—প্রতীকী চিত্র।
মনিবের বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকছে পুলিশ। ইশারা পেতেই দ্রুত পুলিশের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ডোবারম্যান ‘রকি’ এবং রটওয়াইলার ‘টাইসন’। তারা কামড়ে ধরে এক পুলিশ কনস্টেবলের দু’হাত। প্রায় ছ’ঘণ্টার চেষ্টায় অবশেষে রকি আর টাইসনকে নিয়ন্ত্রণে আনেন কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডের কর্মীরা। শেষ পর্যন্ত মাদকের কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগে ট্যাংরার মথুরবাবু লেনের ওই বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে রকি ও টাইসনের মনিব জয়দেব দাসকে।
কিন্তু কুকুর দু’টির কী হবে? পুলিশ কলকাতা পুরসভার ডগ পাউন্ডে তাদের রাখার অনুরোধ জানায়। কিন্তু ডগ পাউন্ড জানিয়ে দেয়, কুকুর রাখার পরিকাঠামো তাদের নেই। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শেষে আদালতের নির্দেশে কুকুর দু’টির জায়গা হয় প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের অধীনস্থ ‘দ্য ক্যালকাটা সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমালস’ (সিএসপিসিএ)-এর আস্তানায়। দু’বছর সেখানেই খাঁচাবন্দি থাকার পরে কুকুর দু’টির মরণাপন্ন অবস্থা হয়েছিল। রকির হাড় জিরজিরে চেহারার ছবি প্রকাশ্যে আসতে শুরু হয় হইচই।
সেই ঘটনার কথা মনে করিয়ে কলকাতা পুরসভার ডগ পাউন্ডের অন্যতম কর্মী রাজীব ঘোষ বললেন, ‘‘ওখানেই এই অবস্থা হয়েছিল। ডগ পাউন্ডে রাখা হলে আর দেখতে হত না।’’ রাজীব জানান, কোনও কুকুরকে রাখারই পরিকাঠামো নেই পুরসভার ডগ পাউন্ডে। সেখানে শুধুমাত্র নির্বীজকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। তবু অসুস্থ কুকুর রাস্তায় দেখলেই তাঁদের কাছে ফোন আসে। অবস্থা এমনই যে, রোগে আক্রান্ত, সারা গায়ে ঘা রয়েছে, এমন কুকুরকেও বাধ্য হয়েই রাখতে হচ্ছে নির্বীজকরণের জন্য নিয়ে আসা কুকুরের সঙ্গে। রাজীবের কথায়, ‘‘সুস্থ কুকুরেরাই নির্বীজকরণের পরে নিজের এলাকায় রোগ নিয়ে যাচ্ছে। সেখানেও রোগ ছড়াচ্ছে। পরিকাঠামো উন্নত না হলে ডগ পাউন্ডের বদনাম ঘুচবে না।’’
এই ডগ পাউন্ডের বদনাম নিয়েই আপাতত উত্তাল সমাজমাধ্যম। কলকাতার পশুপ্রেমীদের বড় অংশ প্রতিদিনই এ নিয়ে সমাজমাধ্যমে ‘#সেনোটুডগপাউন্ড’ পোস্ট করছেন। আগামী ২৩ তারিখ এ ব্যাপারে একটি মিছিলও ডাকা হয়েছে। প্রতিবাদকারীদের দাবি, ভারত সরকার জায়গায় জায়গায় ডগ পাউন্ড তৈরি করবে বলে বিল আনছে। বিষয়টি তাঁরা প্রতিবাদ করে, জনমত তৈরি করে আটকাতে চান। পশুপ্রেমী অনিতা নাগ বললেন, ‘‘এক কালে ডগ পাউন্ড তৈরিই হয়েছিল, রাস্তা থেকে অবোলা প্রাণীদের তুলে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলার জন্য।’’ আর এক পশুপ্রেমী শালিনী দত্ত আবার বললেন, ‘‘কিছু দিন আগেই লাইভস্টক অ্যান্ড লাইভস্টক প্রোডাক্টস (আমদানি ও রফতানি) বিল, ২০২৩ পাশ করার চেষ্টা হয়েছিল। তাতে অন্য পশুর পাশাপাশি কুকুর, বেড়ালকেও রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ, ওই আইন পাশ হলে ভারত থেকে কুকুর চিনে পাঠানোর ক্ষেত্রে চিনা আইন বলবৎ হবে। মূলত মাংস খাওয়ার জন্য সে ক্ষেত্রে কুকুর এবং বেড়াল রফতানি করা হবে। কিন্তু তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে ওই বিল প্রত্যাহার করেছে সরকার। প্রতিবাদ করেই ডগ পাউন্ড বিলও আটকাতে হবে।’’
কিন্তু এমন কোনও বিল কি সত্যিই পাশ হতে চলেছে? পশু অধিকার রক্ষা কর্মী তথা লোকসভার সাংসদ মেনকা গান্ধীর দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, এমন কোনও আইন পাশের ব্যাপারই নেই। তাঁর সংস্থা, ‘পিপল ফর অ্যানিম্যালস’-এর আইনজীবী অনুষ্কা চৌধুরী বললেন, ‘‘কেরলের মতো কয়েকটি রাজ্য ডগ পাউন্ড তৈরির আবেদন জানালেও কেন্দ্রীয় সরকার এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।’’ ‘পিপল ফর এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস’ (পিটা)-এর আইনজীবী মিত আশার দিল্লি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘সরকারি স্তরে কথা বলে জেনেছি, ডগ পাউন্ড বিল বলে কোনও বিল আনার কোনও রকম পরিকল্পনা সরকারের নেই। এটা সম্পূর্ণ একটা রটনা। লাইভস্টক প্রোডাক্টস বিলের সঙ্গেও এর কোনও যোগ নেই।’’