প্রতীকী ছবি।
বিকেলের পর থেকেই ঝিম ধরে ছিল বাড়ির আদরের পোষ্য জিমি। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হল বমি। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ এনে খাওয়ানো হলেও উন্নতি তো দূর, বরং অবস্থার অবনতি হচ্ছিল।কার্যত নড়াচড়ার ক্ষমতা ছিল না তার। রাত ১টা নাগাদ চিকিৎসককে ফের ফোন করা হলে তিনি দ্রুত পোষ্যটিকে ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে ভর্তির পরামর্শ দেন। এর পরেই শুরু হয় অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ। শহরের একাধিক জায়গায় ফোন করে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য কাকুতি-মিনতি করা হলেও কেউই অত রাতে আসতে রাজি হননি। শেষমেশ ঘণ্টা তিনেক পরে, ভোরের দিকে এক বন্ধুর গাড়িতে করে কোনও মতে পোষ্যটিকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছনো সম্ভব হয়। যদিও চিকিৎসকেরা ওই দম্পত্তিকে জানিয়ে দেন, তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি নিজেদের পোষ্যকে নিয়ে এমনই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল যাদবপুরের এক দম্পত্তির। রাতের শহরে পোষ্যদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার হাল যে কতটা শোচনীয়, তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন তাঁরা। তবে, শুধু যাদবপুরের ওই দম্পত্তিরই নয়, এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে আরও অনেকেরই।
সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভা এলাকায় পোষ্য কুকুরের সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় তাদের জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা হাতে গোনা। কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। দিনের বেলায় পরিষেবা মিললেও রাতে কোনও কারণে অ্যাম্বুল্যান্সের প্রয়োজন হলে তা পাওয়া দুষ্কর। ফোন করলে কখনও শুনতে হয়, গাড়ি রেখে চালক বাড়ি চলে গিয়েছেন। কখনও বা শোনা যায়, ‘‘রাতটা কোনও মতে কাটিয়ে দিন। কাল সকাল-সকাল পৌঁছে যাব।’’ আছে ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারা’র প্রবণতাও! এমনকি, বার বার ফোন করে সাড়া না পাওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে অনেকের।
উল্টোডাঙার বাসিন্দা ঐশী মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘দিনকয়েক আগেই আমার পোষ্যটি রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় উল্টোডাঙা থেকে বেলগাছিয়ার পশু হাসপাতাল পর্যন্ত কোনও অ্যাম্বুল্যান্সই যেতে রাজি হয়নি। এমনকি, গাড়ি নোংরা হওয়ার ভয়ে কোনও ট্যাক্সিও যেতে রাজি হয়নি। শেষে নিরুপায় হয়ে ওকে নিয়ে বাইকের পিছনে বসে কোনও মতে হাসপাতালে পৌঁছই।’’
ইদানীং অবশ্য শহরের বেশ কয়েকটি সংগঠনের তরফে দিন-রাতের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু করা হয়েছে। এমনই একটি সংগঠনের তরফে প্রান্তিক চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘পোষ্যদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার বেহাল অবস্থা দেখেই আমরা ওই পরিষেবা দিতে শুরু করি। কিন্তু একার পক্ষে এত চাপ সামলানো মুশকিল। তাই অনেক সময়ে নিরুপায় হয়েই না বলতে হয়।’’
কিন্তু কেন এই অবস্থার পরিবর্তন হয় না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শহরের পশুপ্রেমীরা। পুরসভার তরফেই বা কেন ২৪ ঘণ্টার পরিষেবা দেওয়া হবে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। শহরের একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আয়ুষি দে বললেন, ‘‘এমন তো নয় যে, রাতে শুধু মানুষেরই শরীর খারাপ হতে পারে, পশুদের নয়। তা হলে রাতে পোষ্যের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পেতে এত হয়রান হতে হবে কেন?’’ পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘পোষ্যদেরও এমন অনেক রোগ আছে, যা দেখা দিলে তাদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেক সময়ে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য দেরি হয়ে যায়। যার জন্য আমাদের কাজ কঠিন হয়ে পড়ে।’’