পাকড়াও বিদেশি মদ বিক্রির বেআইনি চক্র

ঠিক হয়, ধর্মতলা চত্বরে এক হোটেলের সামনে রাতে দেখা হবে। সময় মতো দু’হাতে দু’টি ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, বিদেশি মদ হাত বদলের আগেই ধরা পড়ে যান। ক্রেতা সেজে রাজ্য আবগারি দফতরের অফিসারেরাই ধরে ফেলেন ওই ব্যক্তিকে। টালিগঞ্জের বাসিন্দা মণীশ জায়সবাল এখন জেলে। তাঁর ডেরা থেকে শিভাস ছাড়াও ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, ভ্যাট, অ্যাবসলিউট, ভ্যালেনটাইন পাওয়া গিয়েছে। এ সমস্তই বিদেশের বিমানবন্দরের ‘ডিউটি ফ্রি’ শপ থেকে কেনা।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০২:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

‘দাদা শিভাস হবে?’

Advertisement

উল্টো দিকে সেকেন্ড তিনেকের নৈঃশব্দের পরে উত্তর আসে — ‘‘হবে।’’

‘কী দাম পড়বে?’ আবার কিছুটা চুপ থেকে জবাব আসে, ‘‘তিন হাজার।’’

Advertisement

‘কী ভাবে পাব?’

—‘‘কত বোতল চাই?’’

‘এই ধরুন পাঁচ বোতল।’

ঠিক হয়, ধর্মতলা চত্বরে এক হোটেলের সামনে রাতে দেখা হবে। সময় মতো দু’হাতে দু’টি ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, বিদেশি মদ হাত বদলের আগেই ধরা পড়ে যান। ক্রেতা সেজে রাজ্য আবগারি দফতরের অফিসারেরাই ধরে ফেলেন ওই ব্যক্তিকে। টালিগঞ্জের বাসিন্দা মণীশ জায়সবাল এখন জেলে। তাঁর ডেরা থেকে শিভাস ছাড়াও ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, ভ্যাট, অ্যাবসলিউট, ভ্যালেনটাইন পাওয়া গিয়েছে। এ সমস্তই বিদেশের বিমানবন্দরের ‘ডিউটি ফ্রি’ শপ থেকে কেনা।

বাজারে শিভাসের দাম পাঁচ হাজার টাকার কাছাকাছি। মণীশদের কাছ থেকে কিনলে বোতল প্রতি ২ হাজার টাকা কম পড়ে। অ্যাবসলিউটের ক্ষেত্রে বোতল প্রতি ১ হাজার টাকা বাঁচে। আবগারি অফিসারদের অভিযোগ, এই টাকা বাঁচাতেই জেনে বুঝে শহরের এক শ্রেণির মানুষ সম্পূর্ণ বেআইনি বিদেশি মদ ব্যবসায় মদত দিয়ে চলেছেন।

মণীশ একা নন। গত কয়েক মাসে হয় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, নয়তো ক্রেতা সেজে এরকম আরও চার-পাঁচ জনকে ধরেছেন আবগারি অফিসারেরা। সবাই ডিউটি ফ্রি শপের মদ বিক্রি করছেন। এঁদেরই এক জনকে জেরা করে উঠে আসে মধ্য কলকাতার এক নামী হোটেলের নাম। জানা যায়, সেই হোটেলের নৈশ ক্লাবে প্রচুর পরিমাণে ডিউটি ফ্রি শপ থেকে কেনা বিদেশি মদ বিক্রি হচ্ছিল। গ্রেফতার করা হয়েছে সেই হোটেলের কয়েকজন কর্তাকে। আপাতত সেই হোটেলের সমস্ত বার বন্ধ করে রেখেছে আবগারি দফতর।

আবগারি দফতর সূত্রের খবর, কলকাতায় বিদেশি মদের নির্দিষ্ট হোলসেলার আছেন। তাঁরা জাহাজে করে সেই মদ কিনে এনে শহরে নিজেদের গুদামে মজুত করেন। শুল্ক দফতরকে নির্দিষ্ট কর দেওয়ার পরে সেই মদ তাঁরা তুলে দেন রাজ্যের আবগারি নিগমের হাতে। এই সময়ে রাজ্যকে একটি ‘পাস ফি’ দিতে হয়। রাজ্যের নিগম থেকে সেই মদ কিনে নিয়ে দোকানে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে শিভাসের দাম পড়ে পাঁচ হাজার টাকার মতো। এ ভাবে লাগামহীন ভাবে ডিউটি ফ্রি শপের মদ বাজারে বিক্রি হতে থাকলে কেন্দ্র-রাজ্য দু’জনেরই ক্ষতি।

আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা থেকে একদল ছোট ব্যবসায়ী নিয়মিত বিদেশে যাতায়াত করেন। মাসে কখনও দু’তিন বারও। তাঁদের ‘কেরিয়ার’ বলা হয়। তাঁদের মধ্যে এক দল প্রতি বার কলকাতায় ফেরার সময়ে বিদেশের বিমানবন্দরের ডিউটি ফ্রি শপ থেকে দু’বোতল করে বিদেশি মদ কিনে আনেন। কলকাতায় একদল ব্যবসায়ী সেই মদ কিনে মণীশের মতো কিছু ‘মিডলম্যান’-দের দিয়ে অনেক সস্তায় ছড়িয়ে দেন বাজারে।

আরও পড়ুন: রাতের সল্টলেকে মেয়েরা হাঁটবে না!

তবে আবগারি অফিসারদের কথায়, মানুষকেও সচেতন হতে হবে। এ ভাবে বেআইনি পথে মদ কেনা বন্ধ করতে হবে। আবগারি দফতরের মতে, কেউ ব্যক্তিগত ভাবে বিমানবন্দরের ডিউটি ফ্রি শপ থেকে দু’বোতল বিদেশি মদ কিনে নিয়ে এসে নিজের বাড়িতে খেলে তা বেআইনি নয়। তবে, সে ক্ষেত্রে ক্যাশমেমো রাখতে পারলে ভালো হয়। অনেকে আত্মীয়-বন্ধুদের অনুরোধ করেও বিদেশ থেকে এ ভাবে মদ আনান। সে ক্ষেত্রেও ক্যাশমেমো থাকা উচিত। কিন্তু, বাইরে কোথাও হল ভাড়া করে অনুষ্ঠানের সময়ে সেই মদ খাওয়া হলেও তা আবগারি আইনের চোখে অপরাধ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement