে ভাড়া নেওয়া হয়, কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় যাতায়াতের জন্য সেই ভাড়াই নিতে হবে অটোচালকদের। বইমেলার মাঠে ঘুরলে এমন ঘোষণা অহরহ কানে আসছে। যা স্বস্তি দিচ্ছে বইপ্রেমীদের। কারণ, রাতে মেলা থেকে বেরিয়ে অটোয় ওঠার আগে যাত্রীরা যখন জানতে চাইছেন তাঁদের গন্তব্যের ভাড়া, তখন অটোচালকেরা নরম স্বরে উত্তর দিচ্ছেন, ‘‘যা ভাড়া, সেটাই দেবেন।’’
বইমেলা চলাকালীন এই প্রথম ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো শিয়ালদহ থেকে সল্টলেক হয়ে পাঁচ নম্বর সেক্টরের মধ্যে যাতায়াত করছে।যার জেরে বইমেলায় পৌঁছতে কিংবা মেলা থেকে বেরিয়ে সল্টলেকের বাইরে কলকাতা বা অন্যত্র যেতে পুরোদস্তুর অটোর উপরে নির্ভরকরতে হচ্ছে না। বাড়তি ভাড়া দিয়ে অটোয় চাপতে হচ্ছে না। মেট্রোয় চেপে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে ই এম বাইপাস, ফুলবাগান কিংবা শিয়ালদহে। যে কারণে এ বার বাড়তি ভাড়া চেয়ে যাত্রী হারানোর প্রশ্নে সংযত রয়েছেন অটোচালকেরাও।
সল্টলেকের করুণাময়ীর মেলার মাঠে বিধাননগর মেলা ও কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা, এই দু’টি মেলাই সব চেয়ে বড় কলেবরে হয়। আশপাশের এলাকা ছাড়াও বহু দূর থেকে অসংখ্য বইপ্রেমী বইমেলায় আসেন। দিনের বেলায় কোনও ভাবে তাঁরা মেলায় পৌঁছলেও সমস্যায় পড়েন সন্ধ্যার পরে সেখান থেকে ফেরার সময়ে। অভিযোগ, সেই সুযোগেই বাড়তি ভাড়া হাঁকেন অটোচালকদের একটি বড় অংশ।
দু’-তিন বছর ধরে পুলিশও চাইছিল এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে। পুলিশের দাবি, গত বছর মাত্র এক জনই থানায় অভিযোগ করেছিলেন। যাত্রীদের দাবি, রাতে বাড়ি ফেরার তাড়া থাকায় অটোচালকদের সঙ্গে ঝঞ্ঝাটে জড়াতে কিংবা বেশি ভাড়া নিয়ে থানা-পুলিশ করতে অনেকেই চান না। তাইসব সময়ে তা পুলিশের কাছে অভিযোগ আকারে পৌঁছয় না বলেই দাবি তাঁদের।
এ বার সেই পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এত দিন সল্টলেক থেকে শিয়ালদহ পৌঁছনোর সরাসরি অটোর রুট ছিল না। ফুলবাগান কিংবা বেলেঘাটা থেকে ফের অটোয় চাপতে হত। সেখানে মেট্রোয় চেপেই সল্টলেক থেকে শিয়ালদহ তথা কলকাতায় পৌঁছে যেতে পারছেন দর্শকেরা।
অটোচালকদের অনেকেই মানছেন, মেট্রো তাঁদের অনেকেরই প্রচুর যাত্রী টেনে নেবে। তাই বাড়তি ভাড়া চেয়ে বাকি যাত্রীদের হারাতে নারাজ সিংহভাগ অটোচালক। বিধাননগরের ডিসি (ট্র্যাফিক) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়জানান, বইমেলার দর্শকদের মসৃণ যাতায়াতের জন্য বাস এবং বাড়তি অটো মজুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বইমেলা থেকেনিয়মিত ঘোষণা করা হচ্ছে যে, যথাযথ ভাড়া নিয়েই অটো চলাচল করবে। তাতে দর্শকেরাও সতর্ক থাকবেন। পাশাপাশি বাস এবং এত অতিরিক্ত অটো নামানো হয়েছে যে, কেউ বেশি ভাড়া চেয়ে যাত্রী হাতছাড়া করতে চাইবেন বলে মনে হয় না। তবুও অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
আজ, শনি ও আগামিকাল রবিবার সপ্তাহান্তের দু’দিন বইমেলায় ভিড় অনেকটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই দু’দিন অটোচালকেরা কী করেন, সেটাই দেখার। ভিড়ের কারণে মেট্রোর যাত্রীরা অটোমুখী হচ্ছেন কি না, তা-ও এই দু’দিনে বোঝা যাবে।
বিধাননগর আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য দাবি, দলের তরফে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে যাতে অটোচালকেরা বাড়তি ভাড়া না চান। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আমরা আশ্বস্ত করেছি, বেশি ভাড়া চেয়ে অটোচালকেরা যাত্রীদেরহেনস্থা করবেন না। দলের কথাশুনতে চালকদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’