দিনের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ খেলা ছিল দড়ি টানাটানির খেলা। নিজস্ব চিত্র।
ঠোঁটে গুলি চামচ। হাত দু’টোকে দু’দিকে ছড়িয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছেন। সিল্কের শাড়িটা গাছ কোমর করে বাঁধা। অন্য দিন এ ভাবেই শাড়িটা জড়িয়ে রান্না ঘরে মেয়ের স্কুলের টিফিন বক্স গুছিয়ে দেন। এখন সেই মেয়েই এন্ড লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে লাফাতে লাফাতে চিৎকার করছে— ‘‘মা আর একটু... আর একটু, ফাস্ট ফাস্ট।’’
জিন্স-টি শার্টে একটু দূরে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখছিলেন এক তরুণী। দুপুর দেড়টা। অন্য দিন এই সময় খবরের সন্ধানে রাস্তায় দৌড়তে হয় তাঁকে। ক্যামেরায় পিটুসি দিতে দিতে যোগাযোগ রাখতে হয় অফিসের সঙ্গেও। রবিবার হলেই বা কি, কাজে ছাড় থাকে না। তবে এই রবিবারটা একটু আলাদা। এখন ছোটাছুটির বালাই নেই। অফিসের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তিনি প্রতিযোগী। আপাতত ভাবনা একটাই। সবার আগে দৌড়বেন কী করে।
চামচ, গুলি নিয়ে দৌড়চ্ছেন মহিলা কর্মী এবং কর্মীদের পরিবারের মহিলা সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র।
লাল সাদায় মোড়া ময়দানের তালতলা মাঠের তাঁবু। রবিবার সকাল থেকে সেখানেই বসেছিল আনন্দবাজার পত্রিকার শতবর্ষের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর। গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল উৎসবের মেজাজ। এক দিকে খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত। মাঠের সবুজ ঘাসে সাদা চুনের ট্র্যাক মার্ক। অন্য দিকে চলছে নাম নথিভুক্তিকরণ। ছোট ছোট ছাউনিতে বসার জায়গা। সেই ভিড় পেরিয়ে একটু এগোলেই কচিকাঁচাদের আনন্দ-ক্ষেত্র। হাতের ট্যাটু থেকে চুলে বাহার করার ছোট্ট পার্লার। বাহারি নেলপালিশে নখ রঞ্জনের ব্যবস্থা আবার বেলুন ফাটানো, দুর্গ ভাঙার মতো খেলাও। ১৮ বছরের কম বয়সীদের ঢালাও আমোদ রসদ।
মহিলা কর্মীদের জন্য ছিল ৭৫ মিটারের দৌড়। নিজস্ব চিত্র।
সপরিবারে প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার কর্মীরা। সবার জন্যই ছিল আলাদা আলাদা বিভাগ। ১০০ মিটার দৌড় ছিল পুরুষ কর্মী এবং স্ত্রী কর্মীদের স্বামীদের জন্য। মহিলা কর্মীদের জন্য ছিল ৭৫ মিটারের দৌড়, বাস্কেট বল, গোল করা, গুলি চামচ, মিউজিকাল চেয়ার প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ। ছোটদের জন্য ছিল ৫০ মিটার, ৭৫ মিটার, ১০০ মিটারের দৌড়, বাক্সের ভিতর জিনিস ফেলা, যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া পুরুষ কর্মীদের জন্য ছিল ৮০০ মিটার হাঁটার প্রতিযোগিতা এবং পুরুষ সঙ্গীদের জন্যও ছিল বিভিন্ন বিভাগে অংশ নেওয়ার সুযোগ।
পুরুষ কর্মী এবং কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ছিল ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতা। নিজস্ব চিত্র।
১০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হন আনন্দবাজার পত্রিকার কর বিভাগের সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন আনন্দলোক পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক পাল। তৃতীয় স্থান অধিকার করেন অ্যাডমিশনট্রি ডট ইনের মৈনাক মৈত্র।
৭৫ মিটার দৌড়ে প্রথম হন অ্যাডমিশনট্রি ডট ইনের শতাব্দী রায়। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন আনন্দবাজার অনলাইনের কমলিকা ভট্টাচার্য। তৃতীয় স্থানে ছিলেন আনন্দবাজার অনলাইনেরই রিচা রায়।
পুরুষ কর্মচারীদের ‘বাস্কেট দ্য বল’ প্রতিযোগীতা। নিজস্ব চিত্র।
৮০০ মিটার হাঁটা প্রতিযোগিতায় প্রথম হন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের প্রভাত ঘোষ, দ্বিতীয় স্থানে এডিটোরিয়াল সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্টের শুভাশিস বসাক এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেন আনন্দবাজার অনলাইনের অসীম রায়চৌধুরী।
তবে সব থেকে বেশি উত্তেজনা ছিল দড়ি টানাটানি প্রতিযোগিতা নিয়ে। পুরুষ কর্মীদের নিয়ে ওই প্রতিযেগিতায় প্রথম পুরষ্কার জিতেছে ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রুপ ১। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ডিজিটাল বিজনেস গ্রুপ ১। তৃতীয় স্থানে ছিল ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রুপ ২।
সর্বশেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র।
তবে প্রতিবছরই সবার নজর থাকে স্টার অফ দ্য ডে-র দিকে। সবচেয়ে বেশি বিভাগে পুরষ্কার জেতেন যিনি তিনিই এই পুরস্কার পান। এ বছর সেই পুরস্কার পেয়েছেন আনন্দবাজার পত্রিকার ট্যাক্সেসন বিভাগের সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়।