Kolkata Karcha

কলকাতার কড়চা: সুদীর্ঘ শিল্পপথের খননচিহ্ন

১৯৪৪-এ কলাভবনে ভর্তি হয়েছিলেন। আর ১৯৪৮-এ যখন সেখানকার পাঠ শেষ করলেন, তখন স্বাধীন ভারতের শৈশবকাল। তার পর লন্ডনের স্লেড স্কুল অব ফাইন আর্ট থেকে উচ্চশিক্ষা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ০৭:৩৮
Share:

ছবি সৌজন্য: ইমামি আর্ট।

মানি বা মানিদা। এই নামেই পরিচিত তিনি প্রিয়জনের কাছে। কে জি সুব্রহ্মণ্যন ছিলেন একাধারে শিল্পী, লেখক, জাতীয়তাবাদী চিন্তক, বিবিধ গুণের আধার। ১৯২৪ সালে উত্তর কেরলের কালপাথিতে জন্ম, চেন্নাইয়ের প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতি নিয়ে পড়াকালীন যোগ দেন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে। জীবন তাঁকেই পরে নিয়ে আসে শান্তিনিকেতনে, কলাভবনের অঙ্গনে। সেখানে শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় আর রামকিঙ্কর বেইজের সান্নিধ্য লাভ ও শিল্পশিক্ষার পাঠ। তিন গুরু শিল্পের প্রকরণগত শিক্ষার পাশাপাশি যে দর্শনচিন্তার বীজ বুনে দিয়েছিলেন মননে, পরবর্তী জীবনে সেই আলোতেই আলোকিত তিনি। গান্ধীবাদে বিশ্বাস ও ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ, প্রাক্‌-শান্তিনিকেতন পর্বের এই দুই ঘটনা পরে তাকে এগিয়ে দিয়েছিল ভারতের কলাভাবনার আদর্শের পথে।

Advertisement

১৯৪৪-এ কলাভবনে ভর্তি হয়েছিলেন। আর ১৯৪৮-এ যখন সেখানকার পাঠ শেষ করলেন, তখন স্বাধীন ভারতের শৈশবকাল। তার পর লন্ডনের স্লেড স্কুল অব ফাইন আর্ট থেকে উচ্চশিক্ষা। প্রায় সাত দশকের শিল্পচর্চার প্রাথমিক লগ্নে নিজস্ব শিল্পভাষার খোঁজ করতে করতেই যোগ দেন অল ইন্ডিয়া হ্যান্ডলুম বোর্ড-এ। ১৯৫৯-৬১ সময়কালে তিনি সেখানে দক্ষ কারিগরদের সঙ্গে কাজ করেন, স্থাপন করেন ধ্রুপদী শিল্প ও কারিগরি নৈপুণ্যের নিবিড় সংযোগ। পরবর্তী সময়ে বরোদার সয়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যুক্ত হন, তার পর প্রাণপ্রিয় শান্তিনিকেতনে যোগ দিয়ে সেখানেই কাটে পরবর্তী শিক্ষকজীবন।

শিল্পের মধ্যে আজন্ম ভারতাত্মার খোঁজ করেছেন কে জি সুব্রহ্মণ্যন। এ বছর তাঁর জন্মশতবর্ষ, তাঁর সুদীর্ঘ শিল্পযাত্রার প্রতি শ্রদ্ধায় ‘ইমামি আর্ট’ আয়োজন করেছে জন্মশতবর্ষ-শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রদর্শনী: ‘ওয়ান হানড্রেড ইয়ারস অ্যান্ড কাউন্টিং: রি-স্ক্রিপ্টিং কে জি সুব্রহ্মণ্যন’। শিল্পীর সাত দশকের দীর্ঘ যাত্রাপথ থেকে বেছে নেওয়া প্রায় ২০০টি শিল্পকর্ম দিয়ে প্রদর্শনী সাজিয়েছেন কিউরেটর ন্যান্সি আদজানিয়া, গবেষণা-সঙ্গী হিসাবে যুক্ত কলকাতার সিগাল ফাউন্ডেশন ও বরোদার মহারাজা সয়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যকলা বিভাগ।

Advertisement

পঞ্চাশের দশকে করা কাজের মধ্যে পোস্টকার্ড আকারের ড্রয়িং, খেলনা, ছোটদের বইয়ের খসড়া; আশির দশকে চিন ভ্রমণের খুঁটিনাটি, অ্যাক্রিলিক শিটে রিভার্স পেন্টিং; বাংলাদেশ যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে করা তীব্র রাজনৈতিক চেতনাসঞ্জাত টেরাকোটা ম্যুরাল, ‘দি ওয়ার রেলিকস’-এর প্রাথমিক খসড়া— ধরে আছে তাঁর সময়মগ্নতার চিহ্ন। কৌতুকপ্রিয়, ছাত্রদরদি শিল্পী; পূর্বজদের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী কে জি সুব্রহ্মণ্যন যেন পুনরাবিষ্কৃত এই প্রদর্শনীতে। ইমামি আর্ট গ্যালারি-কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে চলছে ৫ এপ্রিল থেকে। ২১ জুন পর্যন্ত, রবিবার বাদে রোজ সকাল ১১টা-সন্ধ্যা ৭টা। উপরের ছবিগুলি প্রদর্শনী থেকে, মাঝের ছবিতে সকন্যা শিল্পী।

মহীয়সী

প্রথম বাঙালি মহিলা হিসাবে পাশ করেছিলেন লাইসিন্সেসিয়েট অব মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (এলএমএস)-এর পাঠক্রম। কলকাতা থেকে ডাক্তারি পড়তে তৎকালীন মাদ্রাজে গিয়েছিলেন সেই সময়, যখন ভারতীয় মেয়েদের ইস্কুলে পড়তে যাওয়াটাই ছিল বলবার মতো ঘটনা। শুধু আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর সহধর্মিণী রূপে নয়, নারীশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের যাত্রাপথে স্বতন্ত্র আত্মপরিচয়ে ভাস্বর ছিলেন লেডি অবলা বসু (ছবি)। ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়, নারী শিক্ষা সমিতি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান তাঁর পরিচালনা ও দিগ্‌দর্শনে পৌঁছেছিল পরম উৎকর্ষে, উনিশ শতকে বাঙালির নবজাগরণ অবল বসুকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। সমসময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই মহীয়সীর জীবনকৃতির মূল্যায়ন করেছেন দময়ন্তী দাশগুপ্ত, তাঁর অবলা বসু ও সেই সময় (প্রকা: আনন্দ) গ্রন্থে। উইমেন’স হিস্ট্রি কনক্লেভ-এর আন্তর্জালিক অনুষ্ঠান ‘বই বৈঠক’-এ আজ সন্ধ্যা ৭টায় এই বই প্রসঙ্গেই বলবেন লেখিকা, সভামুখ্য তপতী সেনগুপ্ত।

কবির বিশ্বে

পঁচিশ বছরেরও বেশি সময় পড়িয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জেএনইউ-এর মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। দিল্লিতে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের দক্ষিণ এশিয়া কার্যালয়ে গভর্ন্যান্স পোর্টফোলিয়োরও কর্ণধার ছিলেন অধ্যাপক বিষ্ণু মহাপাত্র, এই মুহূর্তে ক্রিয়া ইউনিভার্সিটিতে ‘প্রফেসর অব পলিটিক্স’। গণতন্ত্র, সংখ্যালঘুর অধিকার, অস্তিত্বের রাজনীতি, নাগরিক সমাজ, সামাজিক পুঁজি বিষয়ে প্রকাশিত বিপুল লেখালিখি; এই মানুষটিই আবার লেখেন কবিতাও। পাবলো নেরুদার কবিতা অনুবাদ করেছেন ওড়িয়া ভাষায় দু’খণ্ডে, মৌলিক কাব্যগ্রন্থ চারটি। কলকাতায় আসছেন এ বার, আগামী ২১ মে বিকেল ৫টায় যদুনাথ ভবন মিউজ়িয়ম অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টারে ‘পোয়েট’স ওয়ার্ল্ড অ্যান্ড পোয়েট’স ওয়েজ় অব নোয়িং’ শীর্ষক আয়োজনে, পড়বেন কবিতাও।

