AMRI

ন’বছর লড়ে জয়ী আমরির অগ্নিকাণ্ডে মৃতের স্ত্রী, নির্দেশ ক্ষতিপূরণের

মঙ্গলবার ওই আদালত তাদের রায়ে জানিয়েছে, দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণ বাবদ মৃতের স্ত্রীর হাতে ৪৫ লক্ষ টাকা তুলে দিতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৪২
Share:

২০১১ সালে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। ফাইল চিত্র।

২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছিল ৯৩ জনের। সেই ঘটনা প্রাণ কেড়েছিল ধানবাদের বাসিন্দা, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সিয়া রামেরও (৪৫)। স্বামীকে অকালে হারিয়েও অবশ্য দমে যাননি স্ত্রী বিন্দু। ৫৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে ২০১৩ সালে আমরি হাসপাতালের বিরুদ্ধে রাজ্য ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন বিন্দু। মঙ্গলবার ওই আদালত তাদের রায়ে জানিয়েছে, দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণ বাবদ মৃতের স্ত্রীর হাতে ৪৫ লক্ষ টাকা তুলে দিতে হবে। ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে দেরি হলে সেই অনুযায়ী নয় শতাংশ হারে সুদও দিতে হবে বলে আদালত নির্দেশ দিয়েছে।

Advertisement

আদালত সূত্রের খবর, সিয়া রাম ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর টিউমারের অস্ত্রোপচারের জন্য আমরি হাসপাতালে ভর্তি হন। অস্ত্রোপচারের পরে সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন সিয়া। ৯ ডিসেম্বর ভোরে যে দিন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে, সে দিনই তাঁকে জেনারেল ওয়ার্ডে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আগুন তাঁর প্রাণ কেড়ে নেয়। ধানবাদ থেকে ফোনে বিন্দু বলেন, ‘‘সে দিন আগুনের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই। স্বামীকে খুঁজে পেতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাহায্য চেয়েও লাভ হয়নি। অবশেষে রাতে এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে শুয়ে থাকা সারিবদ্ধ দগ্ধ দেহের মাঝে ওঁর দেহ শনাক্ত করি।’’ কথা বলতে বলতে বার বার কেঁদে ফেলছিলেন বিন্দু। বেসরকারি সংস্থার পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার স্বামীকে অকালে হারিয়ে তিন সন্তানের জন্য দাঁতে দাঁত চেপে লড়ার কথা ভাবেন বিন্দু। স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগ এনে রাজ্য ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতে ৫৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণের মামলা করেন তিনি।

দীর্ঘ ন’বছর পরে ওই আদালতের বিচারক মনোজিৎ মণ্ডল ও সমীক্ষা ভট্টাচার্য মঙ্গলবার মামলার রায় দেন। ২০১১ সালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার জন্য আমরি হাসপাতালের কঠোর সমালোচনা করেন তাঁরা। অগ্নিকাণ্ডের পিছনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যে একাধিক গাফিলতি ছিল, রায়ে তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিচারকেরা। তাঁরা জানান, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী দমকলে ফোন করেননি। এবং হাসপাতালে অগ্নি-নির্বাপণ সামগ্রী ঠিক মতো না থাকার ফলেই আগুন ভয়াল রূপ নিয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাসপাতালের একাধিক ভুল-ত্রুটি ও গাফিলতির দিক তুলে ধরে বিচারকেরা হাসপাতালকে নির্দেশ দেন, আদালতের রায় বেরোনোর দেড় মাসের মধ্যে মামলাকারীর হাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে।

Advertisement

মামলাকারীর আইনজীবী অভীককুমার দাসের কথায়, ‘‘বিন্দুদেবী ছাড়াও আগুনে মৃত ৫০ জনের পরিবার হাসপাতালের বিরুদ্ধে আমার মাধ্যমে মামলা করেছিল। কিন্তু বিন্দুদেবী বাদে সকলেই হাসপাতালের সঙ্গে আপস-রফা করে মামলা তুলে নেন। একা বিন্দুদেবীই টানা ন’বছর লড়াই চালিয়ে শেষমেশ জয়ী হলেন।’’

রাজ্য ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতের রায় প্রসঙ্গে ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘আদালতের রায়ের প্রতিলিপি এখনও হাতে আসেনি। সেটি হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ অন্য দিকে, টানা ন’বছর লড়াই চালিয়ে জয়ী বিন্দুর কথায়, ‘‘স্বামীকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু হাসপাতালের চূড়ান্ত গাফিলতি কখনওই মেনে নেব না। এর জন্য যত দূর যেতে হয়, যাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement