শীতকালেই মহানগরে দূষণের বাড়বাড়ন্ত হয়। ফাইল ছবি
বায়ুদূষিত শহরের তালিকায় বার বারই ঢুকেছে কলকাতা। যা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। তবে এ বার রাজ্য পরিবেশ দফতরের দাবি, গত কয়েক বছরের নিরিখে কলকাতায় বায়ুদূষণ কমছে। বুধবার ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব ক্লিন এয়ার ফর ব্লু স্কাইজ়’ উপলক্ষে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একটি অনুষ্ঠানে দিল্লি আইআইটি-র এক অধ্যাপক তথ্য দিয়ে দেখান, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ সালে কলকাতার দূষণের মাত্রা কমেছে। প্রসঙ্গত, শীতকালেই মহানগরে দূষণের বাড়বাড়ন্ত হয়। তার মাত্রা কতটা বেশি বা কম হবে, তার পিছনে কার্বন নিঃসরণ ছাড়াও বর্ষার শেষে কত মাত্রায় দূষিত কণা বাতাসে থাকছে (বেস লেভেল পলিউশন), বায়ুপ্রবাহ, উষ্ণতার মতো আবহজনিত কারণও দায়ী বলে জানান ওই অধ্যাপক।
এখানেই কলকাতার দূষণ কমার যে ধারা নজরে পড়ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কারণ, ২০২০ সালে অতিমারির কারণে পুজোর আগে পর্যন্ত কার্যত লকডাউন ছিল। ২০১৯ এবং ২০২১ সালে কলকাতায় জোরালো বর্ষা হয়েছিল। ইদানীং সেপ্টেম্বর পেরিয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্ষা দেখা যাচ্ছে। বর্ষা এবং শীতের মাঝে গভীর নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিও হচ্ছে। তার ফলে বৃষ্টিতে দূষিত কণা ধুয়ে ‘বেস লেভেল’ কমিয়ে দেওয়ার যে তত্ত্ব রয়েছে, তা-ও এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে অনেকের মতে, দূষণ সত্যিই কমছে কি না, তা বুঝতে আরও কয়েক বছর পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। বস্তুত, সাগ্নিক দে নামে ওই অধ্যাপকও মনে করেন, দু’-তিন বছরের মধ্যেই দূষণ কমিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে রাশ টানা যে সম্ভব, বোঝা যাচ্ছে। কারণ, বছরে দূষিত দিনের সংখ্যা কমছে।
কলকাতার দূষণের পিছনে এ দিন উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে হাওয়ায় ভেসে আসা দূষিত কণাকেও দায়ী করেছেন সাগ্নিক। তাঁর মতে, প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতেও দূষণে রাশ টানা না-হলে পশ্চিমবঙ্গের দূষণ-মুক্তি সম্ভব নয়। কারণ, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেও দূষণের কবলে পড়ছে এ রাজ্য। বায়ুদূষণ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি নজরদারি বৃদ্ধির কথাও এ দিন জানিয়েছেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। তিনি জানান, ১৪টি যন্ত্র নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি চালাচ্ছে। আরও আটটি যন্ত্র বসানো হবে। তার মধ্যে আজ, বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুরে একটি যন্ত্র চালু হতে পারে। তার পরেরটি দুর্গাপুরে বসানো হবে। এ ছাড়া, ১৩২টি ‘সেন্সর বেস্ড’ নজরদার-যন্ত্র বসানো হয়েছে। ভিন্ রাজ্য থেকে উড়ে আসা দূষিত কণার উপরে নজর রাখতে সীমানাবর্তী এলাকাগুলিতে লক্ষ রাখা হচ্ছে।