Cyber Crime

সাইবার লুটের শিকার প্রবীণ দম্পতি, সতর্ক হতে পরামর্শ

ঘটনার দিন সকালে স্বামী সুশীলকুমার চৌধুরী গিয়েছিলেন ব্যাঙ্কে। স্ত্রী চন্দনা চৌধুরী তৈরি হচ্ছিলেন চিকিৎসকের কাছে যাবেন বলে। সেই সময়ে চন্দনার কাছে ফোন আসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:২১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বিপুল লাভের প্রলোভন দেখানো হতে পারে। দেখানো হতে পারে ভয়ও। কিন্তু কোনও কিছুতেই প্রভাবিত হলে চলবে না। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। নয়তো নিমেষেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দিতে পারে সাইবার দুষ্কৃতীরা। যে ভাবে ঠকেছেন সল্টলেকের এ ই ব্লকের বাসিন্দা এক প্রবীণ দম্পতি। গত মঙ্গলবারের ঘটনা। ওই দম্পতি আবার বিধাননগর পুলিশের সমাজকল্যাণমূলক শাখা ‘সাঁঝবাতি’র সদস্যও।

Advertisement

ঘটনার দিন সকালে স্বামী সুশীলকুমার চৌধুরী গিয়েছিলেন ব্যাঙ্কে। স্ত্রী চন্দনা চৌধুরী তৈরি হচ্ছিলেন চিকিৎসকের কাছে যাবেন বলে। সেই সময়ে চন্দনার কাছে ফোন আসে। তাঁকে জানানো হয়, দ্রুত কেওয়াইসি জমা না দিলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে। ঘটনাচক্রে ওই ফোনের সময়ে তাঁর স্বামী ব্যাঙ্কেই ছিলেন। সেই ব্যাঙ্কেরই সহকারী ম্যানেজার বলে পরিচয় দিয়ে সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক জন ফোন করেছিল বলে জানান চন্দনা। বৃদ্ধার কথায়, ‘‘আমাকে ধমক দিয়ে বলা হয়, কেওয়াইসি না দিলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমি তখন বললাম, চিকিৎসকের কাছে যাব। লোকটি আমার কোনও কথাই শুনছিল না। আমাকে ভয় দেখিয়ে দু’টি ফোনের নম্বর চেয়ে নেওয়া হয়। জেনে নেওয়া হয় প্যান কার্ড ও চেকের নম্বরও। ভয় দেখিয়ে আমাকে বোকা বানানো হয়।’’ বৃদ্ধা জানান, তাঁর দু’টি ফোন নম্বরের একটিতে ওই ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে কথা বলে অন্য ফোনে কী কী করতে হবে, সেই নির্দেশ দিচ্ছিল। বৃদ্ধা জানান, দ্বিতীয় ফোনটিতে বিভিন্ন লিঙ্ক পাঠানো হচ্ছিল।

অন্য কাউকে ফোন নম্বর দেওয়ার আগে স্বামীকে জানালেন না কেন? তিনি তো তখন ব্যাঙ্কেই ছিলেন। বৃদ্ধা বলেন, ‘‘আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ফোনটি অ্যান্ড্রয়েড কি না? বলেছিলাম অ্যাকাউন্ট নম্বর, আইডি, কিছুই আমার কাছে নেই। আমাকে বলল, চেকবই বার করে দেখে বলতে। আমি কেমন যেন ঘোরের মধ্যে সবটা করে ফেললাম। লিঙ্কে ক্লিক করলাম। ওটিপি বলে দিলাম। তার পরে দেখলাম, তিন লক্ষ টাকা বেরিয়ে গেল। আমি যখন লোকটিকে সে কথা বললাম, সে বলল, টাকা নিরাপদেই রয়েছে।’’ চন্দনা জানান, প্রতারকের ফোন তার পর থেকেই বন্ধ।

Advertisement

এ ই ব্লকের ওই দম্পতির ঘটনা নতুন নয়। মাস দুয়েক আগে ই ই ব্লকের বাসিন্দা ধৃতীশচন্দ্র ধরের কাছে মেসেজ পাঠিয়ে জানানো হয়, তাঁর বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হবে। একটি নম্বর পাঠানো হয় কথা বলার জন্য। ধৃতীশ সেই নম্বরে ফোন করতেই তাঁকে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়। ধৃতীশ তা করতেই ফোনটি হ্যাক করে নেওয়া হয়। এর পরে আর তাঁর কাছে কোনও ওটিপি যায়নি। হ্যাকারেরা ফোন নম্বরটি ব্যবহার করে দু’টি অ্যাকাউন্ট থেকে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা সরিয়ে নেয়। এর ঠিক পরের দিন ওই বৃদ্ধ ক্যাব বুক করেছিলেন ফোন থেকে। ক্যাবের চালক বৃদ্ধকে ফোন করলেও সেটি ধরে হ্যাকারেরা। তারা ক্যাবের বুকিং বাতিল করে দেয়।

সুশীল ও চন্দনার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেটের পদস্থ আধিকারিকেরা জানান, লাভজনক বিনিয়োগের টোপ দিয়ে, অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার ভয় দেখিয়ে অথবা বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়ার হুমকি-বার্তা পাঠিয়ে ‘শিকার’ ধরে সাইবার অপরাধীরা। এ সব থেকে বাঁচতে সন্দেহজনক কারও ফোন এলেই সতর্ক হতে বলছে পুলিশ। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বৃদ্ধা যদি ভয় না পেয়ে বুদ্ধি করে স্বামীকে ফোন করতেন, তা হলে বিপদ এড়ানো যেত। অনেক ক্ষেত্রেই এমন ভাবে বিভ্রান্ত করে দেওয়া হয় যে, মানুষ মাথা ঠিক রাখতে পারেন না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement