ছবি: সংগৃহীত।
কোভিডের সংক্রমণ এড়াতে কালীঘাট মন্দিরে বিগ্রহের নিত্যদিনের পুজো এবং ভোগ নিবেদন ছাড়া বাকি সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা আপাতত বন্ধ। প্রসাদ বিতরণ বন্ধ, সিঁদুরের টিপ দেওয়া বন্ধ, এমনকি ফুল-বেলপাতা নিয়ে মন্দিরে ঢোকাও বারণ। গর্ভগৃহ স্পর্শ না করে শুধুমাত্র বিগ্রহ দর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে দর্শনার্থীদের। কিন্তু কালী মন্দির কমিটি ও সেবায়েত কাউন্সিলের অভিযোগ, প্রসাদ বা ভোগ বিতরণ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কালীঘাটে পুজো দেওয়া ও সেই প্রসাদ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার নাম করে বেশ কিছু ওয়েবসাইট রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। ভক্তদের কাছ থেকে সেই বাবদ টাকাও নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
সেবায়েত কাউন্সিল সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এমনই কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে লালবাজারের সাইবার শাখায় ইমেল পাঠিয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি, কালীঘাট থানাতেও অভিযোগ জানানো হয়েছে।
সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লকডাউনকে হাতিয়ার করেই এমন লোক ঠকানো কারবার শুরু হয়েছে। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বাড়িতে প্রসাদ পৌঁছে দেওয়ার নাম করে মানুষকে ঠকাচ্ছে বেশ কয়েকটি সংস্থা। আমরা তাদের চিহ্নিত করে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি।’’
কালী মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, লকডাউনের বিধি-নিষেধের জেরে কালীঘাটের বিগ্রহকে বর্তমানে খুবই কম পরিমাণ ভোগ নিবেদন করা হচ্ছে। যে সেবায়েত পরিবেশন করেন, তিনিই ওই ভোগের একমাত্র প্রাপক। ওই ভোগ কোনও ভাবেই বিক্রি করা হয় না। পরিবেশনকারী সেবায়েত শুধুমাত্র নিজের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে ওই ভোগ বিতরণ করতে পারেন।
তবে মন্দির কমিটি জানিয়েছে, তাদের তরফে প্রতিদিন খিচুড়ি-তরকারি দিয়ে ‘দরিদ্র নারায়ণ সেবা’ করা হয়। কিন্তু সেই খাবার মন্দিরের ভোগ নয়। দরিদ্রদের খাওয়ানোর জন্যই প্রতিদিন ওই রান্না হয়। মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার বলেন, ‘‘মা কালীর ভোগের খুব চাহিদা। লকডাউনের আগে প্রায় প্রতিদিনই শ’তিনেক মানুষ নিয়ম মেনে, নির্ধারিত মূল্য দিয়ে ভোগ গ্রহণ করতেন। বিশেষ বিশেষ তিথিতে হাজার দুয়েক মানুষকে ভোগ বিতরণ করা হত। কিন্তু এখন তা বন্ধ। আর সেই সুযোগেই কিছু জালিয়াত সংস্থা কালোবাজারি করতে মাঠে নেমে পড়েছে।’’
সেবায়েত কাউন্সিল জানিয়েছে, মন্দির চত্বরে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতে স্যানিটাইজ়েশন টানেলের পাশাপাশি দেহের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রও ব্যবহার করা হচ্ছে। দিনে অন্তত দু’বার মূল মন্দির জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি গোটা মন্দির চত্বর ঘণ্টা তিনেক পরপর জল দিয়ে ধোয়া হচ্ছে। সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘গর্ভগৃহ সংলগ্ন বারান্দায় একাধিক হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার মেশিন বসানো হয়েছে। আগে দর্শনার্থীদের অনেকে হাত জীবাণুমুক্ত না করেই বেরিয়ে যেতেন। এখন আমরা সে দিকে নজর রেখেছি। প্রত্যেককেই বাধ্যতামূলক ভাবে হাত জীবাণুমুক্ত করানো হচ্ছে।’’