পদব্রজে: মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে দক্ষিণেশ্বর থেকে ব্রিগেডের পথে অশীতিপর মালা দাস। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
সভাস্থল ব্রিগেডে আসার ট্র্যাডিশন বজায় রয়েছে। তবে বদলে গিয়েছে ভরসার দল। আর তাই রবিবারেও ব্রিগেডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী সভায় হাজির ছিলেন বছর পঁচাশির বৃদ্ধা।
স্বামী বরাবর বামেদের সমর্থক ছিলেন। বছর সতেরো আগে প্রয়াত হন তাঁর স্বামী সন্তোষকুমার দাস। যত দিন তিনি বেঁচে ছিলেন, ব্রিগেডে বামফ্রন্টের সভায় নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন স্ত্রী মালা দাসকে নিয়ে। একা বৃদ্ধা এখন সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছেন। তবে সিপিএম ছেড়ে বিজেপির সভায় নিয়মিত দেখা যায় তাঁকে।
এ দিন মেয়ে আর নাতিকে নিয়ে দক্ষিণেশ্বরের বাড়ি থেকে হেঁটে ব্রিগেডে হাজির হয়েছেন। পরনে সবুজ পাড়ের ধবধবে শাড়ি। মুখে মাস্ক। ভিড়ের মধ্যেও হনহনিয়ে হেঁটে চলেছেন। তাঁর হাঁটার গতিতে ঘুরে তাকাচ্ছিলেন কমবয়সিরাও। মালাদেবীর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছিলেন না মেয়ে-নাতি। পিছন থেকে নাতির চিৎকারে একটু থামছেন বটে, ফের হনহনিয়ে হাঁটা শুরু।
এতটা পথ হেঁটে এলেন কী ভাবে? ভিড় ঠেলে বৃদ্ধার পাশে চলতে চলতে প্রশ্ন করতেই বলে উঠলেন, ‘‘স্বামীর সঙ্গে ব্রিগেডে হেঁটেই আসতাম। ব্রিগেডের সভা অন্য মাত্রার। রবিবারের শহরটায় হাঁটতে বেশ লাগে। অনেক কিছু দেখা যায়, চেনা যায়। এখন বয়স বেড়েছে। তাই একটু বসে জিরিয়ে আবার হেঁটেছি।’’
স্বামীর পেনশনের টাকায় মেয়ে, নাতিকে নিয়ে সংসার মালাদেবীর। ছেলেকে নিয়ে মায়ের কাছেই থাকেন মেয়ে মুক্তি মান্না। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা-মা ব্রিগেডে বামফ্রন্টের সভা কখনও বাদ দিতেন না। বাবা মারা যাওয়ার পরেও মা একা আসতেন। বছর পাঁচেক ধরে মা আর বামফ্রন্টের সভায় আসেন না। এখন বিজেপির সভায় নিয়মিত আসেন।’’ একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া, নাতি সৌম্যজিৎ মান্নার কথায়, ‘‘দক্ষিণেশ্বর থেকে এতটা হাঁটতে পা ব্যথা তো করছেই। তবে দিদা আমার প্রেরণা। বলতে পারেন, দিদা শক্তি জুগিয়েছেন বলেই এতটা রাস্তা হাঁটতে পেরেছি। একাধিক বার দোকানে দাঁড় করিয়ে ক্যাডবেরি দিয়েছেন। এ রকম ব্রিগেড যেন বার বার হয়। তা হলে দিদার কাছে এমন উপহার পাব।’’
সকাল দশটায় দক্ষিণেশ্বরের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ওঁরা। ব্রিগেডে যখন ঢুকলেন, বেলা বারোটা বাজে। মালাদেবীর কথায়, ‘‘এখনও নিয়ম করে বাড়িতে সকাল-সন্ধ্যা হাঁটি। তাই এখনও সুস্থ। এই বয়সেও কোনও রোগ নেই।’’ হেসে বললেন, ‘‘মোদীজিকে দেখব বলে সকাল সকাল বেরিয়েছি। এখন মঞ্চের কাছে যেতে চেষ্টা করব।’’
ফের হনহনিয়ে এগিয়ে যান। পিছন পিছন নাতি-মেয়ে। ডাফরিন রোড ক্রসিং, ফোর্ট উইলিয়ম ফার্স্ট গেটের সামনে নাতি আর মেয়ের হাত ধরে সভার মাঝে ঢুকে থামলেন বছর পঁচাশির ‘তরুণী’।