মঞ্চে প্রথম

পুলিশ, পঞ্চম বৈদিক-এর নতুন প্রযোজনা। একটি রাজনৈতিক ভাষ্য, কোনও কল্পিত রাষ্ট্রের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে। সেই রাষ্ট্রে কেউই আর শেষ পর্যন্ত সরকার-বিরোধী থাকে না, সরকারের পক্ষেই সবার মত। পোল্যান্ডের নাটককার স্লাওমির ম্রোজ়েক রচিত এ নাটকে তীব্র ব্যঙ্গ ও ‘অ্যাবসারডিটি’র মোড়ক, যা খেয়াল করিয়ে দেবে আজকের সময়কে। নাট্যরূপ ও নিদের্শনায় অর্পিতা ঘোষ, সিনোগ্ৰাফি দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের। পঞ্চম বৈদিক-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্র মে মাসে প্রয়াত হয়েছিলেন, এ তাই নাট্যগোষ্ঠীর তর্পণের মাস। এ বারের শ্রদ্ধার্ঘ্য এই নতুন নাটকটি মঞ্চস্থ হবে শম্ভু মিত্রের প্রয়াণদিনে, ১৯ মে মধুসূদন মঞ্চে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। এই নবতম প্রযোজনা দিয়ে শেষ হবে দলের চল্লিশ পূর্তির শেষ পর্বের উদ্‌যাপন।

মনস্বী

উনিশ শতক নিয়ে গবেষণায়, বিশেষত কলকাতার পুরনো ইতিহাস নিয়ে প্রশ্নে তিনি ছিলেন মুশকিল আসান। শিবনারায়ণ রায়ের ভ্রাতুষ্পুত্র, অলোক রায়ের অনুজ অশোককুমার রায় পেশায় ছিলেন সফল প্রযুক্তিবিদ ও স্থপতি, নেশায় সাহিত্যসেবী, ইতিহাসপ্রেমী। সিঁথিতে তাঁর বাড়ি পরিচিত ‘বই বাভ়ি’ নামে, উনিশ ও বিশ শতকের দুর্মূল্য দুর্লভ সাময়িকপত্র-সহ প্রাচীন গ্রন্থাবলির অমূল্য সংগ্রহ সেখানে। বহু ছাত্রছাত্রীকে নিজ খরচে নিজের বাড়িতে রেখে সাহায্য করেছেন গবেষণাকাজে। লিখেছেন তিনশোরও বেশি প্রবন্ধ, দশটি বই, সম্পাদিত গ্রন্থ অন্তত ত্রিশ। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি-সহ নানা সম্মাননায় ভূষিত মনস্বী মানুষটি প্রয়াত হলেন গত ১২ মে, চুরাশি বছর বয়সে।

সুরকীর্তি

এ যেন সত্যিই হইহই কাণ্ড, রইরই ব্যাপার। বেঠোভেনের সবগুলো, অর্থাৎ ৩২খানা পিয়ানো সোনাটা এর আগে কবেই বা শুনেছে কলকাতা! এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা, বলছেন ক্যালকাটা স্কুল অব মিউজ়িক কর্তৃপক্ষ। ইটালীয় পিয়ানো-শিল্পী দানিয়েলে বুচ্চিয়ো এসেছিলেন কলকাতায়, দশ দিন শহরে থেকে, মোট চারটি কনসার্টে বাজিয়ে শোনালেন বেঠোভেনের তাবৎ সোনাটা-সম্ভার; তার মধ্যে তিনটি কনসার্ট হল গত ৫, ১১ ও ১২ মে ক্যালকাটা স্কুল অব মিউজ়িকের সান্দ্রে হল-এ। এ এক অসাধ্যসাধন, চারটি লাইভ পরিবেশনায় বেঠোভেনের সুরকীর্তিগুলি আগাগোড়া মেলে ধরা! তা-ই করে দেখালেন একাধারে কম্পোজ়ার, সুরশিক্ষক ও কনসার্ট পিয়ানিস্ট এই প্রখ্যাত শিল্পী।

হৃদয়পুর

সমাজ, সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পের ভাবনা ও প্রকরণেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। ‘পাবলিক আর্ট’, ‘সাইট-স্পেসিফিক আর্ট ইনস্টলেশন’ ইত্যাদি এখন আর শিল্পানুরাগীদের অজানা নয়। আবার সাধারণ মানুষকে শিল্পের মোড়কে গভীর বা কঠিন-কঠোর জীবনসত্যকে বুঝিয়ে দিতেও এই শিল্প-আঙ্গিকের গুরুত্ব অনেক। কলকাতার দুর্গাপুজো-শিল্পের সূত্রে প্রদীপ দাস এখন পরিচিত নাম, ২০২১ থেকে ’২৩ তিন বছরে তাঁর তিনটি কাজ ‘চল-চিত্র’, ‘মোটা কাপড়’ ও ‘হৃদয়পুর’ তুলে ধরেছিল দেশভাগের স্মৃতি। তারই সূত্র ধরে, দেশভাগ ও উদ্বাস্তু জীবনের স্মৃতি নিয়ে এ বার নতুন আর্ট ইনস্টলেশন-ত্রয়ী তৈরি করেছেন শিল্পী। ‘হার্টল্যান্ড/হৃদয়পুর’ নামে সেই পরিবেশনা (ছবি) দেখতে পাবেন দর্শকেরা, আজ কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি (কেসিসি)-তে। দেশভাগ, স্মৃতি সংরক্ষণ ও শিল্প প্রসঙ্গে হবে প্রাসঙ্গিক আলোচনাও।

নতুন শুরু

অফিসপাড়ায় এই সে দিনও ছিল সমৃদ্ধ বহু লাইব্রেরি, আজ কেবল স্মৃতিতে জেগে তারা। এই না-পাওয়ার মধ্যেই সুসংবাদ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ভারত ভবনের তিন তলায়, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ় অব ইন্ডিয়া (এফএফএসআই)-এর ছোট্ট অফিসঘরে খুলে গেল ‘ঋত্বিক ঘটক (ছবি) মেমোরিয়াল লাইব্রেরি’, সঙ্গে সেলস কর্নার। সাকুল্যে দু’টি আলমারি, সেখানেই রাখা আছে চলচ্চিত্রবিদ্যা ও সিনেমাশিল্প বিষয়ে নানা বই ও পত্রিকা, বাংলা-ইংরেজি ভাষায়। সেলস কর্নারে সিনেমা সংক্রান্ত নতুন-পুরনো বইয়ের পাশাপাশি কেনা যাবে কলকাতার ও নৈহাটি বালি কালনা মেদিনীপুর বর্ধমানের নানা ফিল্ম সোসাইটির পত্রিকা। সোম মঙ্গল বৃহস্পতি শুক্র, বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত খোলা সিনে-বইপ্রেমীদের জন্য।

দর্শনের আলোয়

ঔপনিবেশিক শক্তিকে রুখে স্বাধীন হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশ। কিন্তু উপনিবেশ-উত্তর তাদের অনেকের মধ্যেই দেখা গিয়েছে কর্তৃত্ববাদ ও স্বৈরাচারের, নাগরিক নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাথাচাড়া দেওয়ার প্রবণতা; জাতীয় সংহতি ও সুরক্ষার নামে জৈব-রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম, বিরুদ্ধ স্বরকে স্তব্ধ করার মতলব। রাষ্ট্রশক্তির স্বেচ্ছাচারিতার পরিপ্রেক্ষিতে মিশেল ফুকোর দর্শনের আলোয় ক্ষমতা, সুশীল সমাজ, জাতীয় সুরক্ষার মতো বিষয়গুলিকে দেখার প্রয়োজন আজ বিশেষ ভাবে অনুভূত। মিশেল ফুকোর মতবাদ মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে এই বিষয়গুলিকে দেখার চেষ্টায় ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস ফুকো: ফর্টি ইয়ারস আফটার’-এর ‘কলকাতা চ্যাপ্টার’ আগামী ২৪-২৫ মে এক আন্তর্জাতিক আলোচনার আয়োজন করেছে। কলকাতার ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিজ় অ্যান্ড রিসার্চ (আইএলএসআর)-এ বলবেন দেশ-বিদেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement