Manhole

বিধি শিকেয়, পাকে-চক্রে প্রাণ যায় বেঘোরে

এই সব কড়া নিয়ম রয়েছে ঠিকই, তবে তা বন্দি খাতায়-কলমেই। অভিযোগ, বিধি উড়িয়ে এখনও স্রেফ গামছা-বালতির ভরসাতেই ম্যানহোলে নেমে পাকে-চক্রে খাবি খান পুর সাফাইকর্মীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩০
Share:

অসহায়: চার শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে চিন্তিত অন্য শ্রমিকেরা। বৃহস্পতিবার, কুঁদঘাটে। ছবি: সুমন বল্লভ

মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা থাকবে বিশেষ ধরনের এপ্রনে। পায়ে থাকবে গামবুট, হাতে দস্তানা। কোমরে বাঁধা থাকবে বিশেষ ধরনের দড়ি। মাথায় হেলমেট। প্রয়োজনে পরতে হবে বিশেষ ধরনের মুখোশও। সঙ্গে অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখাও বাধ্যতামূলক।

Advertisement

এই সব কড়া নিয়ম রয়েছে ঠিকই, তবে তা বন্দি খাতায়-কলমেই। অভিযোগ, বিধি উড়িয়ে এখনও স্রেফ গামছা-বালতির ভরসাতেই ম্যানহোলে নেমে পাকে-চক্রে খাবি খান পুর সাফাইকর্মীরা। ম্যানহোলে মানুষ নামিয়ে কাজ করানো আইনত নিষিদ্ধ হলেও কারও হুঁশ নেই। কোনও অঘটন ঘটলে কয়েক দিন তা নিয়ে আলোচনা চললেও পরে যে কে সে-ই! গামবুট, মুখোশ, দস্তানা বা অক্সিজেনের ব্যবস্থা ছাড়াই প্রশাসনিক তৎপরতায় চলতে থাকে মানুষ নামিয়ে ম্যানহোলের কাজ।

বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক উদাসীনতার এমনই অভিযোগ উঠেছে কুঁদঘাটের ঘটনায়। একটি ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনের কাছে ম্যানহোলে নেমে মৃত্যু হয়েছে চার জনের। তিন জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সুরক্ষা-বিধি না মেনেই কাজ করতে নেমে তাঁরা তলিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। কোমরের দড়িটুকুও ছিল না বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।

Advertisement

নিয়ম অনুযায়ী, ম্যানহোলে নামার আগে জেনে নিতে হয়, ভিতরে বিষাক্ত গ্যাস আছে কি না। তার জন্য যে যন্ত্র লাগে, তা অবশ্য থাকে না সাফাইকর্মীদের। তাঁদের ভরসা বেশি আরশোলাদের উপরে। কারণ, কোথাও মিথেন গ্যাস জমে থাকলে কোনও প্রাণীই বাঁচতে পারে না। ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে সাফাইকর্মীরা যদি দেখেন ভিতরে আরশোলা ঘুরছে, তবেই তাঁরা নিশ্চিন্ত হন। যদিও পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, দশ বছর আগের থেকে বর্তমানে অনেকটাই উন্নতি হয়েছে পরিস্থিতির। আগে ২০ ফুট নীচের নিকাশি নালাও মানুষ দিয়েই পরিষ্কার করানো হত। কিন্তু বর্তমানে অত গভীর নালায় মানুষ নামা বন্ধ। তাই ধারাবাহিক ভাবেই ম্যানহোল ও নিকাশি নালা পরিষ্কারের নানা যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। পুরসভা সূত্রের খবর, ‘গালিপিট ক্লেনজিং মেশিন’, ‘জেটি কাম সাকশন মেশিন’, ‘পাওয়ার বাকেট মেশিন’, ‘ম্যানহোল ডিসিল্টিং মেশিন’, ‘ব্লো ভ্যাক মেশিন’, ‘ওপেন নালা ডিসিল্টিং মেশিন’-সহ নানা ধরনের যন্ত্র কেনা হয়েছে।

পুরকর্মীরা যন্ত্র কেনার কথা বললেও ম্যানহোল পরিষ্কারের জন্য ব্রিটিশ আমলের ‘সুয়্যার ক্লেনজিং মজদুর’ পদটি অবশ্য রয়েছে। এখনও বহু পুরকর্মী কাজ করেন ওই এসসি মজদুর পদে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, প্রাণহানি হতে পারে, এমন কাজের জন্য কেন এখনও মাটির নীচে মানুষ নামাতে হয়? পুরকর্মীদেরই একাংশের প্রশ্ন, কেইআইআইপি-র অধীনে যেখানে শহরের নিকাশির খোলনলচে বদলের কাজ চলছে, সেখানে মানুষ দিয়ে কেন ম্যানহোল পরিষ্কার করানো হবে? তাঁদের দাবি, “বিপজ্জনক তো বটেই, গোটা ব্যাপারটি অত্যন্ত অমানবিকও।”

নিকাশি দফতরের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তারক সিংহের যদিও দাবি, “কোনও পুরকর্মী এ দিন ওই ম্যানহোলে নিকাশির কাজ করতে নামেননি। এলাকায় কেইআইআইপি-র একটি ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন তৈরি হয়েছে। স্টেশনের সঙ্গে ড্রেনের পথ জোড়ার জন্য এক জন নেমেছিলেন। তিনি জলের তোড়ে ভেসে যান। তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়েই বাকিরা বিপদে পড়েন।” তাঁর দাবি, “মাটির নীচে যত সম্ভব কম মানুষ নামানোর চেষ্টা হয়। একাধিক যন্ত্র কেনা হয়েছে। তবে সব কাজ যন্ত্র করতে পারে না! কিছু জায়গায় এত আবর্জনা জমে যে, মানুষ না নামালে হয় না। এ ক্ষেত্রে নাটবল্টু জুড়তে নামানো হয়েছিল। যন্ত্র দিয়ে ওই কাজ কী করে হবে?”

কিন্তু মাটির ৭০-৮০ ফুট নীচে কাজ করতে নামছেন যাঁরা, তাঁদের সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে না? পুর প্রতিনিধির দাবি, “নিরাপত্তার কোনও ব্যাপার নেই। ওই ভাবেই সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে কাজ করতে হয়!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement