Topsia

রাতের শহরে গাড়ি আটকে ‘হেনস্থা’ মহিলাকে, মারধর গাড়িচালককেও

মঙ্গলবার রাতে তপসিয়ায় এক মহিলার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাতে এই প্রশ্নগুলি ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে। পেশায় চিকিৎসক ওই মহিলা এক জন হারমোনিকা শিল্পী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাতের কলকাতা কি মহিলাদের জন্য আদৌ নিরাপদ? শহরের রাতপথে সমস্যায় পড়লে কি আদৌ সাহায্য মেলে? পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পুলিশ কি পাশে দাঁড়ায়? না কি অন্য নানা অনুষঙ্গ তুলে ধরে দায়িত্ব পালন এড়িয়ে যেতে চায়?

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে তপসিয়ায় এক মহিলার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাতে এই প্রশ্নগুলি ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে। পেশায় চিকিৎসক ওই মহিলা এক জন হারমোনিকা শিল্পী। সেই সূত্রে তিনি তপসিয়ার এক জায়গায় অনুষ্ঠান সেরে নিজের গাড়িতে বাড়ি ফিরছিলেন। অভিযোগ, রাত ১১টা নাগাদ মাঝপথে ওই গাড়ির পথ আটকায় একটি স্কুটারে থাকা তিন মত্ত যুবক। মহিলাকে দেখিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গির পরে গাড়ির দরজা খুলিয়ে তারা বেধড়ক মারধর করে গাড়িচালক কমল মালকে। সেই সময়ে রাস্তা ফাঁকা থাকায় তিনি সাহায্য পাননি বলে মহিলার দাবি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলেও বলা হয়, ‘‘ছবি তুলে রাখেননি কেন?’’ এমনকি অভিযোগ, বুধবার থানায় এফআইআর করতে গেলেও বলে দেওয়া হয়, ‘জেনারেল ডায়েরি’ করুন! পরে লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার হস্তক্ষেপে রাতে এ নিয়ে এফআইআর দায়ের করেছে তপসিয়া থানা। মারধর, চুরি-সহ একাধিক ধারায় এফআইআর দায়ের হয়েছে।

অভিযোগকারিণীর নাম ববিতা বসু। বছর চুয়ান্নের ববিতা পেশায় অ্যানাস্থেটিস্ট, যোধপুর পার্কের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী চক্ষু চিকিৎসক। ববিতা বলেন, ‘‘হারমোনিকা শিল্পী হিসাবে কাজ করেছি। চিকিৎসকের থেকে এই পরিচয়টাই লোকে বেশি জানেন। পুজোর সময়ে নানা জায়গায় অনুষ্ঠান করতে যেতে হয়। তপসিয়ার শীল লেনে তেমনই জগদ্ধাত্রী পুজোর অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলাম মঙ্গলবার রাতে। সেখানে ৩০ মিনিট বাজিয়ে বাড়ির দিকে এগোই।’’

Advertisement

ববিতার দাবি, তপসিয়া মোড় থেকে যোধপুর পার্কের দিকে যাওয়ার পথে একটি মার্বেল ফ্যাক্টরির কাছাকাছি পৌঁছে তিনি দেখেন, তাঁর গাড়ির পাশ দিয়ে একটি স্কুটারে তিন যুবক বেপরোয়া ভাবে যাচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের বয়স মোটামুটি ২২-২৩ বছর। এক জনের কাঁধে একটি বাঁদর বসে। ববিতার দাবি, ‘‘কিছুটা এগিয়ে গিয়ে স্কুটার ঘুরিয়ে আমাদের গাড়ির ডান দিকে চলে আসে ওরা। গাড়ির কাচ তোলা থাকলেও ভিতরে মহিলা বসে রয়েছেন দেখেই কি না জানি না, অত্যন্ত কুরুচিকর অঙ্গভঙ্গি করতে শুরু করে। গাড়িচালককে চুপচাপ বেরিয়ে যেতে বলি। কিন্তু তখনই গতি বাড়িয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে পথ আটকে দাঁড়ায় ওরা। তা দেখে আরও ভয় পেয়ে যাই।’’ তিনি আরও জানান, সে সময়ে গাড়িচালক গাড়ি থেকে নামতে চাইলে তিনি বারণ করেন। কিন্তু তার মধ্যেই গাড়ির লক খোলা পেয়ে চালকের দিকের দরজা খুলে ফেলে মত্ত অভিযুক্তেরা। ‘‘কী করব বুঝে না পেয়ে হাত জোড় করে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাতে থাকি। তাতে কাজ হয়নি। উল্টে গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে আঙুলে ঝুলিয়ে স্কুটারে উঠে চলে যায় তিন জন। অত রাতে মাঝরাস্তায় বন্ধ গাড়িতে পড়ে ছিলাম আমরা।’’— বলছেন ববিতা।

এর পরে যে অনুষ্ঠানে তিনি গিয়েছিলেন, কোনও মতে তার উদ্যোক্তাদের এবং স্বামীকে ফোন করে খবর দেন ববিতা। তড়িঘড়ি তাঁরা ঘটনাস্থলে এসে আগে গাড়িচালকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এর পরে বুধবার সকালে তপসিয়া থানায় অভিযোগ জানাতে যান মহিলা। ববিতার অভিযোগ, ‘‘পুলিশকে এফআইআর করার অনুরোধ করলেও তাদের তরফে কোনও তৎপরতা দেখিনি। বলা হয়, অভিযোগপত্র দিয়ে যান, কিছু করা গেলে জানানো হবে। গাড়ির চাবিটা অন্তত খুঁজে দেওয়ার অনুরোধ করি। তাতে পুলিশ বলে, আপনি গাড়ির লকটাই বদলে নিন!’’

যদিও এমন ঘটনায় আগেও পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। এক্সাইড মোড়ে এমন বাইক-বাহিনীর হাতে নিগৃহীতা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে তাঁকে অন্য থানায় যেতে বলে বলেও অভিযোগ ওঠে। কিন্তু বার বার এমন ঘটনাতেও হুঁশ ফেরে না কেন? কেন পুলিশি তৎপরতা দেখা যায় না? লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘গাফিলতির অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের ধরার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement