শব্দবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ের পরেও কার্যত পুলিশের চোখের সামনেই চলছিল জলসা। পুলিশ ব্যারাকের পাশেই রাত সওয়া ১১টা পর্যন্ত চলা ওই জলসা থামাতে পুলিশ প্রথমে উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করে। অভিযোগ, উদ্যোক্তারা সেই অনুরোধে কোনও আমল দেননি। এর পরে পুলিশ জলসা থামাতে তৎপর হলে উদ্যোক্তাদের একাংশ রে রে করে চড়াও হন তাঁদের উপরে। অভিযোগ, জলসা থামলেও পুলিশের গায়ে উড়ে আসে জল। ছিঁড়ে দেওয়া হয় তাঁদের পোশাক। এমনকি, এক পুলিশকর্মীকে নিগ্রহও করা হয়। এই ঘটনায় পাঁচ জন গ্রেফতার হলেও তাঁরা সকলেই পরে আদালতে জামিন পান।
বৃহস্পতিবার রাতে সল্টলেকের করুণাময়ী আবাসনে (ফেজ-১) ওই ঘটনা ঘটে। জলসা বন্ধ করতে গিয়ে নিগৃহীত হন বিধাননগর (পূর্ব) থানার এএসআই অমল কাঁড়ার। জলসার মাঠ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই রয়েছে ওই থানার পুলিশ ব্যারাক।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় সন্দীপন ঘোষ, সুপ্রতীক ঘোষ, আকাশ সোনি, সুমিত কুঠাই এবং শেখর জালান নামে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার ধৃতদের বিধাননগর আদালতে তোলা হলে তাঁদের শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর হয়।
স্থানীয় আবাসিকদের একাংশের দাবি, শব্দবিধি মেনে রাত ১০টার পরেই পুলিশ জলসা থামিয়ে দিলে ঘটনা এত দূর গড়াত না। পুলিশ যখন জলসা থামাতে গিয়েছে, তখন দর্শকদের অনেকেই মুম্বইয়ের শিল্পীর গানে মজেছিলেন। জোর নাচাগানা চলছিল। এমনকি জলসা থামাতে জোর খাটানোর মতো বাহিনী নিয়েও পুলিশ প্রথমে ঘটনাস্থলে যায়নি। তাই পুলিশকর্মীদের পোশাক ছিঁড়ে দেওয়ার এবং গায়ে জল দেওয়ার সাহস দেখান অভিযুক্তেরা।
বিধাননগর পুলিশের ডিসি (সদর) অমিত জাভালগির অবশ্য দাবি, ‘‘পুলিশ প্রথমে উদ্যোক্তাদের কাছে অনুরোধ করেছিল জলসা বন্ধ করতে। তার পরে পুলিশ নিজেই জলসা থামাতে তৎপর হয়।’’
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশকে নিগ্রহের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে অভিযুক্তেরা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় পুলিশ শেষ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
করুণাময়ী আবাসনে বৃহস্পতিবারের ঘটনায় অভিযুক্তেরা কতটা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ, তা নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি পুলিশকর্তারা।
থানা সূত্রে খবর, নিগৃহীত এএসআই অমলবাবু ঘটনাস্থলে গেলেও তাঁর কথায় কেউ গুরুত্ব দেননি। উল্টে উদ্যোক্তাদের একাংশ পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বচসা জুড়ে দেন। অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুলিশের উপরে চড়াও হন অনেকে।
অভিযোগ, সুনীল নামে জনৈক যুবক পুলিশের গায়ে বোতল থেকে জল ছুড়ে দেন। পুলিশ তাঁকে ধরে ফেলে। তাঁকে ছাড়াতে অন্যেরা পুলিশকে ধাক্কাধাক্কি করা শুরু করে। অমলবাবুকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। তিনি আহত হন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পরে থানা থেকে বিশাল বাহিনী জলসার মাঠে যায়। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার পাশাপাশি প্রায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। তাদের খোঁজ চলছে বলে জানান পুলিশ আধিকারিকেরা।
জলসার এক উদ্যোক্তা সুকান্ত মিত্রের দাবি, অনুষ্ঠান বন্ধ করা নিয়ে কোনও গোলমাল হয়নি। অনুষ্ঠান শুরু করতে দেরি হয়েছিল। পুলিশ ১১টা ২৫ মিনিটে এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলে। তার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই অনুষ্ঠান বন্ধ হয়।