Netaji Subhash Chandra Bose

শুধু শোভা নয়, নয়া সৌধে সুভাষের আদর্শ মেলে ধরার আশা

শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিউ টাউনে আজাদ হিন্দ স্মারকের বিষয়ে ঘোষণা করার পরিপ্রক্ষিতে ফের বিষয়টা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

Advertisement

ঋজু বসু এবং কাজল গুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৬
Share:

দেশনায়ক: শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়, ধর্মতলা এবং ভবানীপুরের নর্দার্ন পার্কে সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে তাঁর বাবার ঘোড়ার পিঠে চড়া মূর্তি ততটা পছন্দ হয় না মেয়ের। বরং দক্ষিণ কলকাতায় নেতাজি-ভবনের কাছেই নর্দার্ন পার্কে ধুতি-পাঞ্জাবি পরা সুভাষ-মূর্তিই তাঁর বিশেষ পছন্দের। কয়েক দিন আগে সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৪ বছরের জন্মদিনের দিন আনন্দবাজারকে বলছিলেন সুভাষ-কন্যা অনিতা বসু পাফ।

Advertisement

শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিউ টাউনে আজাদ হিন্দ স্মারকের বিষয়ে ঘোষণা করার পরিপ্রক্ষিতে ফের বিষয়টা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এ বছরের গোড়ায় ১২৪তম নেতাজি -জয়ন্তীর প্রাক্কালেই এই পরিকল্পনার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন বিধানসভায় তিনি এই প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন। এ রাজ্যে ১২৫তম নেতাজি-জয়ন্তী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে জানান ইতিহাসবিদ তথা সুভাষচন্দ্রের নাতি (ভ্রাতুষ্পুত্রের পুত্র) সুগত বসুও। তবে সুগতবাবু বলছেন, “আজাদ হিন্দ ফৌজ স্মারক তৈরি হলে তাতে শুধুমাত্র নান্দনিক বা শৈল্পিক দিকটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইতিহাস-নিষ্ঠ হওয়াও সমান জরুরি।” সুগতের কথায়, “আমার মনে হয় আজাদ হিন্দ ফৌজে নেতাজির আদর্শের বার্তাও তরুণ প্রজন্মের সামনে মেলে ধরা উচিত।’’ বিশ্বাস, ঐক্য, বীরত্ব, আত্মবলিদানের সঙ্কল্পে ভরপুর সুভাষচন্দ্রের আদর্শের প্রতীক সিঙ্গাপুরের আইএনএ মেমোরিয়ালটি বিশেষ পছন্দ সুগতবাবুর। এলগিন রোডের নেতাজি-ভবনে নেতাজি রিসার্চ বুরোর উদ্যোগে তার একটি প্রতিকৃতি রয়েছে। ময়দানেও রয়েছে একটি আজাদ হিন্দ স্মারক। নতুন সৌধটি আরও সম্পূর্ণ হয়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদী।

রাষ্ট্রপতি ভবনে নেতাজির ছবিতে শ্রদ্ধা নিবেদন নিয়ে বিতর্কের পটভূমিতেও সুগত মনে করেন, “নেতাজিকে ঘিরে কোনও ভাস্কর্য তৈরি হলে তাতে ওঁর ব্যক্তিত্ব কতটা ফুটে উঠছে, সেটা দেখা জরুরি। পরেশ মাইতির ওই ছবিটি শুনেছি কোনও ফটোগ্রাফ থেকে আঁকা। তাতে সুভাষচন্দ্রের ব্যক্তিত্ব ঠিকঠাক ফুটে ওঠেনি।” সংসদের সেন্ট্রাল হলে চিন্তামণি করের আঁকা সুভাষচন্দ্রের ছবিটি আঁকার সময়ে চিন্তামণি করের পরিশ্রমেরও সাক্ষী সুগতবাবু। তিনি দেখেছিলেন, কী ভাবে কত দিন ধরে ছবিটি আঁকা হয়েছিল, নেতাজির ভাইপো শিশিরকুমার বসুর সঙ্গে মিলিয়ে ছবিতে সুভাষচন্দ্রের গায়ের রং ঠিকঠাক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছিল। নতুন আজাদ হিন্দ স্মারকটিও ঠিকঠাক ভাবে করতে তাই যথেষ্ট মনোযোগ দরকার বলে তিনি মনে করেন।

Advertisement

ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়ের মতেও, ‘‘কলকাতায় নেতাজি মূর্তির অভাব নেই। কিন্তু আজাদ হিন্দ স্মারকে নেতাজির যথার্থ মূল্যায়ন জরুরি।” তবে রজতবাবু মনে করেন, শুধু কলকাতা কেন, ইম্ফল বা কোহিমাতেও আজাদ হিন্দ স্মারক থাকাটা ইতিহাসের প্রতি সুবিচার হত। কলকাতায় শ্যামবাজারে বা বিমানবন্দরের নেতাজি মূর্তিও তত পছন্দ নয় সুগতবাবুর। তাঁর আফশোস, রামকিঙ্করের তৈরি সুভাষচন্দ্রের একটি ছোট মূর্তি ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্টের বাইরে দেখার তেমন সুযোগ নেই। সংসদের ভিতরে নেতাজি-মূর্তি, ময়দানে প্রদোষ দাশগুপ্তের তৈরি নেতাজি-মূর্তি বা নর্দার্ন পার্কে সুনীল পালের তৈরি মূর্তি তুলনায় গুণীজনের চোখে সমাদৃত। নিউ টাউনের প্রকল্পটি আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়কের যথাযথ মূল্যায়ন করবে ভেবে খুশি ও উৎসাহিত নিউ টাউনের বাসিন্দারাও। অনেকেরই আশা, নিছক পর্যটন বা সৌন্দর্যায়নের জন্যই নয়, বাংলা-বাঙালির আত্মপরিচয় মেলে ধরেও কলকাতার গর্ব হয়ে উঠুক নিউ টাউনের নতুন স্মারক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement