ব্যস্ত: গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর এক কর্মী। ফাইল চিত্র
বকেয়ার পরিমাণ আকাশ ছুঁয়েছে। আর রোজগার প্রায় তলানিতে। এই অবস্থায় ধুঁকতে থাকা একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি শেষ করে দিলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
কলকাতা ও চেন্নাইয়ের পাশাপাশি দেশের আরও পাঁচটি ছোট বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর কাজ করত ভদ্র ইন্টারন্যাশনাল নামের ওই সংস্থা। বিমান মাটিতে নামার পরে সেটিকে পথ দেখিয়ে পার্কিং বে-তে নিয়ে আসা, দরজায় সিঁড়ি লাগানো, যাত্রীদের মালপত্র নামানো, বিমান পরিষ্কার করা, আবার যাত্রীদের মালপত্র তোলা-সহ যাবতীয় কাজ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর মধ্যে পড়ে।
এক সময়ে উড়ান সংস্থাগুলি নিজেরাই কর্মীদের দিয়ে এই কাজ করাত। কিন্তু উড়ানের সংখ্যা দিনদিন বাড়তে থাকায় এই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর কাজ বাইরে থেকে করানো (আউটসোর্স) শুরু হয়। উড়ান সংস্থাগুলি নিজেদের পছন্দের সংস্থাকে দিয়ে বেশ কয়েক বছর এই কাজ করানোর পরে কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করে, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দরপত্র ডেকে দু’টি সংস্থাকে দিয়ে এই কাজ করাবে। সরকারি অর্থে চলা উড়ান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার নিজস্ব গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর পরিকাঠামো তৈরি করা হয়। আর দরপত্রে অংশ নিয়ে ২০১১ সালে কলকাতা-সহ সাতটি বিমানবন্দরে কাজ শুরু করে ভদ্র ইন্টারন্যাশনাল। অন্য বিমানবন্দরগুলিতে অন্য সংস্থা বরাত পায়।
কেন্দ্র জানিয়ে দেয়, ভদ্র এবং এয়ার ইন্ডিয়ার বাইরে আর কোনও সংস্থাকে দিয়ে কলকাতায় এই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করানো যাবে না। কিন্তু, পরে নিয়ম বদল করে বেসরকারি উড়ান সংস্থাগুলিকে নিজেদের কর্মীদের দিয়ে এই কাজ করানোর অনুমতি দেওয়া হয়।
বর্তমানে এয়ার ইন্ডিয়া নিজেদের এবং কয়েকটি বিদেশি উড়ান সংস্থার গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর কাজ করে। ইন্ডিগো, স্পাইসজেট এবং গো এয়ার নিজেরাই নিজেদের কাজ করে। কলকাতায় যাতায়াত করা দেশীয় উড়ান সংস্থাগুলির মধ্যে এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া এবং ভিস্তারা ভদ্র-কে দিয়ে এই কাজ করাচ্ছিল। আন্তর্জাতিক উড়ান সংস্থাগুলির মধ্যে এতিহাদ, ক্যাথে প্যাসিফিক, তাই এয়ারওয়েজ়-ও ভদ্র-র পরিষেবা নিচ্ছিল। এর বাইরে আচমকা কোনও বিদেশি বা দেশি বিমান কলকাতায় সূচি-বহির্ভূত ভাবে নামলে তাদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর যাবতীয় কাজও ভদ্র করত।
কী হবে এ বার?
কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “উড়ান সংস্থাগুলির সঙ্গে আলাদা ভাবে চুক্তি করে ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে ভদ্র-কে। এয়ার ইন্ডিয়ার গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর পরিকাঠামো রয়েছে। তা ছাড়া, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষেরও নিজস্ব পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া কার্গো লজিস্টিক অ্যান্ড অ্যালায়েড সার্ভিসেস’ নামে ওই সংস্থাকে দিয়ে পরবর্তীকালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করানো হবে।” ইতিমধ্যেই একাধিক উড়ান সংস্থার সঙ্গে আলাদা চুক্তি করে ভদ্র কাজ শুরুও করে দিয়েছে।
বিপুল লোকসানের মুখে পড়ে বেশ কিছু দিন আগে কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছিল ভদ্র। এখন বিদেশি উড়ান না থাকায় তাদের রোজগারও তলানিতে এসে ঠেকেছে। আর চুক্তি অনুযায়ী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে সময় মতো টাকা দিতে না পারায় প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছিল তাদের। এর পরেই শেষ হয়ে যায় চুক্তি। ভদ্র-র চেয়ারম্যান প্রেম বজাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি।