ছবি: সংগৃহীত
হরিদেবপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতিকেই প্রাথমিক ভাবে দায়ী করে সোমবার রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক আধিকারিককে সাসপেন্ড ও দু’জনকে সতর্ক করার সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে ও ক্ষোভ জানিয়ে কমিটির প্রধান তথা বণ্টন সংস্থার সিএমডি-কে চিঠি দিয়ে সে সব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি বোর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (ডব্লিউবিএসইবিইএ)। না-হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে তাদের প্রশ্ন, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসার আগেই কী ভাবে এমন পদক্ষেপ করা হল? পরিকাঠামোর অভাবের অভিযোগও তুলেছে তারা। পাশাপাশি আজ, বুধবার মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে কালো ব্যাজ পরে সংস্থার জেলা সদর কার্যালয়গুলিতে করোনা-বিধি মেনেই প্রতিবাদসভার ডাক দিয়েছে ওই সংগঠন। আজ সিএমডি-র সঙ্গেও তাদের বৈঠক হওয়ার কথা।
এ দিন অবশ্য সংস্থার সিএমডি শান্তনু বসুর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। রাত পর্যন্ত জবাব মেলেনি মেসেজের।
হরিদেবপুর ও পাটুলিতে দু’টি ঘটনায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’জনের মৃত্যুর পরে আলাদা তদন্ত কমিটি গড়েছিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তারা সোমবার তাঁকে রিপোর্ট দেয়। সিএমডি-র কাছে ডব্লিউবিএসইবিইএ-র সেক্রেটারি মৌপালি মুখোপাধ্যায়ের দাবি, তারের এত বড় ‘নেটওয়ার্ক’-এ এমন দুর্ঘটনা এড়াতে হলে প্রয়োজনীয় কর্মী, বিজ্ঞানসম্মত নির্দেশিকা ও সরঞ্জামের জোগান রয়েছে কি না, তা ভাবা দরকার। তাঁদের প্রশ্ন, তা যদি না-থাকে, তা হলে ইঞ্জিনিয়ারদেরই কেন শাস্তি পেতে হবে? তদন্তে কোন মাপকাঠিতে রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতি মিলেছে? সেই পরিকাঠামো নিরাপদ না হলে নিরাপত্তা বিভাগের (যা মানবসম্পদ বিভাগের ডিরেক্টরের অধীন) ভূমিকা কী ছিল?
কিন্তু এমন দুর্ঘটনা ঠেকাতে কি তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না? ঘটনাটিকে দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত বলে অভিহিত করে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট এ কে দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘ঝড়ে তার ছিঁড়ে পড়াটা অস্বাভাবিক কি? তা ছাড়া, সেটি ঝড়ে পড়েছিল, না কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কাটা হয়েছিল, তা-ও জানা যায়নি। ’’ তাঁর দাবি, এমন ৪.৫ লক্ষ কিলোমিটার ওভারহেড লো-টেনশন লাইনের দায়িত্বে রয়েছে মাত্র ৫৩৩টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র। এমন তার বিশেষ পদ্ধতিতে (উপরে ইনসুলেশন থাকে) বা মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। কিছু প্রকল্পে তা করা হলেও সর্বত্র করতে হলে আরও অর্থের প্রয়োজন।
তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে বেরোনো নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে সংগঠনের দাবি, এর ফলে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ চলছে। ইঞ্জিনিয়ারদের সম্মানহানি ও ভয়ের পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। অথচ, তাঁরা করোনা-সঙ্কট বা আমপান ও ইয়াসের মতো দুর্যোগেও পরিষেবা স্বাভাবিক রেখে প্রশাসনের শীর্ষ মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।