State news

হামলার নেতৃত্বে ভাইপো, নেপথ্যে ডন পিসি, প্রভাবশালী নেতার প্রশ্রয়েই টালিগঞ্জ কাণ্ড?

টালিগঞ্জ থানার সিসি ক্যামেরা এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ফুটেজ দেখে সোমবার বিকেলে তাজ্জব বনে গিয়েছেন কলকাতা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখার অফিসাররা।

Advertisement

সিজার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ১৫:২৯
Share:

রবিবার রাতে টালিগঞ্জ থানায় ঢুকে উত্তেজিত জনতার তাণ্ডব। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

দিনের বেলাতেই চেতলার মাটালিবাগানে হানা দিতে বার কয়েক চিন্তা করতে হয় পুলিশকে। সৌজন্যে, সেখানকার মহিলা ব্রিগেড।

Advertisement

সেই ব্রিগেডের মাথা মধ্য পঞ্চাশের পুতুল নস্কর। শুধু চেতলা নয়, আশপাশের পাঁচটা থানার পুলিশও এক ডাকে চেনে এই পুতুলকে। ঠিক যেন ‘ডন’। তেমনই তাঁর দাপট গোটা এলাকায়। তাই, এলাকার নেতারাও রীতিমতো সমঝে চলেন পুতুল এবং তার প্রমীলা ব্রিগেডকে। তা সে শাসক দল হোক বা বিরোধী!

টালিগঞ্জ থানার সিসি ক্যামেরা এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ফুটেজ দেখে সোমবার বিকেলে তাজ্জব বনে গিয়েছেন কলকাতা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখার অফিসাররা। কুখ্যাত সেই মাটালিবাগানের প্রায় গোটাটাই রবিবার রাতে উঠে এসেছিল টালিগঞ্জ থানায়! সেখানকার বাছাই করা ছেলেমেয়েরা সবাই হাজির পুলিশ পেটাতে! ওই সব ফুটেজ দেখে প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের ধারণা হয়, থানা-হানার পিছনে মূল কারিগর পুতুল। সেই ধারণা যে কতটা সত্যি, তা ওই দিন সন্ধেতেই হাড়ে হাড়ে টের পান গোয়েন্দারা। কারণ, ওই সন্ধেয় হামলার অন্যতম মূল অভিযুক্ত আকাশ এবং গুল্লুকে ধরতে গিয়ে মাটালিবাগানে পুতুলের প্রমীলা বাহিনীর হাতে কার্যত ঘেরাও হয়ে যান তাঁরা। আর সেই সুযোগে চম্পট দেয় অভিযুক্তরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: অবশেষে টনক নড়ল পুলিশের, থানায় তাণ্ডবের ঘটনায় ধৃত দুই, তবে এখনও অধরা মূল অভিযুক্তরা

গোয়েন্দারা গোটা হামলার ফুটেজ দেখে অধিকাংশ দুষ্কৃতীকেই চিহ্নিত করেছেন ইতিমধ্যেই। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘কনস্টেবল বিমান দাসকে যারা মারধর করছে তাদের মধ্যে নীল জামা পরা এক ব্যক্তিকে ফুটেজে দেখা যাচ্ছে। তার নাম আকাশ।” ওই আধিকারিকের দাবি, আকাশই সম্পর্কে পুতুলের ভাইপো। চেতলা থানা এলাকায় দীর্ঘ দিন কাজ করে যাওয়া এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘এই পিসি-ভাইপোই গোটা এলাকার সমস্ত অসামাজিক কার্যকলাপের পাণ্ডা। চোলাই মদের কারবার থেকে শুরু করে, গাঁজা বা ছোটখাটো ছিনতাই, তোলাবাজি— সবটাই নিয়ন্ত্রণ করে ওরা দু’জন।’’

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞায় এখনই হস্তক্ষেপ নয়, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট

টালিগঞ্জ থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, কেবল ভাইপো আকাশ নয়, রবিবার রাতে থানার মধ্যে ঢুকে ডিউটি অফিসারের উর্দি ধরে যে মহিলারা টানাটানি করছে তার মধ্যে রয়েছে পুতুলের মেয়ে নিশাও। রয়েছে ওই পরিবারের মেয়ে পিঙ্কি। বিমান দাসকে যারা মারছে তাদের মধ্যে আকাশ ছাড়াও রয়েছে গুল্লু এবং অক্ষয় বলে আরও দুই যুবক। এরা প্রত্যেকেই পুতুলের শাগরেদ। এমনকি যে রনজয় বা রঞ্জা এবং তার তিন সঙ্গীকে মদ খাওয়ার সময় পাকড়াও করেছিল পুলিশ, তারা সবাই পুতুলের ‘গ্যাং’য়ের সদস্য হিসাবে পরিচিত।

চেতলা-টালিগঞ্জ এলাকায় কাজ করে যাওয়া অন্য এক পুলিশ আধিকারিক জানাচ্ছেন, পুতুলের উত্থান ২০০০ সাল নাগাদ। সেই সময়ে ওই এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন কংগ্রেসের রুবি দত্ত। গোটা বস্তিতে দাপট থাকায় দ্রুত পুতুল কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। সেই রাজনৈতিক যোগাযোগ কাজে লাগিয়েই এলাকায় চোলাই, গাঁজা-সহ বিভিন্ন নেশার ব্যাবসা চালাতে শুরু করেন পুতুল। পাশাপাশি, ১৭ নম্বর বাসস্ট্যান্ড এবং সংলগ্ন এলাকায় ছোটখাটো দোকান থেকে তোলা আদায় করা থেকে শুরু করে, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে ঝামেলার মতো এলাকার সমস্ত খুচরো ঝঞ্ঝাটে পয়লা নম্বর নাম হয়ে ওঠেন পুতুল। এলাকায় রথ বা অন্য কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মেলা বসিয়ে পয়সা তোলাও পুতুলের ঠিকাদারিতে পরিণত হয়।

চেতলা থানা এর আগে বেশ কয়েক বার পুতুলকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করলেও বেশি দিন তাঁকে গারদের ভিতরে রাখা যায়নি। পুলিশের একটা অংশের মতে, কারণটা অবশ্যই রাজনৈতিক। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘পুতুলের গোটা দলের পিছনে রয়েছে শাসকদলের এক প্রভাবশালী নেতার আশীর্বাদ। যে কোনও ভোটে মাটালিবাগান যেমন উপুড়হস্ত হয়ে শাসকদলকে ভোট দেয়, তেমনই পুতুল ব্রিগেড পেশাদার ভোট ম্যানেজারের মতোই গোটা ওয়ার্ডে শাসক দলের হয়ে ভোট করায়।”

অন্য এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘রাজনৈতিক আশীর্বাদের কারণেই পুলিশ পেটাতে পিছপা হয় না পুতুল। এর আগেও মাটালিবাগানে ঢুকতে গিয়ে পুলিশ পুতুলের বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে।’’ অন্য এক গোয়েন্দা আধিকারিকের কথায়, ‘‘রবিবার পুতুল নিজে থানায় হাজির না থাকলেও, ওর বুদ্ধিতেই সবাই এলাকার এক নেতার বাড়িতে গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে নালিশ করে আসে। তার পর পুতুলের চাপেই এলাকার এক মাঝারি মাপের নেতা নিজে থানায় গিয়েছিলেন।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, সেই নেতার ছবিও রয়েছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। যদিও এখন গোয়েন্দারা প্রথমে মূল অভিযুক্তদের পাকড়াও করতে চাইছেন আগে। তার পর ওই নেতার ভূমিকাও তাঁরা খতিয়ে দেখবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement