Crime

প্রিয়াঙ্কার আরও তিন দিন সিবিআই হেফাজত

মঙ্গলবার সকালেই প্রিয়াঙ্কাকে আদালতে আনা হয়। এ দিন আর তাঁকে এজলাসে আনা হয়নি। মহিলাদের লকআপে রাখা হয়েছিল।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৩০
Share:

ব্যারাকপুর আদালত চত্বরে প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী। মঙ্গলবার। ছবি: মাসুম আখতার।

বেলঘরিয়ার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়র মৃধাকে খুনে ধৃত প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীকে মঙ্গলবার ফের তিন দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে পাঠাল ব্যারাকপুর আদালত। সিবিআই তাঁকে ফের সাত দিনের জন্য হেফাজতে চেয়েছিল। ওই দাবির বিরোধিতা করে জামিন চেয়ে দীর্ঘ সওয়াল করেন প্রিয়াঙ্কার আইনজীবীরা।

Advertisement

দু’পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল শেষে বিচারক তাঁর নির্দেশ সন্ধ্যা পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছিলেন। এ দিন আদালতে প্রিয়াঙ্কা প্রায় ভাবলেশহীন ছিল। অন্য দিকে হাইকোর্টে এ দিনও প্রিয়াঙ্কার স্বামী জয়দীপ চৌধুরীর অন্তর্বর্তী জামিনের শুনানি হয়নি। আজ, বুধবার সেই শুনানি হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।

মঙ্গলবার সকালেই প্রিয়াঙ্কাকে আদালতে আনা হয়। এ দিন আর তাঁকে এজলাসে আনা হয়নি। মহিলাদের লকআপে রাখা হয়েছিল। তাঁর আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তীর পাশাপাশি এ দিন অন্তত ছ’জন আইনজীবী ছিলেন। সিবিআইয়ের আইনজীবীদের পাশাপাশি তদন্তকারী অফিসারেরাও এ দিন এজলাসে হাজির ছিলেন। আদালতে এসেছিলেন জুনিয়রের বাবা সমরেশ মৃধাও।

Advertisement

আরও পড়ুন: শোভন ‘বৈশাখীর গ্ল্যাক্সো বেবি’, মিছিলের পরে বলল তৃণমূল

আরও পড়ুন: তলবের আগেই অন্তর্বর্তী জামিনের আর্জি প্রিয়াঙ্কার স্বামীর

সিবিআই এই মামলার কেস ডায়েরি শুরুতেই জমা করেছিল। বিচারক কেস ডায়েরি খতিয়ে দেখার পরে আইনজীবীদের সওয়াল শুরু হয়। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রিয়াঙ্কার আইনজীবীরা সিবিআই হেফাজতের তীব্র বিরোধিতা করেন। তাঁরা দাবি করেন, সিবিআই গত সাত দিনে প্রিয়াঙ্কাকে জেরা করেও বিশেষ কিছু পায়নি। ফের হেফাজতে পেলেও মামলার বিশেষ উন্নতি হবে, সে নিশ্চয়তা কোথায়?

সিবিআইয়ের আইনজীবীরা এই যুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেন। এজলাসের মধ্যেই দুই পক্ষের আইনজীবীদের তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এজলাস। সিবিআইয়ের আইনজীবীরা জানান, ১০ বছরের পুরনো মামলা। সব তথ্যপ্রমাণ অবিকৃত নেই। ফলে তাঁদের হাতে যে সব তথ্য-নথি আসছে, তার ভিত্তিতে প্রিয়াঙ্কাকে আরও জেরা করা প্রয়োজন। তার জন্য আরও সময় দরকার। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে সওয়াল পর্ব। এর পরে ওই এজলাসে আরও অনেক মামলা ছিল। বিচারক এই মামলার নির্দেশ পিছিয়ে দেন। জানিয়ে দেন, সব মামলা শেষ হলে এই মামলার নির্দেশ দেবেন।

সন্ধ্যায় বিচারক প্রিয়াঙ্কাকে আরও তিন দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। প্রিয়াঙ্কার এক আইনজীবী সৌম্যদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিবিআই সাত দিনের জন্য আমাদের মক্কেলকে হেফাজতে চেয়েছিল। সব দিক খতিয়ে দেখে বিচারক তিন দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন। বিচারক বলেছেন, আপনাদের কথামতো আরও তিন দিনের হেফাজত মঞ্জুর করছি। যদি সন্তোষজনক কিছু না পাওয়া যায়, তা হলে অন্য পদক্ষেপ করতে হতে পারে।”

সমরেশবাবু বলেন, “দশ বছর ধরে যখন লড়াই করছি, তখন আরও লড়াইয়ের শক্তি আমাদের আছে। আমরাও এর শেষ দেখে ছাড়ব। নিম্ন আদালতে যদি না হয়, তখন ফের উচ্চ আদালতে যাব। প্রিয়াঙ্কা যদি জামিন পায়, আমি তার বিরোধিতা করে হাইকোর্টে যাব। আমার ছেলের খুনি ধরা না পর্যন্ত লড়াই থামাব না। এই মামলায় যারা অভিযুক্ত, তারা প্রভাবশালী। ফলে জামিন পেলে তারা আরও অনেক কিছুই করতে পারে।”

তাঁরা সিবিআই-কে আরও কিছু তথ্য দিতে চান বলে জানিয়েছেন সমরেশবাবু। তিনি বলেন, “আমার ছেলে যখন জখম অবস্থায় রাস্তার উপরে পড়েছিল, তখন কয়েক জন তাঁকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেই সময়ে জুনিয়রের ফোন থেকে তাঁরা কয়েক জনকে ফোন করেন। ডায়াল করা নম্বরে প্রথম নামটিই ছিল প্রিয়াঙ্কার। তাঁরা ওই নম্বরেই প্রথম ফোন করে সব জানিয়েছিলেন বলে আমাদের জানান। প্রিয়াঙ্কা তো সিবিআই-কে আমাদের সামনেই বলেছে, ও জুনিয়রকে ভাল বাসত। তাকে ও খুন করেনি।”

জুনিয়রের মা শ্বেতা মৃধার প্রশ্ন, “প্রিয়াঙ্কা যদি আমার ছেলেকে এতই ভালবাসত, তা হলে সে দিন ওর দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরে ও কেন এল না? সেই খবর পাওয়ার পরে ও ফোনে কী বলেছিল, সেই রেকর্ডিং খুঁজে দেখুক সিবিআই। তা হলেই অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement