কুমোরটুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ফাইল ছবি
দুর্গার চাপ সামলাতেই সময়ে কুলোচ্ছে না। তাই কোপ পড়ল বিশ্বকর্মায়! তার উপরে এ বছর শহরের কয়েকটি পুজো কমিটি মহালয়ার আগেই মণ্ডপে প্রতিমা নিয়ে যেতে চাইছে। সেই তাড়াহুড়োয় সমস্যা আরও বেড়েছে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের। সময় না থাকায় নতুন বরাত নেওয়া তো দূর, বাধ্য হয়ে বিশ্বকর্মার সংখ্যাও কমিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। কেউ কেউ আবার বিশ্বকর্মা তৈরি পুরোপুরি বন্ধই রেখেছেন এ বছর।
এ বছর বিশ্বকর্মা পুজোর এক সপ্তাহ বাদেই মহালয়া। অন্যান্য বার সময়ের ব্যবধানটা আরও সপ্তাহ দুয়েক বেশি থাকে। এ বার মেরেকেটে সাত দিন। ফলে, বরাত নেওয়া দুর্গা প্রতিমা তৈরির ফাঁকে বিশ্বকর্মা তৈরির ফুরসত পাননি শিল্পীরা। অনেকেই তাই বিশ্বকর্মার সংখ্যা কমাতে বাধ্য হয়েছেন। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, সাধারণত দুর্গা প্রতিমা তৈরির ফাঁকেই বিশ্বকর্মা গড়ার কাজ এগিয়ে রাখেন তাঁরা। এর পরে বিশ্বকর্মা পুজো মিটলে মহালয়া পর্যন্ত যে দিন কুড়ি সময় থাকে, তখন জোরকদমে চলে দুর্গা প্রতিমার কাজ শেষ করার ব্যস্ততা। কিন্তু এ বছর দুর্গাপুজো এগিয়ে আসায় সেই সময় হাতে ছিল না বলেই জানাচ্ছেন শিল্পীরা। তার উপরে এ বছর উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ উদ্বোধনের দিনক্ষণ এগিয়ে এনে মহালয়ারও আগে মণ্ডপে প্রতিমা আনতে চাইছেন। ফলে বিশ্বকর্মা তৈরির ইচ্ছে থাকলেও অধিকাংশ শিল্পীর উপায় ছিল না।
উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ জানাচ্ছেন, ইউনেস্কোর তরফে প্রতিনিধিরা যদি মণ্ডপে ঘুরতে আসেন, সেই আশায় মহালয়ার আগে প্রতিমা এনে রাখতে চাইছেন তাঁরা। উত্তর কলকাতার এক পুজো উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘এ বছর অধিকাংশ পুজো কমিটিই সাধ্যের বাইরে গিয়ে কিছু করার চেষ্টা করছে। ইউনেস্কোর তালিকায় নাম ওঠায় সব পুজোই উদ্বোধন এগিয়ে এনে উৎসবকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছে। সেই কারণেই প্রতিমা আগে আনার পরিকল্পনা।’’ আর এই জাঁতাকলে পড়ে হাত কামড়াচ্ছেন শিল্পীরা।
প্রতি বছর পঞ্চাশটিরও বেশি বিশ্বকর্মা তৈরি করেন কুমোরটুলির শিল্পী বিশ্বনাথ পাল। গত বছর গড়েছিলেন চল্লিশটি। কিন্তু এ বছর দু’টির বেশি বরাত নেননি। তাঁর কথায়, ‘‘১৭-১৮ সেপ্টেম্বর থেকে আমার দুর্গা প্রতিমার ডেলিভারি শুরু হবে। বিশ্বকর্মা বানাতে গেলে দুর্গা শেষ করতে পারতাম না। কয়েক জন এত পরিচিত যে, তাঁদের না বলা যায় না। তাই দুটো বিশ্বকর্মা বানিয়েছি।’’
পরিস্থিতি আঁচ করে এ বছর বিশ্বকর্মার কোনও বরাতই নেননি আর এক মৃৎশিল্পী মন্টু পাল। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্গার কাজ শেষ করতেই দিন-রাত এক হয়ে যাচ্ছে, হাতে সময় কোথায় যে, বিশ্বকর্মা বানাব? ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই।’’ একই কথা শোনাচ্ছেন আর এক প্রতিমা শিল্পী অখিলকুমার ঘাটা। এ বছর বিশ্বকর্মা গড়েননি তিনিও। বললেন, ‘‘এত কাছাকাছি দুটো পুজো, অতটা চাপ নেওয়া সম্ভব নয়। তাড়াহুড়ো করলে কাজ খারাপ হয়। প্রতি বছর সময়-সুযোগ বুঝে কিছু বিশ্বকর্মা আগেই বানিয়ে রাখি। এ বছর সব পরিকল্পনা বাদ।’’