আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিবাদ চলছে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে। তাতে শামিল হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক থেকে শুরু করে শীর্ষ স্তরের পদাধিকারীরাও। কোথাও কোথাও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই নানা কর্মসূচিতে উঠে এসেছে নতুন নাগরিকত্ব আইন বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে আলোচনা। কিন্তু গোটা দেশ জুড়ে সর্বস্তরে চর্চিত এবং নাগরিকদের ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিষয়গুলি নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক একটি কর্মশালার অনুমতি দিতে বাদ সেধেছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কলকাতা এবং অন্যত্র বিভিন্ন গোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে নানা উদ্যোগের শরিক একটি মঞ্চ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের কাছে সিএএ এবং এনআরসি-র মর্মোদ্ধারে (‘ডিকোডিং সিএএ অ্যান্ড এনআরসি’) একটি সভা করার অনুমতি চেয়েছিল। আজ, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সভাঘরে সেখানকার শিক্ষকদের সমিতি এবং ‘নো ইয়োর নেবার’ বলে একটি মঞ্চের যুগ্ম প্রয়াসে আলোচনাসভাটি হওয়ার কথা ছিল। আলিয়ার শিক্ষক সমিতি সহায়তায় রাজিও ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উদ্যোক্তারা তাই বাধ্য হয়ে সিআইটি রোডের ‘বেঙ্গল টিউবারকিউলোসিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রেক্ষাগৃহে সভা করছেন।
কেন বেঁকে বসলেন কর্তৃপক্ষ? সদুত্তর মেলেনি। তবে আলিয়ার উপাচার্য মহম্মদ আলির কথায়, ‘‘এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’ ওই কর্মশালায় অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তৈরির নানা টানাপড়েনের সাক্ষী, গুয়াহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী আমন ওয়াদুদ ও সোনিপতের জিন্দল গ্লোবাল ল স্কুলের সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস স্টাডিজ়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ঝুমা সেনের থাকার কথা। আমন ওয়াদুদ সে দিন যাদবপুরেও বক্তৃতা দিতে পারেন।
যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, কলকাতা বা সেন্ট জ়েভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলিয়ার শিক্ষক-ছাত্রেরা ইতিমধ্যেই নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে প্রতিবাদে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। জামিয়া মিলিয়া ও আলিগড়ে পুলিশি হামলা ও যাদবপুরের এক শিক্ষিকাকে বিজেপি সমর্থকেরা হেনস্থা করার পরে যাদবপুরের শিক্ষকদের সংগঠনও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ক্যাম্পাসে সভা করেছে। তাতে সিএএ এবং এনআরসি-র কথাও উঠেছে। বিশ্বভারতীর মতো কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বার্ষিক বক্তৃতামালার আসরে বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বলতে ডাকা হয় (সেখানে অ-বিজেপি ছাত্রেরা বিক্ষোভ দেখান)। বেলুড় মঠেও যুব দিবসের অনুষ্ঠানে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু আলিয়ার উপাচার্য কোনও অজ্ঞাত কারণে ‘না’ বলে দিয়েছেন। শিক্ষকদের একাংশের ধারণা, কেন্দ্রীয় অনুদান মেলা নিয়ে আশঙ্কার ফলেও এই ‘সাবধানি’ পদক্ষেপ।
আলিয়ার শিক্ষকেরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউ টাউন ও পার্ক সার্কাস, দু’টি ক্যাম্পাসেই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। তাতে রেজিস্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ামককেও দেখা গিয়েছে। তা হলে হঠাৎ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের যে সংগঠন এই উদ্যোগে শরিক, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই ক্লাসঘর ভাড়া করে বিভিন্ন সরকারি পরীক্ষার তালিমে সাহায্য করে। তারাও হতবাক। ‘নো ইয়োর নেবার’-এর তরফে সাবির আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা প্রেক্ষাগৃহ ব্যবহারের অনুমতি না পেয়ে ভাড়া করা ক্লাসঘরে কর্মশালা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ রাজি হননি।’’