পরিচারিকা যখন দরজায় বার বার ধাক্কা মারছেন, তখন আততায়ী বাড়ির ভিতরেই বসেছিল! বেহালার বৃদ্ধা খুনের তদন্তে নেমে এমনটাই মনে করছেন কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের আধিকারিকরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বেহালার শিশিরবাগানে নিজের বাড়ির দোতলাতেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ক্যানসারের রোগী ৭৫ বছরের বৃদ্ধা শুভ্রা ঘোষ দস্তিদারকে। দোতলার ঘরের মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাঁরই একটি শাড়ি মুখে গোঁজা। বাঁ-হাতটা ডানদিকের ঘাড় পর্যন্ত টেনে আততায়ী একটি ব্লাউজ দিয়ে গলা আর হাত একসঙ্গে পেঁচিয়ে দিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে, বৃদ্ধার নাক থেকে বেরনো রক্ত এবং বাকি তথ্য প্রমাণ দেখে তদন্তকারীদের ধারণা শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে তাঁকে।
বৃদ্ধার পরিচারিকা এবং তাঁর ছেলে-পুত্রবধূর সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বৃদ্ধার ছেলে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তিনি নিয়মিত সাড়ে ৯টা নাগাদ বেরিয়ে যান। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই স্কুলে চলে যায় তাঁর মেয়ে। সাড়ে ১০টা নাগাদ অফিসে যান পুত্রবধূ। তিনি বন দফতরের কর্মী।
এ দিনও সকাল সাড়ে ১০টার সময় অফিসে যান শুভ্রার পুত্রবধূ। তদন্তকারীরা জেনেছেন, ১২টা নাগাদ পরিচারিকা বার বার দরজায় ধাক্কা মেরে সাড়া পাননা বৃদ্ধার। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তখন ওই পরিচারিকা উল্টোদিকের বাড়ির বাসিন্দাকে ঘটনাটি জানান। যেহেতু বৃদ্ধা ক্যানসার রোগী সেই কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন ওই প্রতিবেশী। তিনি নিজেও বার কয়েক ধাক্কা দেন দরজায়। কিন্তু দরজা বন্ধই থাকে। এর পরেই তিনি বৃদ্ধার পুত্রবধূকে ফোন করে গোটা ঘটনা জানান। পুত্রবধূ সঙ্গে সঙ্গে ওই প্রতিবেশীকে দরজা ভাঙতে বলেন। তখন ওই প্রতিবেশী মহিলা আশপাশের পড়শিদের জানানোর জন্য ফোন নিয়ে বাড়ির ভিতর ঢোকেন। দশ-পনোরো মিনিট পর তিনি বাইরে বেরিয়ে ফের একবার বৃদ্ধার দরজায় ধাক্কা দিলে দরজা খুলে যায়।
আরও পড়ুন: ২৬ মাস পর অনুপম হত্যাকাণ্ডের রায়, দোষী সাব্যস্ত স্ত্রী মনুয়া ও তার প্রেমিক অজিত, সাজা ঘোষণা কাল
এর থেকেই তদন্তকারীরা মনে করছেন, আততায়ী বৃদ্ধার বাড়িতেই ছিল যখন পরিচারিকা দরজায় ধাক্কা দেন। পড়শি মহিলা বাড়ির ভিতর ঢোকার সুযোগে সে বেরিয়ে এসে পাশের গলি দিয়ে চম্পট দেয়। এ দিন পুলিশ কুকুরও ওই গলি ধরেই অনেকটা পথ যায় তদন্তকারীদের নিয়ে।
প্রাথমিক তদন্তের পর তদন্তকারীরা মনে করছেন যে লুঠের উদ্দেশ্যেই ওই বাড়িতে ঢুকেছিল আততায়ী। কারণ বৃদ্ধার হাতের সোনার বালা এবং গলার হার খোয়া গিয়েছে। আলমারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ড্রয়ার ঘাঁটা হয়েছে। সেখান থেকে বেশ কিছু মূল্যবান জিনিস খোয়া গিয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। সেখান থেকেই তদন্তকারীরা মনে করছেন যে, লুঠের উদ্দেশ্যেই ঢুকেছিল আততায়ী।
তবে আততায়ী পরিচিত বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। কারণ ঢোকার সময়ে বৃদ্ধাই দরজা খুলে দিয়েছেন। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সম্ভবত বৃদ্ধা বাধা দিয়ে চিৎকার করার চেষ্টা করেন। আর সেই সময়তেই বৃদ্ধাকে চুপ করাতে গিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করে আততায়ী। অথবাযখন পরিচারিকা দরজায় ধাক্কা দেয় তখন চিৎকার করার চেষ্টা করেন বৃদ্ধা। তাতেই আতঙ্কিত হয়ে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা,এমনটাই ধারণা গোয়েন্দাদের। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) মুরলিধর শর্মা বলেন,‘‘ডাকাতির জন্যই খুন বলে আমরা সন্দেহ করছি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৯৪ ধারায় মামলা শুরু হয়েছে। আমরা কিছু সূত্র পেয়েছি।”
আরও পড়ুন: পিলারে ধাক্কা ! বাসে ঝুলন্ত যাত্রীর হাত কেটে পড়ল কলকাতার রাস্তায়
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগেই ওই বাড়িতে রংয়ের কাজ করে যান আলম নামে এক রংমিস্ত্রি। তাঁর মাধ্যমেই বুধবার ওই বাড়িতে কাজের জন্য আসেন এক কাঠমিস্ত্রি। পুলিশ সূত্রে খবর, সাড়ে ১০টা থেকে ১২টা ২০-র মধ্যে খুন হয়েছেন ওই বৃদ্ধা। সিসিটিভি ফুটেজ মিলেছে। ইতিমধ্যেই আটক করা হয়েছে ওই রংমিস্ত্রিকে। তদন্তকারীদের আশা খুব তাড়াতাড়ি হদিশ মিলবে আততায়ীর। তবে তদন্তকারীরা একের বেশি আততায়ীর সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না।